শীতে কাঁপছে দেশ-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ান

সারা দেশে যে শীত অনুভূত হচ্ছে, তাকে কোনো বিশেষণ দিয়েই যথাযথভাবে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ শীতপ্রধান নয়, বরং গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হিসেবেই পরিচিত। দুই মেরুর কাছাকাছি দেশগুলোর মতো এখানকার প্রকৃতি তুষারপাত বা বরফ ঝরাতে অভ্যস্ত নয়।
স্বভাবতই এমন দেশে তীব্র শীত মোকাবিলার প্রস্তুতিও থাকার কথা নয়। কিন্তু যে শীত চলছে, তাতে শুধু জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তা-ই নয়, আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিবছর আমাদের কী ধরনের তাপমাত্রার মোকাবিলা করতে হতে পারে তা নিয়ে। বুধবার দেশের দিনাজপুর জেলায় তাপমাত্রা নেমে আসে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বৃহস্পতিবার সকালে সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বিগত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সারা দেশেই চলছে এ শৈত্যপ্রবাহ। এরই মধ্যে নিউমোনিয়া ও শীতজনিত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। সারা দেশে অনেক রোগী ছুটে যাচ্ছে হাসপাতালে অথবা চিকিৎসকের কাছে। সর্বোপরি দরিদ্র বিশাল জনগোষ্ঠীর শীতবস্ত্রের যে স্বল্পতা রয়েছে, তা দেশের সচেতন সমাজকে উদ্বিগ্ন করে রেখেছে।
শীতের কাছে অসহায় এই মানুষদের রক্ষার দায় সরকারের যেমন রয়েছে, তেমনি এ দায় সামর্থ্যবান মানুষদেরও। দেশে অনেক এনজিও রয়েছে, তারাও এর আংশিক দায় নেবে বলে আমরা আশা করি। যদিও সরকার, এনজিওসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণের কাজ কিছু চলছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সত্যিকার যাদের শীতবস্ত্র প্রয়োজন, তাদের পাশে দ্রুত গিয়ে দাঁড়ানো জরুরি। সেই সঙ্গে এ কথাও মনে রাখা দরকার, শুধু শীতবস্ত্র বিতরণের মধ্যেই এই শৈত্যপ্রবাহের কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করার কাজ সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। চিকিৎসাসুবিধা সহজলভ্য করে তোলা, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে মানুষকে পরামর্শ দেওয়া এবং প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতাও এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সহায়তার অংশ। এ প্রচণ্ড শীত আর কয়েক দিন পরেই থাকবে না। কিন্তু শীতের কারণে কোনো পরিবারের সদস্যের মৃত্যু হলে অথবা কেউ বড় ধরনের অসুখে পড়লে তার রেশ টানতে হবে গোটা পরিবারকে। সুতরাং যা করার তা সময় থাকতেই করতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তির কাছে শীতের সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে। সরকারের নিয়োজিত যেসব ব্যক্তি শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন, তাঁদের কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, মুখ দেখে শীতবস্ত্র ও সাহায্য বিতরণ করা হচ্ছে কি না, সেদিকে লক্ষ রাখা অতি প্রয়োজন। এ প্রচণ্ড শীতের কারণে কোথাও কোথাও শ্রমিকদের কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে মালিকরা বিষয়টিকে সহানুভূতির চোখে দেখবেন বলে আমরা আশা রাখি। প্রয়োজনে মালিক বা সামর্থ্যবানরা শ্রমিক শ্রেণীর পারিবারিক প্রয়োজনে মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসবেন- এমন প্রত্যাশা করাটাও অযৌক্তিক নয়। সর্বোপরি দেশে যেন আর একজন মানুষও শীতের কারণে মৃত্যুবরণ না করে, সেই সংকল্প নিয়ে সরকারকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

No comments

Powered by Blogger.