সর্বোচ্চ আদালতের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে ।। মওদুদ

 সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরম্নদ্ধে দায়েরকৃত আপীল খারিজ করায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নিরপেৰতা ও স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে মনত্মব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এমপি।
বুধবার যুবদলের প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি বলেন, ১৯৮৬ সাল থেকে পাঁচটি পার্লামেন্ট পার হয়ে গেছে। সবাই পঞ্চম সংশোধনীর অধীনে কাজ করেছে। এই সংশোধনী বাতিল করা অসাংবিধানিক বলে আমি আদালতে যুক্তি তুলে ধরেছি। আমি আদালতকে বলেছি, পঞ্চম সংশোধনীতে রাজনৈতিক বিষয় আছে। এটি খুবই স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল। আপনারা বিচার বিভাগকে রাজনীতিতে জড়িয়ে দেবেন না। এটার রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হতে হবে। এটা করতে পারে পার্লামেন্ট আর জনগণ। যদি সংবিধানের ব্যাখ্যা দেয়ার বিষয় থাকে তবে আবেদন গ্রহণ করে লিভ দিয়ে শুনানি হতে পারে। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরম্নদ্ধে দায়ের করা আপীল খারিজ করায় দেশের কোটি কোটি মানুষের কাছে সুপ্রীমকোর্টের নিরপেৰতা ও স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে- সুপ্রীমকোর্ট তার নিরপেৰতা ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে পেরেছে কি-না। তিনি বলেন, আইনজীবী হিসেবে এ রায় আমাকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু জনগণ মানবে কি-না, সেটাই বিষয়।
পুলিশ হেফাজতে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) নেতা আমিরম্নল ইসলাম মিন্টুর মৃতু্যর প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী যুবদল দলের নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। যুবদল সভাপতি বরকত উলস্নাহ বুলুর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরম্নল ইসলাম আলমগীর, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এবং বিএনপি নেতা ফজলুল হক মিলন ।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ আরও বলেন, ১৯৮৬, ৮৮, ৯১, ৯৬ এবং ২০০১ সাল পর্যনত্ম পাঁচটি পার্লামেন্ট পার হয়ে গেছে। সবকিছু পঞ্চম সংশোধনীর আইনেই চলে এসেছে। পঞ্চম সংশোধনীর বিষয়টি জনগণের আদালতেই সমাধান হবে বলে তিনি মনত্মব্য করেন। তিনি বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, বর্তমান সরকারের এক বছরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এক বছরে প্রতিদিন গড়ে দশ থেকে বারো জন পুলিশী হেফাজতে বা ক্রসফায়ারে মারা গেছে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে চরমভাবে। দিনে গড়ে প্রতি পাঁচ মিনিটে ছিনতাই, চাঁদাবাজি হয়েছে। আর এসব নিয়ন্ত্রণে সরকারের সব উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, সরকারের মদদপুষ্টরাই এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত। গত এক মাসে জাতীয়তাবাদী দলের দুই নেতা মিন্টু এবং বিএম বাকির পুলিশী হেফাজতে মারা গেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের জবাব একদিন মানুষ দেবে। সেদিন আসতে আর বেশি দেরি নেই উলেস্নখ করে মওদুদ বলেন, মানুষের মধ্যে যে ৰোভ আছে, তা নিয়ে মানুষ বাড়িতে বসে থাকতে পারবে না বা রাজি হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে এসেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন_ বাংলাদেশের মানুষ জানে, কিভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রৰা করতে হয়। সরকার যদি দেশবিরোধী কর্মকা- থেকে বিরত না থাকে তবে আন্দোলনের কঠিন পথ বেছে নেয়া ছাড়া অন্য কোন পথ থাকবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দেন তিনি।
সমাবেশে মির্জা আব্বাস বলেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিরম্নদ্ধে এখনই প্রতিবাদমুখর না হলে নির্যাতন আরও বাড়বে। তিনি সরকারের অরাজনৈতিক আচরণের বিরম্নদ্ধে রম্নখে দাঁড়াতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করতে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে দাসখত দিয়ে এসেছেন। একইসঙ্গে সরকার বাকশাল কায়েমের চেষ্টায় লিপ্ত বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তিনি সরকারকে দেশবিরোধী কর্মকা- এবং বাকশাল কায়েমের পথ পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তা না হলে সরকারকে চরম মাসুল দিতে হবে, ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
বাকির স্মরণে শ্রমিক দলের শোকসভা শ্রমিক দল নেতা বিএম বাকিরের মৃতু্যতে বুধবার শোকসভা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল । রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত শোক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাকিরের মৃতু্যকে রহস্যজনক উলেস্নখ করে বলেছেন, বাকির পুরোপুরি সুস্থ ছিল। বাকিরের মৃতু্যরহস্য সরকারকেই উন্মোচন করতে হবে। সভায় বক্তারা বাকিরের মৃতু্য রহস্য উন্মোচনে তদনত্ম কমিটি গঠনের দাবি জানান।
শ্রমিক দলের সভাপতি নজরম্নল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, এমকে আনোয়ার এমপি, শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাশেম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জাফরম্নল হাসান । সভা শেষে বিএম বাকিরের বিদেহী আত্নার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.