শীতেও ঝরঝরে

নারী বা পুরম্নষ, চুল যে কোন মানুষেরই সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান। শীতে চুলের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। ত্বকের যত্নে যেমন নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার ও ত্বক পরিষ্কার রাখতে হয় তেমনি চুলেরও রকমভেদ ও স্টাইল অনুযায়ী যত্নের প্রয়োজন।
আবার ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চুলের যত্নেরও কিছুটা পরিবর্তন দরকার। শীতের শুষ্কতা সব ধরনের চুলেই ধরায় শুষ্ক ভাব। তাই শীত গ্রীষ্মের চুল চর্চার মধ্যে রয়েছে কিছুটা পার্থক্য। চুল সুস্থ ও সতেজ রাখার পূর্বশর্ত হচ্ছে শরীর স্বাস্থ্যের সুস্থতা। আর এর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম বা যোগাসন করা, চুল পরিষ্কার রাখা, টাটকা শাকসবজি, ফলমূল ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া। তবে মনে রাখবেন পেটে গ-গোল থাকলে তা দ্রম্নত সারানোর চেষ্টা করবেন কারণ পেটের গ-গোলে চুলের খুব তি হয়।
চুলের বৃদ্ধির জন্য বিশেষ গবেষণায় জানা গেছে, ভিটামিন ই খুবই জরম্নরী। এই ভিটামিন ই খাদ্যের মধ্যে যেমন পাওয়া যায় তেমনি পাওয়া যায় ভিটামিন ইযুক্ত তেল বা ক্যাপসুলে। সপ্তাহে দুদিন ভিটামিন ইযুক্ত তেল ম্যাসাজ করলে চুলের বাড়বাড়নত্ম ও গেস্নসি অটুট থাকে। ত্বকের স্টিমিং যেমন ত্বক পরিষ্কার করে তেমনি চুলকে প্রাণবনত্ম করতে চুল স্টিম করা বাঞ্ছনীয়। সপ্তাহে দুদিন রাতে চুলে তেল ম্যাসাজ করার পর গরম পানিতে ভেজানো তাওয়াল মাথায় জড়িয়ে রাখুন কিছুণ পরদিন শ্যাম্পু।
চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে আপনি খুব সহজে বাড়িতে বিভিন্ন মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন।
হ মেহেদির সঙ্গে পরিমাণমতো টক দই ও একটি ডিম দিয়ে মাস্ক তৈরি করে মিশ্রণটি দুলে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে দিন এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। শীতের সময় এটি বেশ উপকারী।
এক. ৪ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ২ চা চামচ ভিনেগার, ২ চা চামচ গি্নসারিন ও ১টি ডিম ভাল করে ফেটে সমসত্ম মাথায় মেখে ১৫ মিনিট রাখুন এরপর শ্যাম্পু করে নেবেন। শুকনো নিষ্প্রাণ চুলের জন্য এই মাস্ক বেশ উপকারী।
হ ডিম, মধু ও লেবুর রস দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে আধ ঘণ্টা চুলে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন কন্ডিশনারযুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে। মাসে একবার এটি ব্যবহার করম্নন। এই মাস্কটি যেমন চুলে পুষ্টি যোগায় তেমনি চুল হয় ঝরঝরে। এছাড়া চুলের সফটনেস বাড়াতে শ্যাম্পুর পর ভিনেগার পানির সঙ্গে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
হ চুলের গোড়া মজবুত ও খুশকি দূর করতে আমলকির ভূমিকা অনেক। এেেত্র আপনি আমলকির রস করে মাথায় দিতে পারেন অথবা সমপরিমাণ শুকনা আমলকি ও রিঠা সারারাত পানিতে ভিজিয়ে পরদিন চটকে ছেকে নিয়ে পানিটা ভাল করে মাথায় লাগান ও ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
আরো কিছু টিপ্স
* প্রথমত চুল সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
* নিয়মিত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
* এছাড়া সপ্তাহে দুইদিন অনত্মত হট অয়েল ম্যাসাজ করে, পারলে স্টিম নিতে হবে।
* চুলের পুষ্টির জন্য প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করতে পারেন।
* অধিক চুল পড়লে ওজোন ট্রিটমেন্ট করম্নন এতে খুশকিও কমবে।
* বাড়িতে বসে কলা, পেঁপে, ডিম দিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগান, আধঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
* খুশকির জন্য চুলে তেল দিয়ে তারপর টকদই বা লেবুর রস দিয়ে কিছুণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
* সুন্দর চুলের জন্য প্রচুর পানি, প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবারের কোন বিকল্প নেই।

