এখনই সতর্কতা ও যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন-সারা দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ

ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে সারা দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির সংকটের কারণে এ সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ডায়রিয়া পরিস্থিতির সংবাদ ছাপা হয়েছে গত মঙ্গলবারের প্রথম আলোতে। গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।


ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভোলায় ইতিমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহে ঢাকার বাইরে ২৪টি জেলায় ছয় হাজার ৬৫১ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রাজধানীতেও ডায়রিয়া পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। রোববার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৮৯৭ জন ভর্তি হয়েছে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে। সামনের দিনে গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং পানি-সংকটের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে সারা দেশেই পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ডায়রিয়া মোকাবিলায় এখনই সতর্কতা ও যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তাই অনস্বীকার্য।
দূষিত পানির কারণে ডায়রিয়া সাধারণত দ্রুত ছড়ায় এবং অত্যন্ত অল্প সময়ে মহামারি আকার ধারণ করে। অতীতে দেখা গেছে, ডায়রিয়া-মহামারির সময় রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালগুলোয় আক্রান্ত ব্যক্তির তুলনায় আসন ও চিকিৎসার সুযোগ পর্যাপ্ত নয়। রোগীর সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে বেড়ে গেলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এটি একটি জরুরি উদ্যোগ। কিন্তু ঢাকার বাইরেও অস্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র চালু করা এবং সরকারি হাসপাতালগুলোয় ডায়রিয়ার চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ আগে থেকে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।
ডায়রিয়ার বিস্তার যাতে রোধ করা যায়, এ জন্য নানা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। দূষিত পানি পান ও নানা কাজে ব্যবহার, পচা-বাসি খাবার খাওয়া ও নিরাপদ স্যানিটেশনের অভাব ডায়রিয়া বিস্তারে প্রধান ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে পানি ফুটিয়ে পান করা ও স্যানিটেশন বিষয়ে সচেতনতা তৈরির বিশেষ উদ্যোগ এখনই নেওয়া হলে পরিস্থিতির অবনতি অনেকটা রোধ করা সম্ভব হবে। ডায়রিয়া হলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা পূরণের জন্য খাওয়ার স্যালাইন খুবই জরুরি উপাদান। প্যাকেটজাত খাওয়ার স্যালাইনের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানিতে এক মুঠ গুড় ও এক চিমটি লবণ দিয়ে তৈরি স্যালাইনও একই রকম কার্যকর—এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে সবার কাছে। স্বাস্থ্য-সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাই বিশেষ উদ্যোগ ও প্রচারণা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.