বিদ্যুৎ পরিস্থিতি-ভোগান্তির অবসান হোক

বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার পরও বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নাজুক। অথচ বিশাল অঙ্কের এই টাকার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অন্যদিকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের দামও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার তোয়াক্কা করছে না। বেড়েই চলেছে বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের এই ক্রমবর্ধমান মূল্য মানুষকে অসহনশীল পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।


চাহিদা আর উৎপাদনের ব্যাপক ফারাক ক্রমবর্ধমান লোডশেডিংকে অবশ্যম্ভাবী করে তুলছে। সংসদ সদস্যরা জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে তাদের সামনে যেতে পারছেন না। কারণ সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁদের জবাবদিহি করতে হবে তাদের কাছে। ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে হচ্ছে এই রাজনীতিবিদদের। বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চিন্তা করে তাই জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সোচ্চার হয়েছেন সংসদ সদস্যরা। বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের অনুপস্থিতিতেও জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট এই বিষয়টি সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই বিষয় নিয়ে শেষ পর্যন্ত সরকারি দলের সংসদ সদস্যরাই জোরালো গলায় কথা বললেন সংসদ অধিবেশনে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এই ধারা আমাদের আনন্দ দেয়। আমরা আশান্বিত হই জাতীয় সংসদের মতো প্রতিষ্ঠানে জনগণের কথা এভাবে উত্থাপিত হতে দেখে।
বিদ্যুতের উন্নয়নের গতি দেখে অবশ্যই সংসদ সদস্যদের সুরের সঙ্গেই সুর মেলাতে হয়। সরকারের তিন বছর গত হওয়ার পর এই মুহূর্তে সংগত কারণেই হিসাব করার সময় এসে গেছে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে। বলা হচ্ছে, এই সরকার তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে নতুন করে যোগ করতে পেরেছে। তাহলে এই বাড়তি বিদ্যুৎ গেল কোথায়? আগের বিদ্যুতের সঙ্গে এই তিন হাজার মেগাওয়াট যোগ হলে নিশ্চয়ই লোডশেডিংয়ের এই দুর্গতি থাকার কথা নয়। এটা সাধারণ মানুষের হিসাব মাত্র। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, আগের বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে- এটাও বিবেচনাযোগ্য। এমন পরিস্থিতিতে সেচ মৌসুম শুরু হয়েছে। গ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু গ্রামের চাহিদা আরো বাড়বে মার্চ মাসের শেষার্ধে। কারণ তখন জমিতে সেচ দেওয়ার পরিমাণ বেড়ে যাবে। এখনই প্রতিবার এক ঘণ্টা হারে তিন-চারবার লোডশেডিং হচ্ছে, সেচ পুরো মাত্রায় শুরু হলে লোডশেডিংয়ের অবস্থা যে কোন পর্যায়ে যাবে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। কিন্তু তার পরও গ্রামের চাহিদার কাছাকাছিও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এরও একটি উদাহরণ তোলা যায় জাতীয় সংসদে দেওয়া সংসদ সদস্যদের বক্তৃতা থেকেই। বরেন্দ্র প্রকল্পে সেচসুবিধা বাস্তবায়নের জন্য সাত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হওয়ার পরও সেখানে দেওয়া হচ্ছে মাত্র দুই মেগাওয়াট। ওই এলাকার সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের অধিবেশনে স্পষ্টভাবে বলেছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে সেখানকার তিন হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হবে। এমন অবস্থা দেশের প্রায় সর্বত্র। সুতরাং বিদ্যুতের এই ঘাটতি কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করবে। ফলে একদিকে ২০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করার কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে যেমন চাপ তৈরি করছে, তেমনি বিদ্যুৎ প্রয়োজনীয় পরিমাণ না পাওয়ার বিষয়টাও অর্থনীতিকে আঘাত করছে। জাতীয় স্বার্থেই এই দুরবস্থা দূর করতে হবে। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাগুলো চালু রেখে দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা যায় এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.