জাতীয় কবিতা উৎসব- কবিতা শোণিতে স্বপ্নের ধ্বনিতে

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার: কবিতা জ্ঞান, ভালবাসা ও শিল্পের খেলা। কবি ও কবিতার সংগ্রাম মানুষের মুক্তির সংগ্রামের সহযাত্রী। এরা সব ভেদরেখা অতিক্রম করে, সুখে-দুঃখে, আনন্দে-বেদনায় ও সঙ্কটে-সংগ্রামে আপন হয়ে ওঠে সকল দেশের, সকল কালের মানুষের কাছে। কবিতার জীবন সবসময় সত্য ও ন্যায়ের ভিতরেই প্রতিপালিত হয়। এভাবেই কবিতা নিয়ে কবিরা তাদের স্বপ্নের কথা বলেছেন হাজারো কবিদের মিলনমেলায় গতকাল থেকে শুরু হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে ২ দিনব্যাপী জাতীয় কবিতা উৎসবে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে শৃঙ্খল মুক্তির ডাক দিয়ে যে কবিতা উৎসবের শুরু ১৯৮৭ সালে, কালের পরিক্রমায় সে উৎসব পঁচিশ বছর অতিক্রম করেছে। অমর একুশের ষাট বছর এবং মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পূর্তির মধ্য দিয়ে এবারের কবিতা উৎসব চিরায়ত একুশ ও একাত্তরের অমলিন ব্যঞ্জনার সঙ্গে নবতর এক চেতনায় অভিষিক্ত। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের হাজারো কবির পদচারণায় গতকাল মুখরিত হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। নবীন-প্রবীণ কবিদের মিলনমেলায় যুক্ত হয়েছিল বিভিন্ন পেশার মানুষও। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও আলোড়িত হয়েছিল কবিতার ছন্দে। সকাল ১০টায় র‌্যালি ও জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধি ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি। এরপর কবিতা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। একুশের গান ও উৎসব সংগীত পরিবেশনের পরে শুরু হয় মূল পর্বের অনুষ্ঠান। এ পর্বে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ। এরপর একে একে যুগ্ম আহ্বায়ক, আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক, উদ্বোধক ও সভাপতি ভাষণ দেন। এ সময় তারা বলেন, এ দেশের প্রতিটি আন্দোলনে কবি, শিল্পী-লেখকদের অবদানের তুলনা নেই। বাংলাদেশের কবিরা যে মর্মবাণী উচ্চারণ করেছেন তাই বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর হিসেবে উচ্চারিত হয়েছে। কবিরা গণতান্ত্রিক সমাজ-রাষ্ট্র-জাতি গঠনের স্বপ্ন দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে কালে মহাকালে ছড়িয়ে দিতে জীবনপাত করেন। উদ্বোধনী বক্তব্য জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা সৈয়দ শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশের এক বিরূপ বিরুদ্ধ সময়ে কবিরা সংগঠিত হয়েছিলেন, জাতীর কণ্ঠস্বর সেদিন তারা ভাঙনের স্তূপে দাঁড়িয়ে নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, কবিতা আমাদের স্থানচ্যুত করে। ক্ষণকালের জন্য হলেও কবিতা আমাদের জাগ্রত করে। ঈষৎ হলেও কবিতা আমাদের উন্নত করে। কবিতা আমাদের আপনাকেই চিনিয়ে দেয়। তিনি সকল কবিকে কবিতাকে আত্মবোধনের উপায় হিসেবে জানার আহ্বান জানান। সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বাংলাদেশ এবং বাংলাভাষা যেমন হৃদয়ে ও জিহ্বায় সমার্থক তেমনি কবিতা এবং বাঙালি দুই চোখের মিলিত এক ধারা। এ ধারায় যুক্ত হয়ে আছে যাপনের ক্লান্তি, উত্তরণের সঙ্কট এবং অবগাহনের আনন্দ। বেদনার অনন্দের নাম কবিতা। প্রেমের শুদ্ধ বানান কবিতা। কবিতার অলৌকিক আবাহনের মধ্য দিয়ে আজ আমরা মিলিত হয়েছি এ উৎসবে, ২৬ বছরের সাফল্য বিহারে। এ বছরের কবিতা উৎসবে যোগ দিয়েছেন ভারতের পশ্চিম বঙ্গের উত্তম দাস, আশিস সান্যাল, দীপক লাহিড়ী, শাকিল আহমেদ, ত্রিপুরা থেকে রাতুল দেব বর্মণ, আকবর আহমেদ, আসাম থেকে তপোধীর ভট্টাচার্য, মণিপুর থেকে রাজকুমার ভুবনস্না, স্পেন থেকে জার্মেন ড্রুগেনব্রুন্ট, পাকিস্তান থেকে সৈয়দ জায়গাম জাফরীসহ বিভিন্ন দেশের বিপুলসংখ্যক কবি। এ অনুষ্ঠানে ৪ পর্বে অনুষ্ঠিত হয় কবিতা পাঠ। এতে বিভিন্ন পর্বে সভাপতিত্ব করেন কবি বেলাল চৌধুরী, শিহাব সরকার, মুহাম্মদ নূরুল হুদা, রফিক আজাদ এবং আবৃত্তি পর্বে সভাপতিত্ব করেন আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত কবিরা তাদের স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি আসাদ চৌধুরী, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। কবিতা উৎসবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কবি আবুল হোসেন, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, বেলাল চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ প্রমুখ। আজ কবিতা উৎসবের দ্বিতীয় দিন। দুই পর্বের সেমিনার, কবিতা পাঠ, পুরস্কার ঘোষণা ও কবিতার গান দিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের পর্ব।

No comments

Powered by Blogger.