রসকীয়-তেল দেবেন না, এমনকি গ্যাসও

পেট্রলপাম্পের সঙ্গে বাঙালির বেশ মিল আছে। দুটোই অন্যকে তেল দেয়। আসলে এই তেল দেওয়াটা রীতিমতো বাঙালির ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। আগে মানুষ ঠেকায় পড়লে অন্যকে তেল দিত। এখন তেল দেওয়াটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে অনেকে। বড়রা তো তেল দেয়ই, এমনকি শিশুরাও তেল দেওয়া শিখে গেছে।
না শিখে উপায় কী? আগে শিশুরা শিখত ‘ত’তে তরমুজ। এখন ছোটবেলাতেই তারা শেখে ‘ত’তে তেল! টিভিতে কার্টুন দেখার জন্য শিশু তেল দেয় মাকে। মাসের শুরুতেই পুরো বেতনের দখল নিতে মা তেল দেয় বাবাকে। নিজের বেতন এবং পদোন্নতির জন্য বাবা আবার তেল দেয় তার অফিসের বসকে। সংসার ঠিক রাখতে বস আবার তেল দেয় তার স্ত্রীকে। টিভি রিমোটের দখল নিতে স্ত্রী আবার তেল দেয় সন্তানকে। ওরে! কত তেল দেয় রে! একেই বলে তেলচক্র। এ জন্যই তেলের দাম তরতর করে বাড়ছে। ‘তেল দেওয়া’ শব্দযুগল শুনতে কেমন কেমন লাগে বলে অনেকে এর আপগ্রেড ভার্সন বের করেছে। ‘ছি! তুই বসকে তেল দিচ্ছিস’ না বলে অনেকেই বলে ‘ছি! তুই বসকে পাম দিচ্ছিস?’ অনেকে আবার আরও আধুনিক। তারা মনে করে, পাম মানে হাওয়া, আর হাওয়া মানেই গ্যাস। তারা সরাসরি বলে বসে, ‘বসকে গ্যাস দিয়া ফুলায় ফেলছি। প্রমোশন কে ঠেকাবি আয়!’ কিন্তু এ সবই প্রতারণা। নিজের স্বার্থের জন্য কেন অন্যকে তেল-গ্যাস-পাম দিতে হবে? তেল-গ্যাস না দিলে কেন প্রমোশনের ফাইল নড়বে না? ফাইলের তো আর ইঞ্জিন নেই। কর্তৃপক্ষ করছেটা কী? নিশ্চয়ই কেউ তাদের তেল-গ্যাস দিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছে। যা-ই হোক, আমি সবাইকে একটা কথা বলতে চাই। কথাটা আপনাদের তেল দিয়েও বলতে পারতাম। আপনাদের গ্যাস, অর্থাৎ হাওয়া মতান্তরে পাম দিয়েও বলতে পারতাম। কিন্তু আমি তা করব না। ভালো হয়ে গিয়েছি তো। তা ছাড়া আমি জানি, আপনারা খুবই ভালো। প্রত্যেকেই বড় মনের মানুষ। আর আপনাদের মতো ভালো পাঠকই হয় না। বিশ্বের সেরা পাঠকদের তালিকা করলে সেখানে সবার আগে আপনাদের নাম থাকবে। আপনারাই তো আমাদের অনুপ্রেরণা, আমাদের কাজ করার শক্তি। আপনারা না থাকলে শুধু রস+আলো কেন, পুরো পৃথিবীটাই অচল হয়ে যেত! তাই আপনাদের একটা অনুরোধ করছি। প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা গরু, ছাগল, মুরগি, ভেড়া পালন করবেন, দেশের কথা ভাববেন, কিন্তু দয়া করে কাউকে তেল-গ্যাস কিচ্ছু দেবেন না। রিকোয়েস্ট!

No comments

Powered by Blogger.