মেঝের সাজে কার্পেট

সুন্দর ছিমছাম সাধারণ ছোট ঘর মেঝেতে ছোট গালিচা পাতা আহা কেমন যেন একটু শনত্মি আরাম ভাব। একটু যেন স্বসত্মির আশ্রয়। নয়ত জমকালো ড্রইংরম্নম বিশাল কার্পেটে মোড়ানো। কার্পেট যেন আরও ঝলমলে এবং আরও প্রাণবনত্ম করে তোলে পরিবেশ।
কার্পেট ব্যাপারটায় অনেকটা রাজা বাদশাহী ভাব রয়েছে। রাজা বাদশাদের আমলে কেবল রাজা, বাদশা, জমিদার ও সওদাগরদের (মার্চেন্ট) ব্যবহারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তখন তা সাধারণ মানুষের ব্যবহারের নাগালের বাইরে ছিল। রাজতন্ত্র এখন প্রায় বিলীন, গণতন্ত্রের এই যুগে সমাজের সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়া ও নাগালের মধ্যে চলে এসেছে সেই কার্পেট। হয়ত কারম্নকাজ ও গুণগত মানের দিক দিয়ে পার্থক্য রয়েছে।
ঘর সাজাতে কার্পেটের জুড়ি মেলা ভার। সাধারণ ঘরটিও কার্পেটের অবস্থানের ফলে অসাধারণ হয়ে ওঠে। ঘরে আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে সাজানো গোছানোর মধ্যে সবদিকে সমন্বয় রাখতে হবে। এবার চলুন বসার ঘরটিতে কি ধরনের কার্পেট দিয়ে সাজাতে হবে তা জেনে নেই।
ছোট ড্রইংরম্নম : ড্রইংরম্নমে সোফাসেট ডিভান ও বুকসেলফ শোকেস দিয়ে ঘর সাজানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে। কার্পেটটি যেন পুরো ঘর জুড়ে বিছিয়ে নেয়া যায়। তবে ঘরটি বড় দেখাবে। দরজার কাছের জায়গাটি ফাঁকা রাখতে হবে। ওখানে যেন কার্পেট বিছানো না হয় বরং ওখানে সুন্দর একটি পাপোশ বিছিয়ে নিন, তাতে কাপেট সহজে ময়লা হয় না। ছোট ড্রইং রম্নমের কার্পেট একরঙা বা ছোট ছোট নকশার হলে সুন্দর ও ভাল দেখায়। হালকা রঙের হলে ডেকোরেশন ফুটে ওঠে।
বড় ড্রইং রম্নম : বড় ঘরে যে কোন রঙ যে কোন ডিজাইনের কার্পেট মানিয়ে যায়। হতে পারে ডিম্বাকৃতি, গোলাকার, চারকোনা, গাড়ি ও মাছ আকৃতির নিত্য নতুন নকশার কার্পেট বাজারে পাওয়া যায় তা ব্যবহার করতে পারেন। তবে ফার্নিচার যদি আকর্ষণীয় ও শৈল্পিক ডিজাইনের হয় তবে লাল, শ্যাওলা ও ঘাসের (সবুজ) রঙ হলে ঘরে সাজসজ্জা ফুটে উঠবে। ইচ্ছে করলে পুরো ঘর জুড়ে বা শুধু ঘরের মাঝখানে মাঝারি আকৃতির কার্পেট বিছাতে পারবেন। ডিভানগুলো ইদানীং ছোট হওয়ায় অনেকে ঘরের এক কোণে সুন্দর নকশা করা আলাদা ছোট কার্পেটে হারমোনিয়াম, তবলা ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র সেট করে সাজিয়ে রাখতে পারেন। এতে রেওয়াজের সময় বা ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে টানা হেঁচড়া করতে হয় না।
খেয়াল রাখতে হবে জমকালো ভাবে সাজানো ড্রইং রম্নমের কার্পেট কিছুতেই হাল্কা রঙ চলে না, হতে হবে উজ্জ্বল রঙ তবেই ফুটে উঠবে শৈল্পিকতা ও আভিজাত্য। খেয়াল করে দেখুন গল্পে, ঔপন্যাসে ও ইতিহাসে পারস্যের ইরানের গালিচা।
শোবার ঘর : এখানে সবুজ হাল্কা বা গাড় রঙ যে কোনটি মানায়। নয়ত হাল্কা নীল বা যে কোন হাল্কা রঙ মানায়, সবুজ ও নীল চোখের উপকারী তাই আপনি এ রঙটির দিকেই গুরম্নত্ব বেশি দিতে পারেন। সারা ঘরে না হলেও চলে শুধু খাটের লম্বাকৃতির ছোট বা ডিম্বাকৃতি বা গোল কার্পেট ব্যবহার করতে পারেন।
পড়ার ঘর : রিডিং রম্নমের কার্পেট যে কোন রঙেই মানিয়ে যায়, তবে এখানে নকশাটা যদি আকর্ষণীয় হয় তবে একটু ভাল লাগে। আর এই আকর্ষণীয় কার্পেট বলতে মাছ আকৃতি, চারকোনা, পাঁচকোনা, ডিম্বাকৃতি, গোলাকৃতি, গাড়ির আকৃতি, ফুল আকৃতি ও বিভিন্ন নকশার কথা বোঝায়। সমস্যা সাইনাস ও এ্যাজমা আক্রানত্মদের জন্য কার্পেট শানত্মিদায়ক নয়।
সমাজের বিত্তশালীদের বাড়িতে, বাথরম্নমে, বারান্দা ও সিঁড়িতে ব্যবহারও করে থাকে। গোছলের জায়গা থেকে নিরাপদ রেখে বাথরম্নমের বেসিনের সামনেও কায়দা করে ব্যবহার করা যায়। সিঁড়িতে, চলাচলের পথে রাসত্মায় গালিচা মাড়িয়ে যেতে পছন্দ করেন অনেক বিত্তবান।

