ডেটলাইন ১২ মার্চ-বিএনপির হুঁশিয়ারি মহাসমাবেশ হবেই

ক্ষমতাসীন দলের হুমকি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ি সত্ত্বেও ১২ মার্চের মহাসমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে সমাবেশ নিষিদ্ধ করার যে আহ্বান জানানো হয়েছে তাকে 'রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা' বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির নেতারা।


সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তাঁরা বলেছেন, তিন লাখ র‌্যাব-পুলিশ নামিয়েও মহাসমাবেশ বন্ধ করা যাবে না। ক্ষমতার জোরে সমাবেশ বানচাল করলে সরকারের জন্য তা শুভ হবে না। মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। দেশে গণ-অভ্যুত্থানের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
সারা দেশের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতি ১২ মার্চের মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'ভয়-ভীতি, বাধা উপেক্ষা করে সারা দেশ থেকে দল-মত নির্বিশেষে আপনারা ঢাকায় এসে মহাসমাবেশে যোগ দিন।' সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'এ কর্মসূচিতে আঘাত এলে তা হবে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। বাধা দিয়ে, সংঘাত ডেকে কিংবা নাশকতা করে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করবেন না। এর পরিণাম শুভ হবে না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে না দিলে আগামীতে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না।' পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি তিনি সংঘাত, সংঘর্ষ, উসকানি এড়িয়ে যেকোনো মূল্যে শান্তি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ১২ মার্চ শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করার মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে। রাজনীতির একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে এ সমাবেশ। এ জন্যই সরকার নানা রকম গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা করছে। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে মানুষ ঢাকার সমাবেশে যোগ দিতে আসবে। তিন লাখ র‌্যাব-পুলিশ নামিয়েও মহাসমাবেশ বন্ধ করা যাবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, মূলত সরকার ভয় পেয়েই সমাবেশ বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। শেষ পর্যন্ত যদি সরকার সমাবেশ বন্ধ করেই দেয় তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গণজোয়ার উঠেছে বলেই সরকার ভয় পেয়ে সমাবেশ নিষিদ্ধ করার কথা বলছে। সরকার পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চায়। প্রশাসন ও এজেন্সি ব্যবহার করছে তারা।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'নাশকতা বিএনপি করবে না, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা নাশকতা করে বিএনপির ওপর দোষ চাপাতে চায়।' শেষ পর্যন্ত সমাবেশ বন্ধ করে দেওয়া হলে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার নির্দলীয় সরকার গঠনের দাবি মেনে না নিলে এক দফার আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে বিএনপি।
গত ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডের জনসভা থেকে খালেদা জিয়া 'চলো চলো ঢাকা চলো' স্লোগান নিয়ে ১২ মার্চ ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গত ২৯ জানুয়ারি ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরে গণমিছিল কর্মসূচি ছিল। ২৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সমাবেশ আহ্বান করায় শেষ পর্যন্ত গণমিছিল নিষিদ্ধ করে দেয় ডিএমপি। পরদিন গণমিছিল করে বিএনপি। গণমিছিল শান্তিপূর্ণ হলেও এবারের মহাসমাবেশ নিয়ে নাশকতার আশঙ্কা করছে সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা। ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়া নিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। সে ধরনের কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় কি না সে সন্দেহ করছে প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা। অন্যদিকে ১২ মার্চ রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে সহিংসতা এড়াতে ১২ মার্চের মহাসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ। ১২ মার্চের কর্মসূচিতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হবে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যে প্রমাণ হয়, তাঁরা সমাবেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে দেশে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান।
বিএনপির অভিযোগ, ১২ মার্চের সমাবেশ সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। নয়াপল্টনসহ আশপাশের এলাকার হোটেলগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। সরকারি-বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। রাজধানীসহ সারা দেশে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করা হয়েছে। তল্লাশির নামে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। মন্ত্রীরা নানা রকম উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সরকারি দল মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তারা অবস্থান নেবে এবং বিরোধী দলের ২০ জনের বেশি কর্মী দেখলে ধাওয়া দেওয়া হবে।
এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বিএনপি এবং তার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলো প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে। সমাবেশ সফল করার জন্য গতকালও বিএনপির সিনিয়র নেতারা আলোচনা ও মতবিনিময় সভা করেছেন। শরিক দল ও সমমনা দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সমাবেশ সফল করার ব্যাপারে নেতাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে গতকাল সন্ধ্যায় এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। মহানগর বিএনপির ওই সভায় মির্জা ফখরুল উপস্থিত ছিলেন। এদিকে আন্দোলন-সংগ্রামে বিকল্পধারাকেও সঙ্গে নেওয়ার জন্য ওই দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন বিএনপি নেতারা। সমাবেশ থেকে চারদলীয় জোট সম্প্রসারণের ঘোষণার পাশাপাশি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। আলটিমেটাম কত দিনের হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে আজ শনিবার রাতে জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবেন খালেদা জিয়া।

No comments

Powered by Blogger.