সাতৰীরায় লাঠিয়াল বাহিনীর তা-ব ৩শ' ঘর তছনছ- গর্ভবতী মহিলাসহ আহত ২৫, ৩৬ গ্রেফতার by মিজানুর রহমান

যন্ত্রণায় কাতর ৯ মাসের অনত্মঃসত্ত্বা আশরাফের স্ত্রী লাইলী বেগম (২৫) রাস্তার ধারে পড়ে আছে। লাঠিয়ালদের হামলায় ও নির্যাতনে তার পেটের বাচ্চা এখন আধমরা। দা দিয়ে কোপানো হয়েছে হাত ও পা।
শাবল দিয়ে খুঁচিয়ে ত করা হয়েছে তলপেট। পিটিয়ে শরীর বাম অংশ থেঁতলে দেয়া হয়েছে । এ অবস্থায় তার চলার মতা নেই। মাজেদ শেখের স্ত্রী সুফিয়া (৩০), সামসু সরদারের স্ত্রী জামিলাসহ (৪০) আরও অনেক মহিলা লাঠিয়ালদের নির্যাতনে আহত হয়ে পড়ে আছে ঢেবুখালি গ্রামের ভূমিহীন জনপদে। কিছু জ্বালানি কাঠ আর কাঁথা-বালিশ নিয়ে খাল পার হয়ে আশ্র্রয়ের সন্ধানে ছুটছে সফিকুল গাজীর স্ত্রী রোজিনা (২৮)। নির্যাতনের পরও জীবন নিয়ে পালিয়ে গেছে বেশিরভাগ নারী সদস্য। সাতীরার দেবহাটা থানা সদর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে ঢেবুখালিতে সোমবার সকালে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে ভূমিমালিক ও লাঠিয়ালরা তা-ব চালালেও পুলিশের কাছে এর কোন খবর নেই। পুলিশের দাবি, তারা সকাল ৯টায় অবৈধ দখল মামলায় ৩৬ জন ভূমিহীন পুরম্নষ সদস্যকে ঢেবুখালি থেকে আটক করেছে মাত্র। উচ্ছেদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই।
অবৈধ দখল মামলায় আসামিদের গ্রেফতার করতে রবিবার রাত ৩টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যনত্ম র্যাব ও পুলিশের যৌথ অভিযানে ঢেবুখালি থেকে ৪১ জন ভূমিহীন সদস্যকে আটক করে থানায় নেয়া হয়। পুলিশ ও র্যাব চলে যাওয়ার পরেই সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ভূমি মালিকের নেতৃত্বে লাঠিয়ালরা গুঁড়িয়ে দেয় প্রায় ৩শ' ভূমিহীন পরিবারের ঘর। পুরম্নষশূন্য এ সব বাড়িতে ভূমি মালিক কিংকর প্রসাদের নেতৃত্বে লাঠিয়াল বাহিনী সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এই তা-ব চালায়। দেবী শহর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক কিংকর প্রসাদ স্বর্ণকার উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেয়ার কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের রেকডর্ীয় সম্পত্তি তিনি ফের দখল নিয়েছেন। স্থানীয় জনগণ তাঁকে সহায়তা করেছে বলে তিনি দাবি করেন।
সাতীরা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে দেবহাটার ঢেবুখালি জনপদের সরকারী রাসত্মার ওপরে গড়ে তোলা ভূমিহীনদের একটি ঘরও এখন দাঁড়িয়ে নেই। ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়া এই ছোট ছোট ঘরের সামনে পড়ে আছে পরিবারের ব্যবহার্য শীতের কাপড়, নারীদের অনত্মর্বাসসহ লেপ, কাঁথা, বালিশ। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে পালিয়ে যেতে ব্যর্থ হওয়া প্রায় ২৫ জন নারী সদস্য লাঠিয়ালদের বর্বর নির্যাতনে আহত হয়েছে। কালীগঞ্জ থানার এএসপি নজরম্নল ইসলাম ও দেবহাটা থানার ওসি মোঃ শাহজাহান আলি খান অবৈধ দখল মামলায় ৩৬ ভূমিহীনকে আটক করেছে বলে স্বীকার করলেও উচ্ছেদের ঘটনায় তারা জড়িত নন বলে সাংবাদিকদের জানান। তবে ঘটনাস্থলে কিংকর প্রসাদ স্বর্ণকার উচ্ছেদের নেতৃত্ব দেয়ার কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, প্রশাসনের কাছে আবেদনের পর প্রশাসন থেকে তাকে জমির দখল পেতে সহায়তা করা হয়েছে।
দেবহাটা উপজেলার ঢেবুখালিতে আকরাম খার নেতৃত্বে ভূমিহীনরা কিংকর প্রসাদ স্বর্ণকার, ও তার ভাইদের ২শ' বিঘার একটি চিংড়িঘের গত ২০ ডিসেম্বর দখল করে নেয় বলে দেবহাটা থানায় মামলা দায়ের করা হয়। শংকর স্বর্ণকার, সমর স্বর্ণকার, রমেষ স্বর্ণকার ও হানিফ সরদার বাদী হয়ে একই ঘটনায় দেবহাটা থানায় ৫টি মামলা দায়ের করে। দেবহাটা থানার ওসি বলেন, ভূমিহীন নামধারী ভূমিদসু্যদের আাটক করতে র্যাব ও পুলিশ রবিবার রাত ৩টা থেকে ভোর ৫টা পর্যনত্ম অভিযান চালিয়ে ৪৯ জনকে আটক করে । পরে সকাল ৯টা পর্যনত্ম এসব ঘরে অবৈধ অস্ত্রের তলস্নাশি করে তারা ফিরে আসেন। থানায় এসে আটক ১৩ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। ভূমিহীনরা এই চিংড়ি ঘেরের উপরে সরকারী রাসত্মায় তারা প্রায় ৩শ' ছোট ছোট ঘর তুলে বসবাস শুরম্ন করে। ভূমিহীনদের দাবি, সরকারী খাস জমিতে তারা ঘর বসবাস শুরম্ন করে। এর পর থেকে তাদের নামে দেয়া হয় কয়েকটি মামলা। সোমবার র্যাব ও পুলিশ ৪১জনকে আটক করার পর ভূমিহীনদের বসত বাড়িগুলো হয়ে পড়ে পুরম্নষশূন্য। এর পরই ভূমিমালিকের নেতৃত্বে লাঠিয়ালরা ভূমিহীন নারীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করে দেয়।

No comments

Powered by Blogger.