সীমান্তে ফের খুনির ভূমিকায় বিএসএফঃ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জরুরি


আবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশী। সীমান্তে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য সমস্যা নিয়ে এর আগে যেসব সমঝোতা বৈঠক হয়েছে সেগুলোর কোনোটিই যে ফলপ্রসূ হয়নি এই হত্যাকাণ্ড তার আরেকটি জ্বলন্ত প্রমাণ। সীমান্তে রক্তপাত বন্ধ হয়নি, বন্ধ হয়নি মাদকদ্রব্যসহ অন্যান্য চোরাচালানি।
এবারের হত্যাকাণ্ডে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। এবার শুধু গুলি করে নয়, একজনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। সীমান্তে এ পর্যন্ত যারা বিএসএফের হাতে জীবন দিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই নিরীহ কৃষক এবং গরু ব্যবসায়ী। এমনকি ক্ষেতে কাজ করার সময় বিনা উস্কানিতে বিএসএফ কৃষি শ্রমিকদের হত্যা করেছে। বিদ্যমান সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ঢাকায় বিডিআর-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকসহ বার বার দ্বিপাক্ষিক পতাকা বৈঠক হলেও হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে গেছে। ফের প্রমাণ হলো মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের কোনো তোয়াক্কাই করছে না বিএসএফ।

১০ জানুয়ারি প্রকাশিত খবর অনুসারে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে এক বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। মনকষা ইউনিয়নের তারাপুর মোল্লাপাড়া গ্রামের জনৈক কৃষক সীমান্তের কাছে গরু আনতে গেলে গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ৯ জানুয়ারি বেনাপোলের গোগা সীমান্তে বিএসএফের প্রহারে প্রাণ হারান এক গরু ব্যবসায়ী। পরে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় বনগাঁও পুলিশ।
প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালে বিএসএফ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তে ৩৯ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে ২৭ জন ছিলেন গরু ব্যবসায়ী। অভিযোগ রয়েছে, এদের অন্তত ২০ জনকে মারা হয়েছিল ইলেকট্রিক শক দিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে। গত বছর ১৫ নভেম্বর মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এ বছর পহেলা জানুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে দশ মাসে ৯১ জন বাংলাদেশী নিহত হন বিএসএফের হাতে। ২০০১ সাল থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের হাতে খুন হয়েছেন ৮২১ জন, আহতের সংখ্যা ৮৫৮ এবং অপহৃত হন ৯০৩ জন। অন্য এক তথ্য মতে, ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই পর্যন্ত সাড়ে নয় বছরে বিএসএফ ৭৯২ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। চলতি বছর জুন মাসে বেনাপোল সীমান্তে দু’দিনের ব্যবধানে ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৪ জনকে।
সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলে কথা রাখছে না। ঢাকা বৈঠকে বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে ‘জিরো টলারেন্স’ পদ্ধতি অবলম্বনের ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন করেননি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিএসএফ তাদের অপতত্পরতা আরও বেগবান করছে, যা মর্যাদাপূর্ণ সহবস্থানের অনুকূল নয়। তবে যে কোনো বিবেচনায় সীমান্তে খুন-খারাবির দায়দায়িত্ব ভারতের উপরেই বর্তায়। এ ব্যাপারে আমাদের উচিত অশান্ত সীমান্তে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ে কূটনৈতিক তত্পরতা জোরদার করা এবং নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে নিরাপত্তামূলক কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা। শান্তির জন্য শক্ত পদক্ষেপের বিকল্প আপাতত নেই বলেই মনে হচ্ছে। সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকসহ দফায় দফায় পতাকা বৈঠকের নিষম্ফল আয়োজন যে কোনো ফল বয়ে আনবে না তা ইতোমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে। কাজেই হাঁটতে হবে অন্য পথে। এজন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং হত্যার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবির প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। কেননা, বিএসএফ ইচ্ছাকৃতভাবে যে সমস্যার সৃষ্টি করছে তাকে এখন আর নিছক সীমান্ত সমস্যা হিসেবে ধরে নেয়ার অবকাশ নেই। ফলশূন্য বৈঠকও নিষ্প্রয়োজন। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরে নির্ধারিত ইস্যুসহ সীমান্তে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি রক্ষার পাশাপাশি বিএসএফের বেআইনি হত্যাকাণ্ড বন্ধে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জরুরি।

No comments

Powered by Blogger.