মানবপ্রাচীর কর্মসূচী পালিত- খালেদা জিয়ার পরিদর্শন

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের মানবপ্রাচীর কর্মসূচী মঙ্গলবার দেশব্যাপী পালিত হয়েছে। কর্মসূচী চলাকালে রাজধানীর মহাখালী থেকে শুরু করে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মানবপ্রাচীর পরিদর্শন করতে করতে জজকোর্টে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের মামলায় হাজিরা দিতে যান। তাই তাঁকে দেখার জন্য মানবপ্রাচীর রুটে রাস্তার পাশে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি উৎসুক জনতা ভিড় করে। র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জনতার ভিড় ও যানজট ঠেলে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর আদালতে যেতে সহায়তা করেন।
ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমসহ সকল গুম, বিশ্বজিৎসহ সকল হত্যার প্রতিবাদ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘণ্টাব্যাপী মানবপ্রাচীর কর্মসূচী পালন করার পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত ছিল। তবে রাজধানীতে মহাখালী প্রান্তে ১টা এবং ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রান্তে ২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচী চলে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সংবলিত ব্যানার, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ডসহ খ- খ- মিছিল নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা মানবপ্রাচীর রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হতে থাকে। ১১টা থেকে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়া কখন আসবেন তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তবে খালেদা জিয়া যখন বাসা থেকে বের হন তার ২০ মিনিট আগেই মানবপ্রাচীরের পূর্বনির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যায়।
দুপুর সাড়ে ১২টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসা থেকে বের হয়ে মহাখালী থেকে মানবপ্রাচীর রুট ধরে তেজগাঁও, সাতরাস্তার মোড়, এফডিসি মোড়, মগবাজার মোড়, বেইলি রোড, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন মোড়, হাইকোর্ট, শিক্ষাভবন, কার্জন হল, নগর ভবন, গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার মোড়, নর্থসাউথ রোড, বংশাল রোড, ইংলিশ রোড, ধোলাইখাল চৌরাস্তা হয়ে বেলা সোয়া ২টায় জজকোর্টে পৌঁছেন। মানবপ্রাচীর পরিদর্শন করে আদালত পর্যন্ত যাওয়ার পথে রাস্তায় ভিড় করে বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার গাড়িতে ফুল ছিটিয়ে বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে তাদের প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানায়। এ সময় বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের সিনিয়র নেতারাও বিভিন্ন স্পটে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। খালেদা জিয়াও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন। আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছার পর বিপুল সংখ্যক দলীয় আইনজীবী খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। একইভাবে বিকেল সাড়ে ৩টায় খালেদা জিয়া আদালত থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার সময়ও বিপুলসংখ্যক আইনজীবী সেøাগান দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান। আর খালেদা জিয়া যতক্ষণ আদালতে ছিলেন ততক্ষণ বাইরে অসংখ্য নেতাকর্মী অবস্থান করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ও খালেদা জিয়ার পক্ষে সেøাগান দেন। বিকেল ৫টায় খালেদা জিয়া আদালত থেকে তাঁর গুলশান বাসায় পৌঁছেন।
মানবপ্রাচীর চলাকালে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে মহাখালীতে অবস্থান নিয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজ উদ্দিন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব) রুহুল আলম, বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপি নেতা এমএ কাইয়ুম, আব্দুল আলীম নকি, হুমায়ুন কবির রওশন ও ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল।
এ ছাড়াও মানবপ্রাচীরে অন্য সিনিয়র নেতাদের মধ্যে তেজগাঁওয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মগবাজারে স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মৎস্যভবন এলাকায় মির্জা আব্বাস, হাইকোর্ট এলাকায় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ্যাডভোকেট জয়নুল আবদিন, রায় সাহেব বাজার মোড়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও বরকত উল্লাহ বুলু অবস্থান করেন। আর আদালত প্রাঙ্গণে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামসহ অন্য নেতারা।
