যে খবর নাড়া দেয়-‘আমার বউ কাজ করে না’

দুটো ওজনদার ইট ইতিমধ্যে তুলে নিয়েছেন মাথায়। দাঁতে দাঁত চেপে আরও গোটা দুই ইট মাথায় তুলে নিতে চলেছেন অবলীলায়। হ্যাঁ, এমন কায়িক পরিশ্রম সাধারণত পুরুষদেরই করতে দেখি আমরা। অথবা আমাদের গতানুগতিক চোখ এমনভাবেই দেখতে ভালোবাসে।


কিন্তু ছবিটাই পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, কায়িক শ্রম কেবল ‘পুরুষদের কাজ’—এমন ধারণা কতটা ভুল। বহুদিন আগে, কোনো একটি বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়ে দেখা একটি পোস্টার চোখে ভাসে। যেখানে পুরুষটি বলছে, ‘আমার বউ কোনো কাজ করে না।’ অথচ আমরা পোস্টারের ছবিতে দেখতে পাই, স্ত্রীটির মা দুর্গার মতোই অনেকগুলো হাত। এক হাত দিয়ে তিনি ছেলেমেয়েদের দেখভাল করছেন। একটি হাতে উঠোন ঝাড় দিচ্ছেন। আরেক হাতে তিনি রান্নাবান্না করছেন। ধান ভানছেন একটি হাত দিয়ে। পোষা মোরগ-মুরগির খাবার দিচ্ছে আরেকটি হাত।
একজন নারী, এমনকি যিনি স্রেফ ঘরকন্নার কাজ করেন, তাঁকেও কত কাজ করতে হয়—এর একটা তালিকা কি পাওয়া যাচ্ছে?
নারীর এই এত শত কাজের মূল্যায়ন হয়েছে খুব কমই। ‘আমার বউ কোনো কাজ করে না’ কথাটি আসলে নারীর অবদানকে উপেক্ষা করে আসার ঐতিহ্যেরই অনিবার্য ফল।
নারী দিবসে প্রথম আলোয় প্রকাশিত ওই ছবিটিতে ফিরে যাই। খাগড়াছড়ির এসব নারী নিশ্চিতভাবেই শুধু ইটভাটার কাজ করেন না। ফিরে গিয়ে ছেলেমেয়ে দেখাশোনার কাজটিও হয়তো করতে হবে তাঁদেরই। পরিশ্রমী নারীদের এই ছবি অন্তরে বাজল। কারণ, ছবিটি আসলে নারী আর পুরুষের কাজ সম্পর্কে আমাদের গৎবাঁধা ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, মেয়েরা কেবল ঘরকন্নার কাজ করে—এ কথাটা কতটা অসাড় এই যুগে। অভিনন্দন আর শুভকামনা খাগড়াছড়ির এসব পরিশ্রমী নারীকে। সঙ্গে এও আশা করি, নিজেদের এই হাড়ভাঙা খাটুনির উপযুক্ত পারিশ্রমিক তাঁরা পাবেন এবং সেটি কোনোভাবেই তাঁর সহকর্মী পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে কম হবে না। —ইকবাল হোসাইন চৌধুরী

No comments

Powered by Blogger.