নির্মল সেন

মঙ্গলবার চলে গেলেন সাংবাদিক নির্মল সেন। বেশকিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। অসুস্থতার কারণে গত ডিসেম্বর ভর্তি হয়েছিলেন ঢাকায় এক হাসপাতালে। সেখানেই জীবনাসান ঘটে তার। জন্ম হয়েছিল গোপালগঞ্জের কোটলীপাড়ায়।
নিজ গ্রাম, কোটলীপাড়া ও গোপালগঞ্জে শিক্ষা শেষে বরিশাল বিএম কলেজে ভর্তি হন। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আইএ পড়ার সময় একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ফলে ওই পর্যায়ে তার লেখাপড়ায় বিঘœ ঘটে। নির্মল সেনের পরিচয় রয়েছে জাতীয় রাজনীতি ক্ষেত্রেও। তিনি শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দলের একজন বিশিষ্ট নেতা হিসেবে কাজ করেছেন। প্রথম পর্যায়ে আরএসপি তথা রেভলিশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালেও তিনি একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করেন। এরপর জেহাদ পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করেন। এরপর যোগদান দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায়। স্বাধীনতার পর পত্রিকাটি আত্মপ্রকাশ করে দৈনিক বাংলা নামে। অনিকেত ছদ্মনামে তার লেখা কলাম দৈনিক বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তাঁর সুন্দর ভাষা, বক্তব্য পাঠকমহলে জনপ্রিয়তা পায়। নির্মল সেন সাংবাদিক ইউনিয়নের একজন নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। আজীবন সদস্য ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের।
নির্মল সেন ছাত্রজীবনে ছিলেন ছাত্রলীগের একজন বিশিষ্ট কর্মী ও নেতা। পরবর্তী পর্যায়ে দেশের সকল সংগ্রাম ও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা একাত্ম ছিলেন। তার লেখা এবং কাজের লক্ষ্য ছিল একটাইÑ সুস্থ, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার আদর্শ উর্ধে তুলে ধরা। এই আদর্শ সমুন্নত রাখা এবং তরুণ সমাজের মধ্যে এই চিন্তা-চেতনাকে পরিব্যাপ্ত করা। নির্মল সেনের সঙ্গে জনকণ্ঠের ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। দীর্ঘদিন তিনি এই পত্রিকায় কলাম লিখেছেন।
তাঁর চলে যাওয়ায় দেশের সাংবাদিকতা জগতেরই শুধু ক্ষতি নয়, তাঁর মতো একজন রাজনীতিক, সাংবাদিক-কলামিস্টের চলে যাওয়া সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতি। বন্ধুবৎসল, অমায়িক এবং একই সঙ্গে চিরকুমার এই বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্টের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তাঁর স্মৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।

No comments

Powered by Blogger.