পাহাড় কেটে ময়দার মিল! by নির্মলেন্দু রায়

আমাদের দেশে পাহাড়-পর্বতের সংখ্যা এমনিতেই কম। শুধু দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোই পাহাড়বেষ্টিত। আশির দশক থেকে অনেক জেলাতেই আবার জমি নিয়ে দখল-বেদখলকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি-বাঙালি অশান্তি লেগেই আছে।


এখন যদি এক এক করে পাহাড়গুলোকে কেটে দখল করে তার জায়গায় অট্টালিকা কিংবা ময়দার মিল তৈরি করা হয়, তাহলে তো দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশই অশান্ত হয়ে উঠবে। জঙ্গল লতিফপুর এলাকার পাহাড় কেটে ময়দার মিল তৈরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক সাইফুল আশ্রাব 'পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫'-এর ৪ (১,২,১২) ধারায় মামলা করেন এবং মামলাটি এখনও তদন্তাধীন। তারপরও কেন পাহাড়গুলো বিলীন হয়ে গেল এটিই দুর্ভাবনার বিষয়।
আমাদের মনে রাখা দরকার, কিছু কিছু প্রাকৃতিক সম্পদ আছে যা অনবায়নযোগ্য। অর্থাৎ একবার শেষ হলে সেগুলো আর ফিরে পাওয়া যায় না। তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদের মতো পাহাড়ও অনবায়নযোগ্য সম্পদ। এ সম্পদগুলোর ব্যবহারে যেমন হিসাবি হতে হয়, তেমনি এগুলোর ক্ষতি বা ধ্বংস সাধনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। সমতল ভূমিতে অট্টালিকা বা কারখানা সবকিছু তৈরি করা যায়। কিন্তু পাহাড় তো আর তৈরি করা যায় না। লাখো কোটি বছর ধরে ভূতাত্তি্বক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগুলো উৎপত্তি লাভ করে। এসব প্রাকৃতিক সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যারা নিয়োজিত আছেন, তাদের অবহেলা বা অন্য যে কোনো কারণে এগুলোর ক্ষতিসাধনে এর দায়দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায় কি-না জাতির কাছে তারাই জবাব দিক। আর যারা প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করছেন এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন, সেসব কুচক্রী মহলের মুখোশ যদি একবার খুলে দেওয়া যেত, তাহলে জলাভূমি দখল থেকে শুরু করে বনাঞ্চল বা পাহাড় ধ্বংসের মতো অপরাধগুলো বন্ধ হয়ে যেত। সে সঙ্গে রক্ষা পেত আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদগুলো।
জলঢাকা, নীলফামারী
 

No comments

Powered by Blogger.