বরিশাল মেডিকেল-চিকিৎসাসেবার সঙ্গে দায়িত্ববোধ

বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ম অনুযায়ী দিনে-রাতে দু'বার ওয়ার্ড ভিজিট বাধ্যতামূলক করে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নোটিশ জারি করতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, হাসপাতালে কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় চিকিৎসকদের পেশাগত পোশাক পরাও বাধ্যতামূলক হচ্ছে।


গত শুক্রবার সমকালের ১৯তম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এ সম্পর্কিত রিপোর্টে মেডিকেল কলেজটিতে চিকিৎসার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেবার অভাবটি প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। এখানে সিনিয়র চিকিৎসকদের কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টি খাটো করে দেখার উপায় নেই। তাদের দিনে-রাতে দু'বার ওয়ার্ড ভিজিট করা কর্তব্যের মধ্যে পড়লেও তারা দিনে একবার গিয়েই দায়িত্ব শেষ করেন। বাদবাকি সময় তারা নিজস্ব চেম্বারেই অর্থের বিনিময়ে রোগী দেখার কাজটি করে থাকেন। তদুপরি ওয়ার্ড ভিজিট করার সময় চিকিৎসকদের কয়জনার মধ্যে সেবার মনোভাব কাজ করে সে ব্যাপারেও সন্দেহ রয়েছে। এসব কারণেই সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীরা সুচিকিৎসা পান না বলে অভিযোগ ওঠে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যদি রাতে ওয়ার্ড ভিজিট না করেন, তাহলে গুরুতর কোনো রোগীর জরুরি সঠিক চিকিৎসা প্রদান অনেক সময় সম্ভব হয় না। এতে রোগীর জীবন সংশয় থেকে রোগ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দেশের প্রায় সর্বত্রই তাদের কর্তব্যকর্ম যথাযথভাবে সম্পাদন না করে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে অধিক সময় ব্যয় করেন। এতে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার ওপর মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। বাড়ছে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ব্যয়বহুল সেবার প্রতি আগ্রহ। এভাবেই একশ্রেণীর চিকিৎসক চিকিৎসাসেবাকে পুরোপুরি বাণিজ্যিকীকরণে সহায়তা করছেন। এতে গরিব মানুষ উন্নত ও উপযুক্ত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা অনেক সময় সাধারণ পোশাকে ডিউটি করে থাকেন। এতে কে চিকিৎসক আর কে দর্শনার্থী এর পার্থক্য নির্ণয় করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এর মাধ্যমে মূলত চিকিৎসকদের মধ্যে সিরিয়াসনেসের অভাব প্রতীয়মান হয়। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ম অনুযায়ী দিনে-রাতে দু'বার ওয়ার্ড ও ইউনিট ভিজিট করা বাধ্যতামূলক করে ব্যবস্থাপনা কমিটি যে নোটিশ জারি করতে যাচ্ছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের কর্তব্য পালনের সময় পেশাগত পোশাক পরা তাদের পেশার মর্যাদার স্বার্থেই প্রয়োজন। তবে সিদ্ধান্তটি যাতে যথাযথভাবে পালিত হয় তার প্রতিও নজর রাখতে হবে। বরিশাল মেডিকেল কলেজের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে দেশের সব সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে দেশের সাধারণ মানুষ সরকারি চিকিৎসাসেবার প্রতি আস্থাবান হয়ে উঠবে।
 

No comments

Powered by Blogger.