প্রতিবন্ধিতা জয়ের প্রদর্শনী by আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

শিল্পকর্মগুলো সবই দৃষ্টিনন্দন। প্রদর্শনীতেও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। সবাই যেমন আগ্রহ নিয়ে প্রতিটি শিল্পকর্ম দেখছেন, তেমনি আগ্রহ নিয়ে দেখছেন এর শিল্পীকে। আর দশজনের মতো সুস্থ-সবল হাত পা নেই তাঁর। সহজ কথায় তিনি শারীরিক-প্রতিবন্ধী। কিন্তু শিল্প করার পথে হাত-পায়ের অসুস্থতা কোনো বাধা হয়ে উঠতে পারেনি।


শারীরিক বাধা অতিক্রম করে ফেলা এই মানুষটির নাম এম ফজলে রাব্বি ওরফে ইমন।
২৬ থেকে ৩০ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন চত্বরে আয়োজন করা হয়েছিল ইমনের শিল্প প্রদর্শনী।
প্রদর্শনী থেকে আয় হওয়া একটি টাকাও নেননি ইমন। এই টাকা ব্যবহার করা হবে প্রতিবন্ধীদেরই কল্যাণে। প্রদর্শনীর শেষ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-উপদেষ্টা গোলাম সাব্বির সাত্তারের হাতে এই প্রদর্শনীর শিল্পকর্ম বিক্রির টাকা তুলে দেওয়া হয়। টাকাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয়।
প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া শিল্পকর্মগুলো আমাদের চারপাশের চিরচেনা উপকরণ দিয়ে তৈরি। তিনি সুপারির খোল, ডিমের খোসা, মাটির হাঁড়ি, চুমকির মতো চেনা সব জিনিস দিয়ে তৈরি করে চলেন অচেনা দুনিয়া।
এ রকম নানা শিল্পকর্মে সেজে ওঠা প্রদর্শনী দেখে অতিথিদের বইয়ে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ লিখেছেন, ‘আমাদের হাত-পা-কান ভালো থাকা সত্ত্বেও আমরা অকর্মণ্য, কিছুই পারি না। তবে ইমন যা দেখিয়ে দিয়েছেন, তা কী করে সম্ভব!’
সৌরভদের মুগ্ধ করে দেওয়া ইমনের বাড়ি রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদা ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম বথুয়ায়। ২৫ বছর বয়সী এই ছেলেটি সরদহ ডিগ্রি কলেজে পড়েন। তিন ভাইবোনের মধ্যে ইমন দ্বিতীয়। বাবা দীর্ঘদিন ফটোগ্রাফির ব্যবসা করতেন। ইমনের ধারণা, বাবার ছিল শিল্পী-মন, যা তাঁকেও পেয়ে বসেছে।
ইমন বললেন তাঁর শিল্পী হয়ে ওঠার গল্প, ‘জন্মের পর থেকে প্রায়ই চিকিৎসার জন্য আমাকে পিজি হাসপাতালে নেওয়া হতো। চারঘাট থেকে এত ঘন ঘন যেতে সমস্যা হতো। এ জন্য আমি থাকতাম গাজীপুরে মামার বাড়িতে। সেখানে বসে থেকে আমার অলস সময় কাটতে চাইত না। অন্য শিশুরা যখন খেলে বেড়াত, আমি তখন অসহায় দৃষ্টি মেলে তাদের দুরন্তপনা দেখতাম। কিছু একটা করতে চাইতাম।’
এই কিছু একটা করার উপায় খুঁজে দিলেন ইমনের মামি গাউসিয়া আলম। মামি তাঁর হাতে তুলে দেন শিল্পের এই উপকরণ। মামির কাছেই তাঁর হাতেখড়ি হয়। সেই থেকে এখন এই শিল্পের নেশায় ডুবে গেছেন ইমন।
ইমনের পা দুটি আর কোনো দিন ঠিক হবে না। ক্যালসিয়াম-সমস্যার কারণে এমন হয়েছে বলে চিকিত্করা বলেছেন। প্রথমে তাঁর হাত দুটি ভালো ছিল। এখন মাঝেমধ্যে একটি হাতেও অসুবিধা হচ্ছে। ইমনের ভয় হয়, যদি হাত দুটিও নষ্ট হয়ে যায়! তাহলে শিল্পকর্ম কীভাবে করবেন!
ইমনের এই ভয় দূর করার কি কোনো উপায় আছে?

No comments

Powered by Blogger.