দেশী-বিদেশী সাহিত্যে-২০১২ by নুরুল করিম নাসিম

বইকেনা মার্কেটে পয়সা থাকলে যতটা দ্রুত কেনা হয়, ততটা দ্রুত পড়া হয় না। আমি দ্রুত পড়ে উঠতে পারি না। আমার পড়ার ধরনটা একটু অন্যরকম। একসাথে অনেক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা বই নিয়ে বসি। যখন যেটা ভাল লাগে পড়ি।
যেসব বইয়ের কথা বললাম, সবই এখনও পড়া হয়ে ওঠেনি। বেশ কিছু প্রিয় বই পড়া হয়েছে ইতোমধ্যে। বলছিলাম লেখকের মৃত্যুর কথা। গত বছরের (২০১২) ১৫ মে ৮৩ বছর বয়সে লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের মেক্সিকোর কথাসাহিত্যিক কার্লোস ফুয়েন্তেম (১৯২৮-২০১২) মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যু বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় তেমন একটা লেখালেখি হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে সম্ভবত একটা লেখা চোখে পড়েছে কোনো একটা দৈনিকের শুক্রবারের সাহিত্য সাময়ীকিতে। হয়ত সেই দৈনিকের সাহিত্য সম্পাদক ফুয়েন্তেসের ভক্ত পাঠক। ফুয়েন্তেস ছিলেন লাতিন আমেরিকার তথা আধুনিক স্প্যানিশ ভাষা ও সাহিত্যের মহান রূপকারদের একজন।
কলকাতার ঔপন্যাসিক সৈয়দ মুস্তফা মিরাজের মৃত্যুতে তাকে নতুন করে পাঠ করার আগ্রহ শুরু হয়েছে বাংলাদেশের পাঠকদের মাঝে। লিটল ম্যাগের সম্পাদকরা তাঁকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা করছেন। যতদূর জানি রাজশাহী থেকে নাজিব ওয়াদুদ (অনুবাদক কথাশিল্পী) এরকম একটি উদ্যোগ নিয়েছেন এবং তার সঙ্কলনটির ছাপাও শুরু হয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে এটাও একটি মহতী উদ্যোগ। গত বছরের সাহিত্য নিয়ে লিখতে গেলে, এ প্রসঙ্গটি অবশ্যই স্মরণ করতে হবে।
গত বছর আরেকজন প্রচারবিমুখ কথাসাহিত্যিক আমার অন্যতম প্রিয় শিক্ষক রাজিয়া খানের মৃত্যুর পর, তাঁর প্রথাবিরোধী উপন্যাসগুলোর প্রতিও পাঠকের আগ্রহ নতুন করে তৈরি হয়েছে। তার ‘বটতলার উপন্যাস’ ও ‘প্রতিচিত্র’ আজও আমাদের পাঠ্য তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। ঢাকার একটি সম্ভ্রান্ত প্রকাশনা সংস্থা তাঁর উপন্যাসসমগ্র প্রকাশ করে আমাদের বহু দিনের একটি অভাব দূর করেছেন। বই নয়, প্রবন্ধও নয়, মাত্র একটি দীর্ঘ কবিতা গত বছরের বিশ্বসাহিত্য অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। ‘যে কথা বলতেই হবে’ কবিতাটির রূপকার নোবেল বিজয়ী ‘টীনড্রাম’ উপন্যাসখ্যাত জার্মান কথাশিল্পী গুন্টার গ্রাস। কবিতাটি আমেরিকা ও ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত তৈরির উদ্দেশ্যে লেখা অনবদ্য এক সৃষ্টি।
কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুও বই বাজারকে চাঙ্গা করে তুলেছে গত বছরে। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’ নতুন করে ছেপেছে আমাদের এক তরুণ প্রকাশক। সুনীল বেঁচে থাকতেই তাঁর একাধিক গ্রন্থের লিখিত অনুমতি নিয়ে রেখেছিলেন তরুণ ও স্মার্ট এই প্রকাশক। অনেকেই ভুলে গেছেন চল্লিশের বেশি বছর আগে ১৯৬৮ সালে লেখা এই প্রতি উপন্যাসটি (অঘঞও-ঘঙঠঊখ) আজকের প্রজন্মের অনেকেই পড়ার সুযোগ পাননি। একই সঙ্গে দ্বিতীয় উপন্যাস ‘যুবক যুবতীরা’ ও অপঠিত রয়ে গেছে অনেকের। বইটির পুনর্প্রকাশ গত বছরে আমাদের সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ কবিতার কোনো শর্ত নেই, কবিতার জন্য সারা বিশ্ব, কবিতা কার জন্য, এই তিনটি প্রবন্ধ গ্রন্থও সব কবিদের অবশ্য পাঠ্য। এই তিনটি অবিস্মরণীয় গ্রন্থ, গত বছরের প্রকাশনা শিল্পের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর কথা না-ই বা উল্লেখ করলাম। এই কিংবদন্তী জনপ্রিয় উপন্যাসিক ও চিত্র নির্মাতার লেখা বই প্রতিমাসেই প্রকাশিত হয়। গত বছর তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর দীর্ঘদিন অবলুপ্ত দুটি চটি বই ‘নন্দিত নরকে’ ও ‘শঙ্খনীল কারাগার’ পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। এই দুটো উপন্যাসের জন্য হুমায়ূন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অনেক অনেক দিন বেঁচে থাকবেন।
হিলারী ম্যানটেল প্রথম ও একমাত্র নারী যিনি দু’দুবার ম্যান বুকার পেলেন। গত বছর (২০১২) তিনি ইতিহাসভিত্তিক বই লিখে এই পুরস্কারটি পান। তার প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত উপন্যাসটি ছিল ঐতিহাসিক বিষয়ের ওপর লেখা উল্ফ হল (ডঙঙখঋ ঐঅখখ)।
এ বছর কবিতার জন্য পুলিৎজার পেলেন মার্কিন কবি ট্রাসি কে স্মিথ। লাইফ অন মার্স’ গ্রন্থের জন্য ৪০ বছর বয়েসী এই কবিকে দুর্লভ সম্মাননা দেয়া হয়।
ম্যান এশিয়ান সাহিত্য পুরস্কারটিও একটি আন্তর্জাতিক সম্মাননা। কোরিয়ার মহিলা কথা সাহিত্যিক কিংলুক সিন গত বছর (২০১২) এই পুরস্কারটি পান।

No comments

Powered by Blogger.