নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হোক-সংসদের মেয়াদ বাড়ল

শুক্রবারের প্রথম আলোয় খবর বেরিয়েছে, আগামী সংসদ নির্বাচন কী ধরনের সরকারব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে আলোচনার পথ খুঁজছে সরকার ও বিরোধী দল। এর একটা সম্ভাব্য পথ হিসেবে বিরোধী দল বিএনপি জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনে যোগ দিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পেশ করতে পারে। এই আভাস পেয়ে চলতি অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে বলে খবরে জানানো হয়।


এর লক্ষ্য যদি হয় রাজনৈতিক আলোচনায় বিরোধী দলকে যুক্ত করা, তাদের মতামত শোনা ও বিবেচনা করা—তাহলে বলতেই হয়, সরকারপক্ষের সুমতি হয়েছে। একইভাবে বিরোধী দলও যদি গঠনমূলক মানসিকতা থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কার্যকর করতে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসে, তবে সেটাও হবে সুখের বিষয়। কিন্তু এর মধ্যে বিরোধী জোট ১২ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে; সেই কর্মসূচি সফল করার প্রস্তুতি ও প্রয়াসে তারা এখন ব্যস্ত; নইলে এখনই কেন সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়া নয়? তাদের পক্ষ থেকে এমন আভাস দেওয়া হচ্ছে, সংসদ অধিবেশন ১৩ মার্চ পর্যন্ত চললে তারা তাতে যোগ দেবে।
১২ মার্চের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল ও সরকারি দলের মধ্যে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের যে প্রতিযোগিতা লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে অনেকেই শঙ্কা বোধ করছেন। ইতিমধ্যে সরকারি দল আওয়ামী লীগও নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে; ৭ মার্চ ঢাকায় বিশাল শোভাযাত্রা করেছে, আগামী ১৪ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সমাবেশ ডেকেছে। শক্তি-সমাবেশের এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে সরকার ও বিরোধী পক্ষের বিরোধ আরও প্রকট হয়েছে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, তাদের মহাসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে তাদের কর্মীদের গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে, গাড়ি ভাড়া না দিতে পরিবহন-মালিকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলো ও মেসবাড়িগুলোয় অভিযান চালানোসহ নানা তৎপরতা সরকারের লোকেরা চালাচ্ছেন। অন্যদিকে সরকারের একাধিক মন্ত্রী ১২ মার্চ বিরোধী জোটের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য, ‘সরকারই নাশকতা সৃষ্টি করে তার দায়দায়িত্ব বিএনপির ওপর চাপাবে।’
দুই পক্ষের এসব কথাবার্তা সুস্থ, স্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিবেশের লক্ষণ যে নয়, তা সবাই জানে এবং সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী রূপ পেতে পারে, তা নিয়ে জনসাধারণের শঙ্কা-উদ্বেগের বাস্তব কারণ রয়েছে। এ অবস্থায় বিরোধী দল সংসদে যোগ দিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী হলে এবং সরকারি পক্ষও নির্বাচনকালীন সরকারের গঠনপদ্ধতি নিয়ে আলোচনায় রাজি হলে তা দেশবাসীর জন্য সুসংবাদই বটে। আমরা চাই, জাতির স্বার্থে নেতিবাচক ও সংকীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থবোধ থেকে মুক্ত হয়ে উভয় পক্ষে গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও দায়িত্বশীল আচরণের মানসিকতার প্রকাশ ঘটুক। বিদেশি কূটনীতিকদের দূতিয়ালির চাপে নয়, দেশের জনসাধারণের আশা-প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়েই উভয় পক্ষের শুভবোধের উদয় হওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.