জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর উপায়-৪-পেট ভরাতেই বাজেট শেষ সুষম খাদ্য বিলাসিতা by রাজীব আহমেদ

দুই শিশুসন্তানেরই কমলালেবু খুব পছন্দ। কিন্তু আক্রার বাজারে মৌলিক খাদ্য কিনতেই সব টাকা শেষ হয়ে যায়। তাই কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কর্মকর্তা উদয় চট্টোপাধ্যায়ের পক্ষে ৬০ টাকা হালির এই যুগে কমলালেবু কেনা সম্ভব হয় না। শিশুরা তো এসব বোঝে না। তাই তিনি অজুহাত দেন ফরমালিনের।


কমলালেবুর বদলে সন্তানদের এখন খাওয়াচ্ছেন চাঁপাকলা। তবুও আঙুলের সমান একটি কলা কিনতেই ব্যয় হচ্ছে তিন টাকা। ক্যাবের হিসাবে গত দুই বছরে কলার দাম বেড়েছে ৪১ শতাংশ।
ঢাকা মহানগরীতে মাসে ৩০ হাজার টাকার কম বেতন পান এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। ২০১০ সালের হিসাবে শহরে একটি পরিবারের গড় আয় যেখানে ১৬ হাজার ৪৭৭ টাকা, সেখানে ৩০ হাজার টাকা একটি সম্মানজনক আয় হিসেবেই গণ্য হয়। কিন্তু এ আয় দিয়ে এখন আর সংসার চলছে না। নূ্যনতম বিলাসিতার চিন্তা বাদ দিয়ে মৌলিক প্রয়োজন মেটাতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সব টাকা। ফলে মানুষ মৌলিক খাবারের বাইরে ফলমূলের কথা আর ভাবতে সাহস পায় না। দুধ বলতে চায়ের সঙ্গে যেটুকু ব্যবহৃত হয়। প্রাণিজ আমিষ হয়তো জুটছে, তবে সেটাও বিলাসিতাহীন মাছ, অথবা ব্রয়লার মুরগির মাংস দিয়ে।
সাইয়েদুর রহমান বড় হয়েছেন গ্রামের বাড়ি বরিশালের উজিরপুর থানায়। বাড়ির পাশেই বিরাট ফসলি জমি। বছরের একটা বড় সময় সেই জমি পানিতে ডুবে থাকে। বর্ষায় বেলে, পুঁটি, শোল, চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সস্তা না হলেও দুর্লভ থাকে না। আর বর্ষার শেষে ডোবা-নালা, খাল-পুকুরে মাছের অভাব হয় না। তাই দেশীয় প্রজাতির মাছ ছাড়া অন্য মাছ সাইদুর রহমানের মুখে রোচে না। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় সংসার গড়ার পর এখন ৩৫০ টাকা কেজির টেংরার ঝোল নয়, তাঁকে খেতে হচ্ছে ১২০ টাকা কেজির তেলাপিয়ার তরকারি।
পরদেশি মাছ তেলাপিয়া বাংলাদেশের ভদ্র সমাজে স্থান করে নিয়েছে। উচ্চবিত্তের লোকেরা যেখানে কেজিতে কেজিতে তেলাপিয়া কিনে বাসায় ফেরে, সেখানে সাইয়েদুর রহমানের কিনতে দোষ কোথায়। কেউ তো আর আড় চোখে তাকিয়ে মুখ বাঁকায় না। কিন্তু তেলাপিয়া যেটি পেরেছে পাঙ্গাশ তা পারেনি। বহু পরিবারে পাঙ্গাশ এখনো নিষিদ্ধ। কিন্তু নিচের আয়ের মানুষের কাছে ভরসা পাঙ্গাশই। বাজারে কম দামের মধ্যে এ দুটো মাছই এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ-বোয়াল ত্যাগ করে নিম্ন আয়ের মানুষের দিন এখন চলছে তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশে।
