বিশ্বে এক শ' বছরে ৯৬ হাজার বাঘ বিলুপ্ত

 গত এক শ' বছরে পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৯৬ হাজার ৮শ' বাঘ। গত শতাব্দীতে সমগ্র বিশ্বে ১ লাখ বাঘ থাকলেও বর্তমানে তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২শ'তে। তবে আশার কথা হচ্ছে, সারা বিশ্বে বাঘের সংখ্যা কমলেও বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় সাড়ে চার শ' বাঘ রয়েছে।
সোমবার ঢাকা বন ভবনে বাঘ সংরৰণ কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতি ও টাইগার ইমমোবিলাইজেশন প্রশিৰণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরেন বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব মিহির কানত্মি মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন নেয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিৰক গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন প্রধান বন সংরৰক আব্দুল মোতালেব। ড. তপন কুমার দে লেখা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এডাম সি বার্লো।
বন্যপ্রাণী বাঘ লোকালয়ে আসার পর যেন তাকে নিশ্চল বা স্থবির করে যেন তাকে বনে পাঠানো যায় সে জন্য দেশের ৩০ জন বন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে ৭ দিনের প্রশিৰণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। সম্প্রতি লোকালয়ে এসে গ্রামবাসীর হাতে একটি বাঘ মারা যাওয়ায় এ উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ বন বিভাগ। চেতনানাশক ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী আটক বিষয়ে এ প্রশিৰণ দেয়া হবে বিদেশী বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে। প্রশিৰণের উদ্বোধন ঢাকার আগারগাঁও বন ভবনে হলেও প্রশিৰণ দেয়া হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ।
বিশ্বের ১৪টি দেশে যখন এভাবে বাঘের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে আসছে, তখন বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছে বলে দাবি করেছেন পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। ২০০৪ সালের এক জরিপের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ওই জরিপ দেখা গেছে তখন দেশে ৪৪০টি বাঘ ছিল। বর্তমানে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে শুমারি না হওয়ায় বৃদ্ধির সংখ্যা তুলে ধরতে পারেননি প্রতিমন্ত্রী। তবে বর্তমানে জায়গার তুলনায় দেশে বাঘের সংখ্যা বেশি বলেও প্রতিমন্ত্রী উলেস্নখ করেন। বন থেকে বের হয়ে আসা বাঘ আবার বনে ফিরিয়ে নেয়ার মতো প্রশিৰণ না থাকায় সম্প্রতি বাঘটি মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে হাসান মাহমুদ বলেন, এর আগে বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যে প্রশিৰণ দেয়া হয় তা পর্যাপ্ত ছিল না। বিশেষ করে চেতনানাশক ব্যবহারের কোন প্রশিৰণ দেয়া হয়নি। এবার প্রথম তারা চেতনানাশক ব্যবহার করার প্রশিৰণের ব্যবস্থা করে। প্রশিৰণার্থীরা চেতনানাশক প্রয়োগ করে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লোকালয়ে আসা বন্য প্রাণীকে অজ্ঞান করে রাখতে পারবে। এরপর বন্যপ্রাণীকে পেঁৗছে দেয়া যাবে তার বাসস্থানে।
মহাবিপদাপন্ন প্রজাতির বাঘ রৰায় বাঘের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ১৪টি দেশ যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০০৯ সালে নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডুতে অনুষ্ঠিত গেস্নাবাল টাইগার ওয়ার্কশপে ওঠে আসা সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে একটি সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হয়। ওই ওয়ার্কশপের ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে থাইল্যান্ডের হুয়া হিনে অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রী পর্যায়ের নীতিনির্ধারণী সভা। হুয়া হিন শহরের এ সভায় যে সিদ্ধানত্ম গৃহীত হবে তা চূড়ানত্ম করা হবে ২০১০ সালে রাশিয়ার ভস্নাডিভস্টক শহরে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড টাইগার সামিটে।
প্রাকৃতিক সম্পদ বাঘ রৰায় বাংলাদেশও নিয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচী। ২০০৯-২০১৭ সালের জন্য বাংলাদেশ বাঘ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। তা বাসত্মবায়নে লৰ্যে একাধিক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বাঘ মনিটরিং, গবেষণা ও বাঘ মানুষ সংঘাত নিরসনের জন্য বন বিভাগ ও ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ (ডবিস্নউটিবি) যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
ড. তপন কুমার দে লেখা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, ভারত, বার্মা, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, মালয়েশিয়া, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, ভুটান নেপাল ও রাশিয়ায় বাঘের অসত্মিত্ব রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি প্রজাতির বাঘ বিশ্ব হতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত প্রজাতির মধ্যে রয়েছে বালিনিজ টাইগার, সাবানিজ টাইগার ও কাস্পিয়ান টাইগার। বর্তমানে পাঁচটি প্রজাতির বাঘ বিশ্বে কোন রকম টিকে আছে। টিকে থাকা প্রজাতির মধ্যে রয়েছে বেঙ্গল টাইগার, সাইবেরিয়ান টাইগার, সুমাত্রান টাইগার, সাউথ চায়না টাইগার ও ইন্দো-চায়না টাইগার।

No comments

Powered by Blogger.