রাজনীতির গতিপ্রকৃতি-ফিরিয়ে আনতে হবে স্থিতিশীল পরিবেশ

আবারও শুরু হলো হরতাল। আবারও গাড়ি পোড়ানো, ভাঙচুর। রাজধানীর অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ল সারা দেশে। ঘোষিত হবে নতুন কর্মসূচি। আবার হয়তো কোনো দুর্বিপাকে পড়তে হবে দেশের মানুষকে। অসহিষ্ণু রাজনীতির ঘেরাটোপে বন্দি এখন দেশের মানুষ। সরকারের অবস্থান অনড়।


বিরোধী দলও যেন যেতে চাইছে পয়েন্ট অব নো রিটার্নে। অনড় অবস্থানে থেকে সরকার বিরোধী দলকে চাপে রাখতে চায়। অন্যদিকে বিরোধী দলও সরকারকে বেকায়দায় ঠেলতে চায়। দুই পক্ষের এই রাজনৈতিক ঠেলাঠেলি দেশের সিংহভাগ মানুষকে রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণ করে তুলছে কি না, সেটাই এখন ভেবে দেখা দরকার।
আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হরতাল এখন একেবারেই গুরুত্বহীন। একসময় হরতাল রাজনীতিতে গতির সঞ্চার করত। কিন্তু এখন হরতাল এক অন্তহীন দুর্গতি। এখন হরতাল মানে অর্থনীতির চাকা থেমে থাকা। রুদ্ধ অগ্রগতির পথ। উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত। মানুষের অশেষ দুর্ভোগ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনহানি এবং এমনি আরো অনেক বিড়ম্বনা, যা সইতে হয় সাধারণ মানুষকেই। গণরায় নিলে অধিকাংশ নাগরিকের রায় যাবে হরতাল বর্জনের পক্ষে। উপর্যুপরি হরতাল ও নৈরাজ্যের কারণে হরতাল আরো বেশি গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। হারিয়েছে কার্যকারিতাও। হরতাল এখন আর কার্যকর রাজনৈতিক রণকৌশল নয়। যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন নেই, যে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধাগ্রস্ত হয় অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা- সে রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রতি স্বাভাবিক কারণেই সাধারণের নৈতিক সমর্থন থাকে না। এতে সরকারকে বিব্রত করা যায়; কিন্তু জনসমর্থন বৃদ্ধি পায় না। হরতালে বিরক্ত দেশের মানুষ। বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তি আবার নষ্ট হওয়ার পথে। এখন বিধ্বংসী নয়, উন্নয়নের সহায়ক রাজনৈতিক কর্মসূচি সম্পর্কে ভাবতে হবে।
দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা নতুন করে বহাল হওয়ার পর অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশ একটি স্থিতিশীল অবস্থার দিকে যাবে, এমনটিই আশা ছিল সবার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অতীতের ভুল থেকে কেউই শিক্ষা গ্রহণ করেনি। রাজনৈতিক দলগুলো সামান্য কারণে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক রণকৌশলটি ব্যবহার করছে। এমন অবস্থানে চলে যাচ্ছে, যেখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক বৈরিতা থেকে নতুন করে আবারও একটি তিক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হতে চলেছে বলে অনেকের আশঙ্কা। রাজনৈতিক দল পরমতসহিষ্ণু না হলে মতবিরোধ দেখা দেওয়াটাই স্বাভাবিক। এই মতবিরোধ যখন তীব্র আকার ধারণ করে, তখন সংঘাত ও সহিংসতা বেড়ে যায়। দেখা দেয় সংকট। এই সংকট গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ভূলুণ্ঠিত করে।
পরমতসহিষ্ণু না হয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো একগুঁয়েমি ও অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছে। একে অপরের কথা না শোনার ও মুখ না দেখার যে সংস্কৃতি চলে আসছে, তাতে গণতন্ত্র যে এখনো সংকটমুক্ত নয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না- এই নির্মম রাজনৈতিক সত্য এখন বোধ হয় বাংলাদেশের অনিবার্য ললাট লিখন। কেবল বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়, দেশের ভবিষ্যৎ কণ্টকমুক্ত করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। ঐকমত্য গঠন করতে হবে দেশ ও জাতির স্বার্থে। সহিংস ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির বদলে কল্যাণমুখী কর্মসূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে মানুষের কাছে যেতে হবে সুস্থ রাজনীতির স্বার্থে। খুঁজে বের করতে হবে বিকল্প। আসতে হবে সমঝোতায়।

No comments

Powered by Blogger.