স্বল্প ও নিম্ন আয়ের পরিবারের বাজার খরচের যে বাজেট থাকে তাতে বড় ব্যয় হয় মাছ-মাংস ও সবজি কেনার পেছনে। কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, বাজার খরচের জন্য আট হাজার টাকা বাজেট করা হলে তার সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে তেল, নুন, সাবান ইত্যাদি কেনার পেছনে। আর মাছ-মাংস ও সবজি কেনার পেছনে থাকছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ বাজেটে প্রাণিজ আমিষ ও সবজি কেনার জন্য দৈনিক ৫০-৬০ টাকার বেশি রাখার সুযোগ কোথায়। আর নিম্ন আয়ের মানুষজনের মধ্যে যাঁরা একেকজন এক হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে মাসের খাদ্যের ব্যয় শেষ করেন, তাঁদের প্রাণিজ আমিষের জন্য বরাদ্দ যা থাকে তা নামমাত্র।
খাদ্যবহির্ভূত খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি প্রাণিজ আমিষের বাজেট কমে যাওয়ার আরেক কারণ তেল-নুন কিনতে ব্যয় বেড়ে যাওয়া। একবেলা মাছের বদলে সবজি খেয়ে খরচ কমানো যায়। কিন্তু ভাত কম খেয়ে থাকা যায় না। আবার তরকারি তেল ও নুন কম হলে তা বিস্বাদ লাগে। গত ডিসেম্বরে যে তেল কিনতে ৫৮০ টাকা লাগত সেটি এখন ৬৬০ টাকা। ফলে তেলের পেছনে মাসে সংসারের ব্যয় বেড়েছে ৮০ টাকা। এক কেজি নুন কিনতে লাগত ২২ টাকা; এখন তা ৩০ টাকা। ফলে ব্যয় কমানোর সব চাপ পড়ে ওই মাছ-মাংসের বাজেটে। কিন্তু আগুন লাগা বাজারে এখন বেশির ভাগ দেশীয় প্রজাতির মাছের দাম কেজিপ্রতি ৩০০ টাকার বেশি। সাধারণ রুই মাছও ২৫০-৩০০ টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। ১৪০-১৬০ টাকা কেজির চাষ করা কই মাছের কেজি এখন চাওয়া হচ্ছে ২২০-২৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির কেজি উঠেছে ১৫০-১৬০ টাকায়। ডিমের হালিপ্রতি সর্বনিম্ন দাম ৩৬ টাকা।
এক মাসের ফর্দ : মণিপুরীপাড়ার বাসিন্দা সাইয়েদুর রহমানের চারজনের পরিবারের মাসিক বাজার খরচের বরাদ্দ প্রায় আট হাজার টাকা। তিনি জানান, বাজেটের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় দৈনন্দিন কাঁচাবাজার খরচের পেছনে। মাসের শুরুতে বেতন পাওয়ার পর তিনি প্রয়োজনীয় সব পণ্য কিনে রাখার চেষ্টা করেন। বাকি যা থাকে সেই টাকা ব্যয় করেন দৈনিক মাছ, মাংস ও সবজি কিনতে।
তিনি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মাসের বাজার করেছেন। কাজীপাড়া বাজারের একটি দোকানের দেওয়া রসিদে দেখা যায়, ৩০ কেজি চাল ৪৫ টাকা দরে এক হাজার ৩৫০ টাকা, ছয় কেজি আটা ২২৫ টাকা, পাঁচ লিটারের এক বোতল রূপচাঁদা সয়াবিন তেল ৬৫০ টাকা, পাঁচ কেজি পেঁয়াজ ১০০ টাকা, আধা কেজি রসুন ৩০ টাকা, আদা এক কেজি ৭০ টাকা, সাবান ২৪৫ টাকা, হারপিক ৪৫ টাকা, চিনি ১২০ টাকা, চা ১০০ টাকা, ফ্রেশ মিল্ক দুই প্যাকেট ৪২০ টাকা, মসলা ২০০ টাকা, তিন কেজি ডাল ২৭০ টাকা ও টুথ পেস্ট ৮০ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ তিন হাজার ৯০৫ টাকা। বিক্রেতা পাঁচ টাকা কম রেখেছেন। ফলে ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৯০০ টাকা।
