শিউলি ঝরল বাসায় তোতা ট্রেনের নিচে

স্ত্রী বাসায় ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছেন। আর তা সইতে পারেননি তাঁর জীবনসঙ্গী। স্ত্রীর এই অপমৃত্যুর সামান্য সময়ের ব্যবধানে নিজেও ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা থানার মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায়।


অকালে হারিয়ে যাওয়া এই দম্পতির তিতুমীর ইসলাম (৫) নামে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
পুলিশ গতকাল মধ্যরাতে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার তালতলা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে স্ত্রী শিউলি বেগমের (৩০) লাশ উদ্ধার করে। একই সময়ে কমলাপুর জিআরপি থানা পুলিশ স্বামী রফিকুল ইসলাম তোতার (৪০) লাশ উদ্ধার করে মালিবাগ লেভেল ক্রসিং এলাকার রেললাইন থেকে।
এ ঘটনার নেপথ্য কারণ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে আর কিছু জানাতে পারেননি স্বজন, পুলিশ ও এলাকাবাসী। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মৃত্যুর কারণ ও সার্বিক বিষয় যাচাই করে মামলা দায়ের করা হবে।
গতকাল রাত ১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে রামপুরা থানার উপপরিদর্শক বজলুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া ও তালতলা এলাকার মধ্যবর্তী বি-ব্লকের ২৭৩/বি নম্বর হোল্ডিংয়ের পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তিন কক্ষের বাসায় ভাড়া থাকতেন শিউলি-তোতা দম্পতি। ছয় মাস আগে তাঁরা এই ভাড়া বাসায় ওঠেন। তোতা অ্যামব্রোই নামে একটি তৈরি পোশাক কম্পানিতে চাকরি করতেন। শিউলি ছিলেন গৃহিণী। তোতার ছোট ভাই মনিরুল ইসলামও স্ত্রী নিয়ে একই বাসায় থাকেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বজলুর রহমান জানান, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাসার শোয়ার ঘরে ফ্যানের সঙ্গে গলায় প্লাস্টিকের রশি জড়িয়ে ফাঁস দেন শিউলি বেগম। তোতা ওই সময় বাসায় ছিলেন না। কিছু সময় পর বাসায় এসে কক্ষের দরজা বন্ধ দেখেন। এ সময় তিনি স্বজন ও বাড়ির অন্য বাসিন্দারের নিয়ে দরজা ভেঙে শিউলিকে উদ্ধার করেন। স্বজনরা শিউলিকে তাৎক্ষণিক মালিবাগের শাফিন হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা জানান রোগী ইতিমধ্যে মারা গেছেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর আর বাসায় ফেরেননি তোতা। স্বজনরা শিউলির লাশ নিয়ে বাসায় যান। রাত ১টার দিকে বাসা থেকে লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল।
এদিকে কমলাপুর রেলওয়ে থানার সহকারী উপপরিদর্শক মনোয়ার হোসেন রাত পৌনে ১টার দিকে কালের কণ্ঠকে জানান, রাত ১০টার দিকে মালিবাগ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন তোতা। ট্রেনের চাকায় তাঁর শরীর কোমর থেকে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। রাতে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিউলির গলায় ফাঁসের দাগ ছাড়া আর কোনো চিহ্ন প্রাথমিকভাবে দেখা যায়নি। কী কারণে শিউলি আত্মহত্যা করেছেন তা-ও বলতে পারছেন না স্বজনরা। পারিবারিক কোনো বিষয়ে সমস্যা ছিল কি না সে ব্যাপারেও মুখ খুলছে না কেউ। তবে স্বজনরা জানিয়েছেন, সংসারে আর্থিক সমস্যায় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হতো। গতকাল রাতে কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না সে ব্যাপারে মুখ খুলছেন না কেউ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্ত, আলামত ও স্বজনদের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে মামলা দায়ের করা হবে।
গতকাল মধ্যরাতে তোতা-শিউলি দম্পতির বাসায় উৎসুক এলাকাবাসী ভিড় করেন। 'দুটি তাজা প্রাণ এভাবে চলে গেল কেন? শিশুটির এখন কী হবে?' এমন উৎকণ্ঠা জড়ানো প্রশ্ন ছিল সবার মুখে। জানা গেছে, তোতার বাবার নাম আবদুর রশিদ মোল্লা। গ্রামের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলায়।

No comments

Powered by Blogger.