চরাচর-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাণ্ডুলিপি সংগ্রহশালা by পাভেল রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনেক সমৃদ্ধ একটি পাণ্ডুলিপি সংগ্রহশালা আছে, এই তথ্য হয়তো অনেকের কাছেই অজানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য ও গ্রন্থবিজ্ঞান বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই সংগ্রহশালায় বিভিন্ন ভাষার প্রায় ৩০ হাজার পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত আছে। দেশের গবেষকদের উৎসাহিত করতে এবং গবেষণা মাধ্যমকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাণ্ডুলিপি সংগ্রহশালা।


বলা চলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকেই এই পাণ্ডুলিপি সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৫ সাল থেকে প্রথম পাণ্ডুলিপি সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। ১৯৩৩ সালের মধ্যেই আসাম, নদীয়া, ঢাকা, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ১৭ হাজার পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করা হয়। এরপর ১৯৫২ সালে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ ৫৮৫টি পাণ্ডুলিপি প্রদান করেন। এরই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় পাণ্ডুলিপি সংগ্রহের কাজ চলতে থাকে। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৩৩ সালের মধ্যে মাত্র ১২ বছরে যেখানে ১৭ হাজার পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত হয়েছে, সেখানে ২০১২ সালে এসে শতবর্ষের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে এই সংগ্রহশালায় সংগৃহীত পাণ্ডুলিপির সংখ্যা ৩০ হাজার শুনলে মনে হয় শুরুর তুলনায় এখন কিছুটা ধীরগতিতে পাণ্ডুলিপি সংগ্রহের কাজ চলছে। আবার ৩০ হাজার পাণ্ডুলিপির একটা শক্তিশালী সংগ্রহ শুনলে মনে হয়, এর অর্জন তো কোনোভাবেই কম কিছু না। এখানে বিভিন্ন ভাষার পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত আছে, যার মধ্যে বাংলা, অসমিয়া, উর্দু, ফারসি, হিন্দি, বার্মিজ উল্লেখযোগ্য। আবার সংগৃহীত পাণ্ডুলিপির মধ্যে রয়েছে তালপাতার পাণ্ডুলিপি, কলাপাতার পাণ্ডুলিপি, গাছের বাকলের পাণ্ডুলিপি, কাঁঠাল পাতার পাণ্ডুলিপি, কাগজের পাণ্ডুলিপি প্রভৃতি। শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে এই সংগ্রহশালা এত দীর্ঘ সময় কিভাবে পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ করা হয়, বছরের পর বছর এই পাণ্ডুলিপির যত্ন নেওয়া হয় কিভাবে? জানতে চাইলে সংগ্রহশালার দায়িত্বরত উপ-গ্রন্থাগারিক দীলিপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমরা সংগৃহীত পাণ্ডুলিপিগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করি। এ ছাড়া ফিয়েগেশন নামে এক ধরনের যন্ত্রের সাহায্যও নেওয়া হয়, যাতে করে পাণ্ডুলিপিগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা যায়। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি যেন কোনোভাবেই পাণ্ডুলিপিগুলো নষ্ট না হয়। আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই পাণ্ডুলিপিগুলো সংরক্ষণ করি, তাতে পাণ্ডুলিপিগুলো নষ্ট হওয়ার সুযোগ খুবই কম। তবে সংগ্রহশালাটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই আগ্রহী ব্যক্তিকে আমাদের গ্রন্থাগারিক বরাবর একটা দরখাস্ত দিতে হবে। তিনি দরখাস্তে যখন তাঁর প্রয়োজন উল্লেখ করবেন, তখন কর্তৃপক্ষ সংগ্রহশালা ব্যবহারের অনুমতি দেবে। আগ্রহীরা এখানে এসেও পড়তে পারেন আবার কেউ যদি পাণ্ডুলিপি বাসায় নিয়ে যেতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা প্রয়োজনীয় পাণ্ডুলিপির সফট কপি সিডি করে আগ্রহী ব্যক্তিকে প্রদান করব। তবে এ ক্ষেত্রে আগ্রহী গবেষককে ৫০০ টাকা সিডির জন্য প্রদান করতে হবে। শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পাণ্ডুলিপি সংগ্রহশালা আমাদের জাতীয় প্রয়োজনে কতটা ভূমিকা রাখতে পেরেছে? আমাদের গবেষণা মাধ্যমকে কতটা সমৃদ্ধ করতে পেরেছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে হয়তো কিছুটা বিভ্রান্ত হতে হবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে একটা সমৃদ্ধ সংগ্রহশালায় পরিণত হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এই সংগ্রহশালায় কেউ চাইলে পাণ্ডুলিপি জমা দিতে পারেন। তাঁদের প্রত্যেকের পাণ্ডুলিপি সাদরে গ্রহণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.