এসবের বাইরে বাজার বাবদ সাইয়েদুর রহমানের ব্যয় হয়েছে আধা কেজি মরিচ ও ২৫০ গ্রাম হলুদের গুঁড়া, একটা ঝাড়ু, একটি এনার্জি সেভিং বাল্ব বাবদ প্রায় ৬০০ টাকা। সব মিলিয়ে কাঁচাবাজার বাদে সাইয়েদুর রহমানের পরিবারের বাজারের বাজেটের অর্ধেকের বেশি ব্যয় হয়ে গেছে। বাকি তিন হাজার ৫০০ টাকা থাকছে মাছ, মাংস ও সবজি কেনার পেছনে। এতে দৈনিক বাজেট থাকে ১১৬ টাকা। সকালে চারজনের জন্য তিনটি ডিম ও দুপুর-রাত মিলিয়ে আধা কেজি মাছ অথবা মাংস কেনা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ তিনটি ডিমের দাম এখন ২৭ টাকা, এক কেজি সবজি প্রায় ৩০ টাকা। মাছ বা মাংস কেনার জন্য থাকে ৫৯ টাকা।
মাছ-মাংসেই বেশি ব্যয় : সাইয়েদুর রহমান জানান, সম্প্রতি মাছ-মাংসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। এ কারণে ভালো মাছ অথবা মাংস তাঁরা খেতে পারেন সপ্তাহে দু-এক দিন। ব্রয়লার মুরগি খাওয়ার অভ্যাস তাঁর পরিবারে নেই। একটি ছোট দেশি জাতের মুরগি কিনতেও ৩০০ টাকার প্রয়োজন হয়, যা তাঁর সংসারের প্রায় তিন দিনের বাজেট। তিনি জানান, বেশির ভাগ দিন তাঁদের বাসায় তেলাপিয়া, রুই, নলা, চাষের কই ইত্যাদি মাছ রান্না হয়। শুক্রবার কখনো মুরগি অথবা কখনো গরুর মাংস কেনা হয়। পিঠা-পায়েস খুব একটা হয় না। মাসের শেষ দিনগুলোতে মাছ-মাংস খাওয়া কমে যায়। ফলের মধ্যে মৌসুমি ফল মাঝেমধ্যে কিনতে পারেন তিনি। নিয়মিত ফল খাওয়া হয় না।
একটি পরিবারের বাজারের বাজেটের ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত মাছ-মাংস। ক্যাবের হিসাবে গত দুই বছরে দেশে মাছের দাম বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। ফলে আগে চার হাজার টাকায় যে মাছ পাওয়া যেত সেটি কিনতে এখন ব্যয় হচ্ছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। মাছের পাশাপাশি একই সময়ে মাংসের দাম বেড়েছে ১৮ শতাংশ।
এ তথ্য জানিয়ে ক্যাবের কর্মকর্তা উদয় চট্টোপাধ্যায় তাঁর পরিবারের উদাহরণটি দেন। তিনি বলেন, আগে তিনি বাসায় সাধারণত টেংরা, মেনি, দেশি কই, বেলে, ফলি, বাইন, ভেটকি ইত্যাদি মাছ বেশি কিনতেন। এখন সেগুলোর কেজিপ্রতি দাম ৩০০-৪০০ টাকা। ফলে ওই সব মাছ কেনা বাদ দিতে হয়েছে। এর বদলে এখন বাসায় যাচ্ছে রুই, তেলাপিয়া ও অন্যান্য কার্প জাতীয় মাছ।
ঢাকার যাঁরা ছোট আয়ের চাকরিজীবী তাঁদের অবস্থা আরো করুণ। দেশি জাতের মাছের ঝোল জিভে লাগানোর সুযোগ তাঁদের আসে না বললেই চলে। তাঁদের জন্য নলা আর পাঙ্গাশ। গত শুক্রবার ইব্রাহিমপুর বাজারে মাছ কিনছিলেন ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা গার্মেন্টকর্মী আবু ইউসুফ। তিনি জানান, সর্বশেষ তিনি মাগুর মাছ খেয়েছিলেন গত ঈদে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে। তাও কেনা নয়, খাল থেকে নিজেই ধরেছিলেন। আর শিং মাছ চেখে দেখার সুযোগ হয়েছিল জানুয়ারি মাসে। ইব্রাহিমপুর বাজার থেকেই তিনি ২৫০ গ্রাম মরা শিং কিনেছিলেন ৫০ টাকা দিয়ে। ক্যাবের হিসাবে, গত দুই বছরে ছোট শিং মাছের দাম বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। বাজারে বর্তমানে শিং-মাগুর মাছের কেজিপ্রতি দাম ৫০০ থেকে ৭৫০ টাকা- এ তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, এক কেজি শিং মাছের খরচ দিয়ে তাঁর ১০ দিনের খাবারের পুরো ব্যয় মেটানো সম্ভব। তিনি জানান, তাঁদের মতো গার্মেন্টকর্মীদের মাছ বলতে নলা, তেলাপিয়া, পাঙ্গাশ ও কিছু কম দামের সামুদ্রিক মাছই বেশি খাওয়া হয়।
