গৃহী ও গৃহশিৰক- শিপন কোড়াইয়া

হাবিব জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তার মন ভাল নেই। বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করতেই বলল, আজ মাসের ১৩ তারিখ হয়ে গেলেও টিউশনির বেতন সে এখনও পায়নি। অথচ মেস ভাড়া দিতে হবে, বাজার করার খরচ দিতে হবে।
লীনা বলল, তার কাহিনী_সপ্তাখানেক হলো ধানম-িতে সে অনেক দর কষাকষি করে একটি টিউশনি করছে। পড়াতে হয় সপ্তাহে পাঁচ দিন, দুই ঘণ্টা। কিন্তু সপ্তাহখানেক পর ছাত্রের মা জানিয়ে দিল তার পড়ানোর ধরন তাদের পছন্দ না।
রম্নম্পা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সে জানাল, বাবার অসুখের খবর পেয়ে কয়েকদিনের জন্য বাড়ি গিয়েছিল। কিন্তু মাস শেষে বেতন হাতে নিয়ে গুনে দেখে যে ক'দিন বাড়িতে ছিল, সে ক'দিনের টাকা তাকে দেয়া হয়নি। এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক ছাত্রী সানু জানাল, চার মাস হলো পড়াচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যে ছাত্রের চাচা অতি-উৎসাহী হয়ে উঠে সানুর প্রতি। তাই বাধ্য হয়ে টিউশনি ছেড়ে দিতে হয়।
গৃহশিৰক একটি পরিচিত ব্যাপার। এই গৃহশিৰকদের বেশির ভাগ বিভিন্ন ভার্সিটি ও কলেজের ছাত্র বা ছাত্রী। মূলত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা টিউশনি করে বাড়তি আয় করে। স্বাচ্ছন্দ্যে চলার জন্য। কারণ বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আনা অসম্ভব। টাকা চাইতেও খারাপ লাগে। এৰেত্রে টিউশনিই একমাত্র ভরসা। সব সময় অভিভাবকেরাই সমস্যা করে এমন নয়। ছাত্রছাত্রীরাও ভাল ব্যবহার করে না।
অনেক সময় গৃহশিৰরাও সমস্যা সৃষ্টি করে। দেখা যায় সপ্তাহে যতদিন আসার কথা ততদিন আসে না বা মেকআপ কাসও দেয় না। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়ে খারাপ ব্যবহার করতে হয়। আবার অনেক শিৰক ফাঁকি দেয়ার সুযোগ খোঁজে। সময় পার করে চলে আসে। ছাত্র বা ছাত্রীর পড়াশোনার অগ্রগতি হলো কি না সে দিকে খেয়াল রাখে না। সময় পাস করে গল্প করে ছাত্র বা ছাত্রীর সঙ্গে।
গৃহশিৰক ও গৃহবাসীর মধ্যে এসব সমস্যা থাকলেও অনেক গৃহবাসী বা অভিভাবক আছেন যারা গৃহশিৰকের খুবই মর্যাদা দিয়ে থাকেন। প্রতিদিন ভাল ভাল খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন। উৎসবে উপহার প্রদান করে। তারা গৃহশিৰকে বাসারই একজন বলে মনে করেন। আবার কেউ কেউ আছেন_শিৰক বা শিৰিকা বাসায় এলে আড়ালে আবডালে থাকেন। আনইজি ফিল করেন যা গৃহশিৰক ও গৃহবাসী দুজনের জন্যই অস্বসত্মিকর।
গৃহশিৰক ও গৃহবাসীর এ টানাপোড়েন থাকবেই। তার মধ্যেই গৃহবাসীকে শিৰকের প্রতি একটু সংবেদনশীল হতে হবে। কেননা শিৰকও এক ছাত্র বা ছাত্রী। তারও পরীৰা বা অন্য কাজ থাকে। গৃহশিৰকেও মনে রাখতে হবে যখন টিউশনিতে যান তখন সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন শিৰক। কাজেই শিৰকের সম্পূর্ণ ভূমিকা তাকে পালন করতে হবে। গৃহবাসীর সঙ্গে সৎভাব গড়তে হবে। প্রতিনিয়ত ছাত্র বা ছাত্রীর লেখাপড়ার ব্যাপারে অভিভাবকের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। ব্যক্তিগত সমস্যা কাটিয়ে দায়িত্বশীল হতে হবে। কারণ তিনি যেমন শ্রম দেন তেমনি সম্মানিও পান। তাই উভয় পৰকেই এখানে যুক্তিসঙ্গত আচরণ করতে হবে। অন্য চাকরির মতো এখানে নেই কোন চুক্তির বালাই। পারস্পরিক আস্থা আর শ্রদ্ধার মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। উভয় পৰের একটুখানি পরিচর্যাতে এ সম্পর্ক হতে পারে আস্থা ও নির্ভরতার ৰেত্র।

No comments

Powered by Blogger.