লোক দেখানো অভিযান নয়, প্রয়োজন সামগ্রিক পরিকল্পনা-ফুটপাত উদ্ধারের পরই পুনর্দখল

আবারও রাজধানীর ফুটপাত উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ৩ এপ্রিল শুরু হওয়া এ অভিযান জনদুর্ভোগ লাঘবের কথা বলে বছরের পর বছর ফুটপাত উদ্ধারে পরিচালিত অভিযানের মতোই ব্যর্থ হতে চলেছে। পরিস্থিতির খুব বেশি হেরফের হয়নি।


মহানগরের ফুটপাত নিয়ে এর আগে তেলেসমাতি কারবার কম হয়নি। যেখানে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে উচ্চ আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, নগর কর্তৃপক্ষ ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বারবার নোটিশ জারি করছে, সেখানে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে হকারদের কাছে ফুটপাত বরাদ্দ দেয় ডিসিসির একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা। আর উদ্ধারের কিছুদিন পরই পুনর্দখল হয়ে যায় ফুটপাত। এর পেছনে আছে অবৈধ ফুটপাত-বাণিজ্য। ফুটপাতকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজির ঘটনা তো সর্বজনবিদিত।
এসব অভিযান যে শুধু লোক দেখানো, আর এতে যে আখেরে পুলিশেরই লাভ হয়, তা আবারও পরিষ্কার হলো চলমান এই অভিযানে। রোববারের ‘ঢাকায় থাকি’তে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার হকাররা অভিযোগ করেছেন, ফুটপাত ও রাস্তায় দোকান বসানোর জন্য তাঁদের যে চাঁদা দিতে হয়, তা দিয়ে পকেট ভারী হয় ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা আর পুলিশের। তাঁরা জানিয়েছেন, কিছুদিন আগে উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে, তারপর তাঁরা পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে আবার ফুটপাত ও রাস্তায় বসছেন। এই ম্যানেজের অর্থ বুঝতে অসুবিধা হয় না।
হকারদের সঙ্গে জড়িত আছে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবনধারণের প্রশ্ন। তাদের পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ প্রকারান্তরে তাঁদের বাধ্য করে আবার ফুটপাতে বসতে। তা ছাড়া পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদের ফলে অপূরণীয় অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়।
উচ্ছেদের পরই পুনর্দখল থেকে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, ফুটপাত উদ্ধারে লোক দেখানো এসব অভিযানে কাজ হবে না। ফুটপাতে ব্যবসা করেন যে হকার, তাঁকে পুনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন করে আর কোনো ফুটপাত যেন দখল না হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে। নগরবাসীর জীবনের দীর্ঘস্থায়ী এই অস্বস্তি দূর করতে সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.