সুষম খাদ্য অধরা : সুষম খাদ্য খেতে হলে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ফলমূল, সবজি ইত্যাদি নিয়মমতো পরিমাণে খেতে হবে। স্বল্প আয়ের পরিবারে মাছ-মাংস, ডিম কমবেশি পেলেও দুধ ও ফল খাওয়া হয় কালেভদ্রে। শহরের শিক্ষিত চাকরিজীবী পরিবারগুলোতে প্রতিদিন দুধ ও ফল না খাওয়ার কারণ অজ্ঞতা নয়, সামর্থ্যহীনতা। চারজনের পরিবারে দৈনিক এক গ্লাস দুধ খেতে ব্যয় হবে ৫৪ টাকা। মাসে এক হাজার ৬২০ টাকা। আর বাজারে এখন ১০০ টাকা কেজির কোনো ফল নেই। দৈনিক ১০০ গ্রাম করে চারজনের জন্য ৪০০ গ্রাম ফল কিনতে ব্যয় হবে ৪০ টাকা। দুটো মিলিয়ে দৈনিক ১০০ টাকা খরচ হবে, মাসে তিন হাজার টাকা। কিন্তু ৩০ হাজার টাকা বেতনের সাইয়েদুর রহমানের পরিবারে বাজারের ব্যয় আট হাজার টাকা। যেখানে ফল ও দুধের জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই।
আরো কম আয়ের মানুষের জন্য ক্যালরি পূরণই বড় কথা। দৈনিক ২২০০-২৪০০ ক্যালরি পেতে তাঁরা পেট ভরে ভাত খান। আর তাতেই বাজেট শেষ। তবে চাকরিজীবীদের পরিবারে সন্তানের দুধের জন্য বরাদ্দ থাকে। সেই বরাদ্দ সম্প্রতি অনেকখানি বাড়াতে হয়েছে। উদয় চট্টোপাধ্যায় জানান, কয়েক মাস আগেও তাঁর সন্তানের জন্য সেরেলাক ব্র্যান্ডের শিশুখাদ্য কিনতেন প্রতি প্যাকেট ৩৩০ টাকা দিয়ে। এখন সেটির দাম ৩৮৫ টাকা। মাসে তিন প্যাকেটের জন্য খরচ বেড়েছে ১৫০ টাকা। অন্যদিকে ল্যাকটোজেনের প্রতি প্যাকেটের দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। এ জন্য টিনের কৌটা বাদ দিয়ে তিনি পলিব্যাগের কৌটা কেনেন। ফলে ৫০ গ্রাম দুধের টাকা সাশ্রয় হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের খাদ্য কিনতেই বাজেট শেষ হয়ে যায়। তাদের সুষম খাদ্যের কথা বলাটা অন্যায়। পয়সা দিয়ে ফল কিনে খাওয়াটা তাদের জন্য বিলাসিতা। তিনি বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী স্লোগান হলো ভারসাম্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য। সামর্থ্যহীনদের সুষম খাদ্য খাওয়া হচ্ছে না। দরিদ্র মানুষ হয়তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছু কিছু মৌসুমি ফল খায়। কিন্তু নিয়ম করে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ফল খাওয়া অনেকের পক্ষেই আর্থিক দিক দিয়ে সম্ভব নয়।
নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সীমিত : বাজারদর নিয়ন্ত্রণ বলতে এখনো চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা ইত্যাদি কয়েকটি পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সরকারের ভোজ্য তেল ও চিনির দামেই শুধু আইনগত হস্তক্ষেপের সুযোগ আছে। চাল ও আটার দাম নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় চালু রেখেছে ওএমএস কর্মসূচি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) শুধু ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল ও ছোলা বিক্রি করে। কিন্তু সংসারের প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের মধ্যে গুঁড়ো দুধ, চা, মসলা, লবণ; খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মধ্যে সাবান, টুথপেস্টসহ প্রায় সব কিছুই রয়ে গেছে নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপের আওতার বাইরে।
চলতি অর্থবছরে ডলারের দামের অজুহাতে প্রায় সব আমদানিনির্ভর পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু কোনো পণ্যের দাম একবারের জন্য তদারকি করে দেখেনি সরকার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে গুঁড়ো দুধ আমদানিতে কর ছাড় দিয়েছে সরকার। কিন্তু এর পর দাম শুধু বেড়েছেই। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে একবারও তদারকি করে দেখা হয়নি কর ছাড়ের সুফল মানুষ পাচ্ছে কি না। মাছ ও মাংসের বাজারে তদারকির কোনো চিন্তাই এখনো আসেনি।
যেখানে সরকারের ক্ষমতা আছে সেখানেও তদারকির চিত্রটা সুখকর নয়। পরিবেশক প্রথা চালু করে তার আওতায় ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে একবারের জন্যও কার্যকর করতে পারেনি সরকার। বর্তমানে পরিবেশক প্রথা অকার্যকর। চিনির দামও বাজারের চাহিদা জোগানের ওপর নির্ভর করছে। দাম বাড়লে তা নির্ধারিত দামকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তদারকি কোনো কাজে আসে না।
কম্পানিগুলো তাদের পণ্যের দাম কত নির্ধারিত করল, তা তদন্তের কোনো ক্ষমতা নেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের। দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের দ্রব্যমূল্য অংশে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে ভোক্তাদের স্বার্থে 'ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হবে'। পার্শ্ববর্তী দেশেও এমন কমিশন আছে। সরকারের প্রস্তাবিত প্রতিযোগিতা আইনে একটি কমিশন করার কথা বলা হয়েছে যেটির দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। ভোক্তারাও সেখানে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। কিন্তু আইনটি সংসদে পাস হয়নি।
ভোক্তা বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৫৬ সালের এসেনশিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট অনুযায়ী সরকার কোনো পণ্যকে 'এসেনশিয়াল' বলে ঘোষণা করে দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে। সম্প্রতি ওই আইনের অধীনে ভোজ্য তেল ও চিনির পরিবেশক প্রথা চালু হয়েছে। কিন্তু কোনো ভোক্তা নির্ধারিত দামকে বেশি মনে করে অভিযোগ জানাতে পারবেন না। কারণ সেটার কোনো সুযোগ কোনো আইনে নেই।

No comments

Powered by Blogger.