এক রামে রক্ষা নাই by আসিফ আহমেদ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তির জন্য এবারে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তির জন্য আবেদনের ফি বাড়িয়েছে। বৃদ্ধির পরিমাণ ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। বুধবার ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে 'ভর্তি পরীক্ষার বর্ধিত ফি প্রতিরোধে শিক্ষার্থীবৃন্দ'_ এই ব্যানারে একটি মিছিল হয়েছে।


প্রকৃতপক্ষে যারা ভর্তি হতে ইচ্ছুক তাদের এ মিছিলে অংশগ্রহণের সুযোগ খুব কম। কারণ তাদের অনলাইনে আবেদনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হওয়াজনিত নানা ব্যয় বহন করতে হবে না। অতীতে এজন্য অনেক ছাত্রছাত্রীকে অভিভাবক কিংবা পরিচিত কাউকে সঙ্গে নিয়ে আসতে হতো। ছাত্রীদের জন্য সমস্যা অনেক বেশি। দূরের কোনো গ্রাম থেকে এলে এর মাত্রা বেড়ে যেত। এখন তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তার দরকার পড়ে না। ফলে ব্যয় সাশ্রয় হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও ব্যয় কমে যাওয়ার কথা। তারপরও কেন তারা আবেদনপত্র জমা নেওয়ার জন্য ফি বাড়াল, তার ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার ছিল। এমনিতে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা ব্যয় একেবারেই কম। এখনও মাসে ২০-৩০ টাকাতেই পড়াশোনা করা চলে। একজন শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে একদিনের খরচও এর চেয়ে বেশি হয়। ঢাকা কিংবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ অনেক শিক্ষার্থীকে বছরে এক লাখ টাকা কিংবা অনেক বিভাগের জন্য তারও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হয় তারা বছরে এর দশ ভাগের এক ভাগও চার্জ দিতে রাজি থাকে না। এমন মনস্তত্ত্বের ব্যাখ্যা দুরূহ বৈ কি। এখন পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের একাডেমিক প্রোফাইল অনেক ভালো বলেই জানি এবং এ কারণে তাদের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পেতে চায়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সাধারণভাবে মনে করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন কোনোভাবেই কয়েক দশক আগে নির্ধারিত ফি-চার্জ না বাড়ায়। এর ফলে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা কতটা লাভবান হয়, তাতে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মধ্যবিত্ত-উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর সন্তানরাই বেশি পড়ার সুযোগ পাচ্ছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ যারা করেছে তাদের মধ্যে কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিল। আর যারা কর্তৃপক্ষের পক্ষে দাঁড়িয়েছে তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুব সংগঠন যুবলীগ। ছাত্রলীগ কি ভর্তিচ্ছু সেসব ছাত্রছাত্রীর পক্ষে এসেছিল, যারা মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে? নাকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো অংশ তাদের প্ররোচনা দিয়ে মাঠে নামিয়েছে? ছাত্রলীগের কর্মতৎপরতায় এলাকার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে এবং তারা সক্রিয় হতেই পারে (লাঠি হাতে পারে কি-না, সেটা অবশ্য প্রশ্নসাপেক্ষ)। কিন্তু যুবলীগ এলো কীভাবে? ক্যাম্পাসে তাদের আসার কথা নয়। তারা কাদের পক্ষে মাঠে নেমেছিল? রাজশাহীতে অনেক বছরে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। কিন্তু এখন তারা বিতাড়িত। এ অবস্থায় ছাত্রলীগের সামনে সুযোগ ছিল ছাত্রছাত্রীদের বল্পুব্দ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরার। কিন্তু তারা সেটা পারছে_ এমন লক্ষণ নেই। এমন আগ্রহ রয়েছে বলেও মনে হয় না। তারা প্রতিপক্ষের মিছিলে হামলা চালিয়েছে। ছাত্রশিবিরের অপকর্মের বিরুদ্ধে এসব ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের তারা পাশে পেয়ে থাকে। কিন্তু যখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করল তারা (এ প্রতিবাদ ন্যায্য নাও হতে পারে), তখন তা সহ্য করার মতো গণতান্ত্রিক মানসিকতা ছাত্রলীগ দেখাতে পারেনি। এমনও হতে পারে যে, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের আচরণের পেছনে উস্কানি ছিল এবং তা এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যুক্ত কারও কারও দিক থেকে। সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এটা অশনিসংকেত। গণতন্ত্রের জন্যও অশুভ লক্ষণ। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের (দেশের এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের) তা নিয়ে ভাববার অবকাশ কোথায়?
 

No comments

Powered by Blogger.