নতুন বেসরকারি ব্যাংক-রাজনৈতিক বিবেচনাই কি প্রধান বিষয়

দেশে নতুন করে কয়েকটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত টেকেনি। নতুন ব্যাংকের জন্য আবেদন চাওয়া হলে ৩৭টি আবেদন জমা হয়। সেখান থেকে বাছাই করা হয়েছে ১৬টি আবেদন।


এই ১৬ ব্যাংকের তালিকা ও উদ্যোক্তাদের নাম প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এই ১৬টি আবেদনের ভেতর থেকে অন্তত অর্ধেক ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে বলে খবরে প্রকাশ। দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি মিলিয়ে মোট ৪৭টি ব্যাংক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর বাইরে লিজিং কম্পানি, বীমাসহ বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে নিজেদের ব্যবসা। বাংলাদেশের মতো একটি দরিদ্র ও পরনির্ভর অর্থনীতির দেশে এতগুলো ব্যাংকের যৌক্তিকতা অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশের অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরাও নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পক্ষে নন। ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা যে প্রতিষ্ঠানটির হাতে, সেই বাংলাদেশ ব্যাংকও এখন দেশে নতুন কোনো ব্যাংক চাইছে না। গত বছর যখন নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার কথা ওঠে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু এখন ৩৭টি আবেদনপত্র থেকে বাছাই করে ১৬টি আবেদনের বিস্তারিত বিবরণ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো থেকে অনুধাবন করা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ব্যাপারে প্রচুর চাপ সইতে হয়েছে। চাপে পড়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে যাচ্ছে। এই চাপের কারণে হয়তো যাচাই-বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম উপেক্ষিতও হতে পারে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের নভেম্বরে আবেদনের পর যে সময় প্রয়োজন তার অর্ধেক সময়ে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড মিটিংয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, কর বিভাগ থেকে মূল্যমান পুনর্নির্ধারণ করার সুযোগও দেওয়া হয়েছে। এসব থেকে রাজনৈতিক বিবেচনার বিষয়টি সবার সামনে প্রকট হয়ে ওঠে। আগেই বলা হয়েছে, গত বছর বাজেট পাসের সময় অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই সংসদে নতুন বেসরকারি ব্যাংকের দরখাস্ত আহ্বানের ঘোষণা দেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে- এমন কথাও শোনা গেছে অর্থমন্ত্রীর মুখে। নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে, দেশের অর্থনীতিতে এই ব্যাংকগুলো কী ভূমিকা রাখবে? নাকি রাজনৈতিক বিবেচনাই এই লাইসেন্স দেওয়ার প্রধান কারণ?
এমনিতে সরকারি ব্যাংকগুলোকে লিমিটেড কম্পানি করা হয়েছে। তাতে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনায় কতটা গতি এসেছে, সেটা সংশ্লিষ্টরাই বলতে পারবেন। এর বাইরে আছে বেশ কিছু বেসরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে কী ভূমিকা রাখছে, সেটাও বিচার্য বিষয়। এর পরও যদি এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় যে নতুন ব্যাংক নতুন উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড নিয়ে আসবে, পরিবর্তন আসবে গ্রাহকসেবায়- তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু নতুন ব্যাংক চালু হলে যদি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা শুরু হয়, তাতে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার দায় কে নেবে?
কাজেই নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার আগে রাজনৈতিক বিবেচনার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিবেচনাটাও করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.