কি দামে কোন মাপে কোথায় পাবেন
এখনই যদি দেশী বা বিদেশী কার্পেট কিনতে চান তাহলে এণি ৩১ জানুয়ারি ২০১০ মধ্যে আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় চলে যান। দেশী, পাকিসত্মানী, তুরস্কের ও ইরানিয়ান কার্পেটের জন্যে চলে যান। খেয়াল রাখবেন যেন প্রতারকের খপ্পরে না পড়েন। যারা সঠিক বাছাই করতে পারেন। শুধু তাদের নিয়ে চলে যান ৪৯ নং মিনি প্যাভিলিয়নসহ (তুরস্কের) যে কোন দেশ, পাকিসত্মানী বা ইরানী প্যাভিলিয়ন বা স্টলে। দেশী কার্পেট ও গুণগত মানের দিক দিয়ে খারাপ না। দামও হাতের নাগালে। বিদেশী কার্পেটের শখ থাকলে একটু ভাল করে দেখে নিন। দাম ও মাপ র্৭ -১র্০, র্৯-২র্০, ১র্২-১র্৫ বিভিন্ন মাপের কার্পেট ১৬৫০০ থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। দেশী কার্পেট এই মাপের মধ্যেই ভাল মানের দামেও সুলভ। তাছাড়া ছোট আকৃতির কার্পেট আরও সুলভ মূল্যে পাবেন।
অন্যান্য মার্কেট : ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলাশহরের বড় মার্কেট বা শপিংমলে আপনি হয়ত পেয়ে যেতে পারেন আপনার শখের কার্পেটটি। খুব বেশি শৌখিনটা না পেলে দেশীয় তৈরিটা সহজেই পেতে অসুবিধা হবে না। যদি তড়িঘড়ি প্রয়োজন থাকে সেই কাছাকাছি মার্কেটেই ছুটে যান। আর যদি তড়িঘড়ি প্রয়োজন না পড়ে তাহলে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বিশাল বিশাল হাউজ গুলোতে : শিশু কার্পেট, মোর্শেদ কার্পেট, কন্টিনেন্টাল কার্পেট লিঃ ও মিঠু কার্পেটের দোকানে। দেশী-বিদেশী যে কোন কার্পেটে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
বসুন্ধরা সিটি : ইরানিয়ান এম্পোরিয়াম : বসুন্ধরা সিটির নিচ তলায় বস্নক এ গেলেই ইরানী সওদাগরের শোরম্নম। এছাড়াও ইস্টার্ন পস্নাজা, নিউমার্কেটসহ রাজধানীর বড় বড় শপিং মলে যাচাই বাছাই করে দেখতে পারেন।
আড্ডা ও মজলিশে কার্পেট : কার্পেটে বসে দলবেঁধে খেতে খেতে আড্ডা দেয়া অনেকটাই উপভোগ্য। সাহিত্য আলোচনা ও ঘরোয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সবাই এক সাথে কার্পেটে বসে উপভোগ করলে অনুষ্ঠানটি আরও জমজমাট হয়ে ওঠে।
ড্রইং রম্নমে ডিভানের বদলে সোফার একপাশে কার্পেটের ওপর কুশন ও আকিয়া দিয়ে মেঝেতে বসার এবং আড্ডার আয়োজন করম্নন। যেন একটু বাজকীয় ও জমিদারি জৌলুসের ছোঁয়া লাগে।
কাজী মেহের নিগার

No comments

Powered by Blogger.