১৮ দলীয় জোটের অন্য শরিক দলের মধ্যে হাইকোর্ট সংলগ্ন কদম ফোয়ারা মোড়ের দক্ষিণপাশে সিরডাপ সংলগ্ন অংশে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে লেবার পার্টি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, কদম ফোয়ারা মোড়ের উত্তর পাশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংলগ্ন অংশে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, এর উত্তর পাশে এলডিপি মহাসচিব রেদওয়ান আহমেদ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, মহাসচিব খোন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা ও তার উত্তর পাশে হাইকোর্টের প্রধান গেটের বিপরীতে জামায়াত-শিবিরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান করে।
মানবপ্রাচীরে দুটি এলাকার আংশিক ফাঁকা ॥ এদিকে মানবপ্রাচীর চলাকালে রাজধানীর মহাখালী থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় ১৮ দলীয় জোটের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর ভিড় থাকলেও ২টি এলাকার আংশিক রাস্তা ফাঁকা লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে তিব্বত ওভারপাস মোড় থেকে সাতরাস্তা মোড়ের কিছু আগ পর্যন্ত এবং বেইলী রোডের অফিসার্স ক্লাব মোড় থেকে প্রধান বিচারপতির বাড়ির মোড় পর্যন্ত কাউকে মানবপ্রাচীরে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
জনগণ সরকারকে না বলে দিয়েছে তরিকুল ॥ মানবপ্রাচীর সফল করার মধ্য দিয়ে জনগণ বর্তমান সরকারকে না বলে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। মানবপ্রাচীরে যোগ দিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে পুরান ঢাকার ইংলিশ রোড এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মহাখালী থেকে পুরান ঢাকার কোর্ট পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার পথে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। ঢাকাসহ ৬৪ জেলায় লাখ লাখ মানুষ মানবপ্রাচীরে অংশ নিয়েছে। তারা মানবপ্রাচীরে অংশ নিয়ে সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। সরকার এই গণঅনাস্থা থেকে নিশ্চয়ই শিক্ষা গ্রহণ করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, জনগণ সরকারের পদত্যাগ চায়। তাই এই মুহূর্তে সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।
গণঅভ্যুত্থানে দাবি আদায় করা হবে ড. মোশাররফ ॥ সরকার যদি তার অবস্থান থেকে সরে না আসে তাহলে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করা হবে বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তেজগাঁও এলাকায় মানবপ্রাচীরে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনেই হতে হবে। এটা যেমন আমাদের দাবি তেমনি জনগণেরও দাবি। যেহেতু বর্তমান সরকারের সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, তাই তাদেরই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে পুনর্বহাল করতে হবে। যদি এর পরও সরকার গোঁয়ার্তুমি করে তাহলে এ জন্য যে কোন পরিণতি সরকারকে ভোগ করতে হবে।
জনগণ সরকারকে টেনেহিঁচড়ে নামাবে আনোয়ার ॥ জনগণই সরকারকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার। মগবাজারে মানবপ্রাচীর কর্মসূচী চলাকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, মানবপ্রাচীরে জনতার ঢল প্রমাণ করে দেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এখনও সময় আছে, মানুষের হৃদস্পন্দন বুঝতে শিখুন। নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিন। তা না হলে লাগাতার হরতালসহ আমাদের আন্দোলনে পালানোর পথ পাবেন না।
সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে জনগণ হান্নান শাহ ॥ মানবপ্রাচীরের মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনগণ অনাস্থা প্রকাশ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) হান্নান শাহ। মহাখালী ফ্লাই ওভারের নিচে মানবপ্রাচীর কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যত তাড়াতাড়ি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
সরকারের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে মওদুদ ॥ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলনে আস্তে আস্তে গণজাগরণ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। হাইকোর্টের সামনে মানবপ্রাচীরে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সরকারকে ব্যর্থতার দায় নিয়েই ক্ষমতা ছাড়তে হবে।
সরকারকে ঘাড় ধরে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিতে হবে মির্জা আব্বাস ॥ মৎস্য ভবনের সামনে মানবপ্রাচীরে অংশ নিয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করে যাচ্ছে। তাই সরকার যদি জনগণের অধিকার ফিরিয়ে না দেয় তাহলে সরকারকে ঘাড় ধরে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরা ক্ষমতায় যেতে না পারলেও অন্য কাউকে ক্ষমতায় বসাতে চায়। কিন্তু আর যাই হোক, বিএনপিকে ক্ষমতায় যেতে দিতে চায় না। এ জন্যই তারা ষড়যন্ত্র করছে।

No comments

Powered by Blogger.