'নৈরাজ্য' সৃষ্টিকারীদের 'সঠিক পথে' আনার উপায় সরকারের জানা আছে : শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, হরতালের নামে যারা 'নৈরাজ্য' সৃষ্টি করছে তাদের 'সঠিক পথে' আনার উপায় সরকারের জানা আছে। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনকে অপশাসন আখ্যায়িত করে বলেন, দেশের মানুষ আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপে দানব সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না।


গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বিরোধী দলকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'ধ্বংসাত্মক পথ পরিহার করুন। সহ্য করছি বলে এটাকে আমাদের দুর্বলতা মনে করবেন না।' ১৮ দলীয় জোটের হরতালের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যারা গাড়ি ভাঙচুর করবে, মানুষ পুড়িয়ে মারবে, জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে তাদের কিভাবে সঠিক পথে আনতে হয় তা সরকার জানে। কিন্তু আমরা তা করতে চাই না।' বিরোধী দলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনার ৩১তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস এবং তাঁর নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয় করায় ছাত্রলীগ এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার ছাত্রলীগকর্মী অনুষ্ঠানে যোগ দেয়।
বিএনপির বৃহস্পতিবারের হরতালকে ইস্যুবিহীন হরতাল আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি কোনো ইস্যু ছাড়াই হরতাল ডেকেছে। পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তিনি বিরোধী দলের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, 'এ হরতাল কিসের জন্য?' ২০০১ সালের পর বিএনপির নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের কথা মানুষ ভুলে যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'হরতালে বাসের মধ্যে ঘুমন্ত চালককে পুড়িয়ে মেরেছে। একসঙ্গে পাঁচটি জীবন নিয়েছে। তাদের কথা ভেবে দেখেছে বিএনপি? এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে কিভাবে পুড়িয়ে মারে?'
শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে গণতন্ত্রের পথে চলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, 'গণতান্ত্রিক পথে চলুন। গণতান্ত্রিকভাবেই এ দেশ চলবে। অন্যান্য দেশ যেভাবে গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয় বাংলাদেশও সেভাবে পরিচালিত হবে।' গণতান্ত্রিক অবস্থায় যেকোনো দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার বিষয়ে বিএনপির দাবি নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপে আর দানব দেখতে চায় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিছুই দিতে পারেনি, দিয়েছে অপশাসন।
তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার অবস্থার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ সবার সঙ্গেই অসদাচরণ করেছে, নিপীড়ন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করে নির্বাচন আদায় করেছি। দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামক দানব আর দেখতে চায় না। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো বাংলাদেশেও গণতান্ত্রিক সরকার অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে মামলা রয়েছে তার রায় হবে ২০১৪ সালে। ২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে আমাদের সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হবে। অর্থাৎ ২০১৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। ২০১৪ সালের জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে আমাদের দেশের নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী। পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ যদি আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তবে ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশ জয়লাভ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বর্তমান সরকারের আমলে খেলাধুলা, সংস্কৃতি সবক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে চলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ক্রিকেটে বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে। এখন চার-ছয় মারা কোনো ব্যাপারই নয়। ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি সংগ্রামে ছাত্রলীগের অবদান রয়েছে। তিনি ছাত্রলীগের প্রতিটি সদস্যকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আগামী দিনের নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানান। পাশাপাশি দেশের যেকোনো প্রয়োজনে ত্যাগ স্বীকারেও প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সেক্টরে দেশের জন্য গৌরব অর্জনকারী তরুণদের মঞ্চে জায়গা করে দেয় ছাত্রলীগ। প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি অনুষ্ঠানমঞ্চে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি, প্রথম এভারেস্ট জয়ী মুসা ইব্রাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্য মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ফুটবলার জাহিদ হাসান এমিলি। তাঁদের পক্ষ থেকে মুসা ইব্রাহিম স্বাগত বক্তব্য দেন। দর্শকের আসনে ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সংগীত, ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমুদ্র বিজয়কে কেন্দ্র করে লিখিত গান পরিবেশিত হয়।
ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। অনুষ্ঠানে 'আলোর পথের সারথি দেশরত্ন শেখ হাসিনা' শীর্ষক ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। এতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে ছাত্র সংবর্ধনার অভিনন্দন পত্র পাঠ করেন বদিউজ্জামান সোহাগ। এ ছাড়া ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট, ফুলের তোড়া ও উত্তরীয় উপহার দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'সমুদ্র জয়ের কর্ণধার' অভিহিত করে এর আগে যুব সংগ্রাম পরিষদ ও নাগরিক কমিটি তাঁকে গণসংবর্ধনা দিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.