চুল সাজানোর সামগ্রী
চুলের সাজের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী হাতের কাছে রাখুন। তাহলে চুল নিয়ে ঝামেলায় পরতে হবে না।
হেয়ার ব্রাশ
চুলের জট ছাড়াবার সময় হেয়ার ব্রাশের প্রয়োজন। কারণ এতে চুল কম ছিঁড়ে। শ্যাম্পু করার আগে সবসময় চুলের জট ছাড়াবেন। ভেজা চুলের জট ছাড়াতে গেলে বেশি চুল ছিঁড়ে যায়। সিনথেটিক, গোলমুখযুক্ত দাঁড়াওয়ালা চওড়া ব্রাশ সবচেয়ে ভালো।
লেসিং ব্রাশ
সরম্ন চৌকো আকারের ব্রাশ। এ ব্রাশে সিন্থেটিক সরম্ন দাঁড়া থাকে। এটি ব্যবহৃত হয় চুল অাঁচড়ে মসৃণ করে তুলতে, চুল ফাঁপিয়ে তুলতে।
কিপ
কিপ হলো চুল সাজানোর জরম্নরী উপাদান। নানা মাপের, নানা সাইজের কিপ পাওয়া যায়। আপনার সংগ্রহে সবসময় সরম্ন মোটা নানারকম কিপ রাখবেন। দু'ধারের চুল আটকাতে মোটা কিপ ও খোঁপার রোল সেট করতে স্পষ্ট চোখে পড়বে না এমন সরম্ন কিপ প্রয়োজন। এছাড়াও পাবেন চুল সেট করতে প্রয়োজনীয় চওড়া স্টিল এ্যালুমিনিয়ামের কিপ।
কাঁটা
কাঁটা সবসময়ই দরকার পড়ে। খুব ব্যসত্মতার সময় এলো খোঁপা বাঁধতে বা নকশি খোঁপা করতে কাঁটার দরকার পড়ে। তাই বেশ কিছু কালো কাঁটা কিনে রাখুন। সঙ্গে কিছু নকশি কাঁটাও কিনতে পারেন খোঁপা সাজাতে।
হেয়ার স্প্রে
চুল বাঁধার পরে বেশ কিছুণ চুল সেট করে রাখতে হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করা হয়। তবে হেয়ার স্প্রে খুব নামী কোম্পানির কিনবেন। তা না হলে নিম্নমানের হেয়ার স্প্রে ব্যবহারে চুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মনে রাখবেন চুল যখন হেয়ার স্প্রে করবেন, তখন খুব কাছে থেকে না করে একটু দুরে থেকে করবেন।
হেয়ার আয়রন
চুলের স্টাইলে যে মেশিনটা ব্যবহার করতে পারেন তার নাম হেয়ার আয়রন। এটি কিনত্মু সাধারণ হেয়ার আয়রন নয়, কেননা এর অনেক এ্যাটাচমেন্ট আছে এবং সেগুলো মূল মেশিনে লাগিয়ে গরম করতে হয়। গরম হওয়ার পর এই গরম মেশিনটি সাঁড়াশির মতো এক বা আধ মিনিট চুলে চেপে রাখতে হয়। তারপর হেয়ার আয়রন থেকে চুল খুলে দিলেই নানারকম ডিজাইন রেডি। যেমন ধরম্নন :
১। প্রথমে পুরো চুল তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। তারপর চুল সোজা আয়রন করে নিতে হবে। এবার মূল মেশিনে স্টার এ্যাটাচমেন্ট লাগিয়ে রাখুন। সোজা চুলের ভাগ নিয়ে মেশিনটা চুলে চেপে ধরতে হবে। তাতে স্টারের ইম্প্রেশন পড়বে। ঠিক তেমনি করে পরের ভাগ চুলে ট্রেসিয়ার এ্যাটচমেন্টটা লাগিয়ে চুলে চেপে ধরতে হবে এবং ট্রেসিয়ার ইম্প্রেশন পড়বে। এইভাবে পুরো চুলে করতে হবে। এই হেয়ার স্টাইল সব শৈলীর পোশাকের সঙ্গে পরা যাবে।
২। আপনার স্টাইলটা করতে চুলকে প্রথমে আয়রন করে সোজা করে নিতে হবে। তারপর কোয়ার্ডা ইম্প্রেশন এ্যাটাচমেন্টটা লাগিয়ে একবার সোজা এবং একবার বাঁকা করে চুলের ওপর ইম্প্রেশন ফেলতে হবে। এবং পুরো চুলটাই এই রকম করতে হবে। শাড়ির সঙ্গে চুলের স্টাইলটা ভাল মানাবে।
৩। প্রথমে পুরো চুল সোজা করে নিতে হবে। তারপর আয়রনে রোমবি ইম্প্রেশনের এ্যাটাচমেন্টটা লাগিয়ে চুলের উপরের অংশগুলো পাতলা পাতলা করে নিয়ে রোমবি ইম্প্রেশন ফেলতে হবে। তারপর গিস্নটার ব্যবহার করা হয়েছে।
৪। কপালের সামনে থেকে ঘাড় পর্যনত্ম একটি সিঁথি এবং কান বরাবর একটি সিঁথি কেটে চুলকে চার ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। সামনের দুই অংশের চুল আবার তিনটি তিনটি করে ছয়টা ভাগে ভাগ করতে হবে। আবার পিছনের চুলকে দুই দুই দুই চার ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। এবার সামনের একটি অংশের চুল ভালভাবে অাঁচড়িয়ে মাথার উপরে পেঁচিয়ে কিপ দিয়ে আটকে দিতে হবে এবং চুলের শেষ ভাগটি ছাড়া রাখতে হবে। এইভাবে পরপর বাকি অংশের চুল পেঁচিয়ে মাথার মাঝে পিন করে নিতে হবে। সমসত্ম পার্ট পেঁচানো হয়ে গেলে পেঁচানো চুলের শেষ অংশগুলো এক সঙ্গে নিয়ে উপর দিকে তুলে মাথার উপর একটি আলগা খোঁপা করে নিয়ে বাহারি পিন লাগিয়ে নিতে হবে।
৫। সামনে কপালের সাইড থেকে তেরচাভাবে সিঁথি কেটে নিতে হবে। এরপর আড়ভাবে কান বরাবর আর এই সিঁথি কেটে নিতে হবে। সামনের চুলের দুটি অংশকে কিপ দিয়ে আটকে পেছনের অংশের চুল আবার তিন ভাগে ভাগ করতে হবে। যার মধ্যের অংশের চুল 'গ' অরের মতো হবে।
_পুনম প্রিয়াম

No comments

Powered by Blogger.