রোকেয়া ভার্সিটিতে এ্যাসিড নিক্ষেপে দুই শিক্ষক আহত- ভিসিবিরোধী আন্দোলন নস্যাতে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসীদের ত্রাস ॥ সমাবেশ নিষিদ্ধ

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির অপসারণের দাবিতে আন্দোলকারীদের ওপর বহিরাগত ছাত্রলীগের হামলায় ঝলসে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের দেহ। ভিসির লেলিয়ে দেয়া ছাত্রলীগ নামধারী বহিরাগত সন্ত্রাসীরা দখল করে নিয়েছে আন্দোলনকারীদের ‘দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চ’টিও। তারা দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চ ও মাইক ভাংচুর করে।
এ সময় মাইকের ব্যাটারির এ্যাসিড নিক্ষেপে আন্দোলনকারী দুই শিক্ষকের দুই চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত অবস্থায় তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাংচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হয়েছে কমপক্ষে আরও ১৫ জন। বর্তমানে ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. মু. আব্দুল জলিল মিয়াকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।
সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভিসির অপসারণসহ ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু করে কিছুদিন আগে থেকেই। শনিবার থেকে তারা ক্যাম্পাসের ওয়াজেদ মিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ভবনের পাদদেশকে ‘দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চ’ ঘোষণা করে এবং ভিসির অপসারণে একদফা দাবিতে সেদিন থেকে প্রতিদিন তারা সেখানে অবস্থান কর্মসূচী গণঅনশনসহ বিভিন্ন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে আসছে। বৃহস্পতিবার ওই মঞ্চ থেকেই ভিসির নানা দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করার কথা ছিল এবং আগামীকাল শনিবারের মধ্যে ভিসি পদত্যাগ না করলে রবিবার থেকে তাদের আমরণ অনশন কর্মসূচীতে যাওয়ার কথাও ঘোষণা করে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে ভিসিবিরোধী আন্দোলনকারীরা তাদের দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চে অবস্থান নেয়ার আগেই ছাত্রলীগের ব্যানার নিয়ে কিছু বহিরাগত ওই মঞ্চ দখল করে নেয় এবং সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়।
ছাত্রলীগের নামে দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চ দখলের পর সকাল পৌনে ১০টায় ভিসিবিরোধী আন্দোলনকারীরা পার্শ্ববর্তী সড়কে তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী শুরু করে। সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পক্ষে সেখানে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বক্তব্য দেয়া শুরু করলে ছাত্রলীগ নামধারী বহিরাগত সন্ত্রাসীরা মুখে মাফলার পেঁচিয়ে তার মাইক কেড়ে নেয় এবং মাইক ভাংচুর করে। এ সময় তারা মাইকের ব্যাটারি ভাংচুর করে এবং ব্যাটারির এ্যাসিড আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছুড়ে মারে। এতে সচেতন শিক্ষক শিক্ষার্থী সমাজের সদস্য সচিব বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মতিউর রহমানের ডান চোখ ঝলসে যায়। এ ছাড়াও এ্যাসিডে সামান্য আহত হয় ওই সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান সেলিমসহ অজ্ঞাত আরেক শিক্ষক। এ ঘটনায় সেখানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে আহত হয় আরও কমপক্ষে ১২/১৪ জন। তাৎক্ষণিকভাবে শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ ও ড. মতিউর রহমানকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ভর্তি করা হয়। তাদের চিকিৎসক চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনকণ্ঠকে জানান, তাঁদের উভয়ের ডান চোখে দাহ্য পদার্থের কারণে ‘কর্নিয়া এ্যাবরশন’ হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান আশা করা যায় তাঁরা সেরে উঠবেন।
এদিকে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসে ভিসিবিরোধী সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। পরে তারা তাদের দুর্নীতিবিরোধী মঞ্চ নিজেদের দখলে নিয়ে সমাবেশ শুরু করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তুহিন ওয়াদুদ জানান, ভিসির লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরাই আন্দোলন নস্যাত করার জন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। একই কথা জানিয়েছেন সচেতন শিক্ষক শিক্ষার্থী সমাজের সভাপতি অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান সেলিম। তিনি জানান, ভিসির পদত্যাগ দাবিতে তাদের একদফা আন্দোলন কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। শনিবারের মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করলে রবিবার থেকে তাঁরা আমরণ কর্মসূচীতে যাবেন।
এ ভিসির পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক মোজাম্মেল হক উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি না হলেও সাংবাদিকদের তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অবস্থা নিরসনে সমাজের সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি।

ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর থেকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ক্যাম্পাসের আইনশৃঙ্খলা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বৃহস্পতিবার সন্ধা ৭টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সভা, সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, অবস্থান ধর্মঘট, মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচীসহ সব ধরনের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকা- নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রেজিস্ট্রারের দফতরের এক নোটিসে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ক্যাম্পাসের সার্বিক শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিচয়পত্র বহন করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়।
এ বিষয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ক্যাম্পাসে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বাড়তি পুলিশ। কোন বহিরাগত সন্ত্রাসী যাতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারে সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চলাচলকারীদের তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.