মোবাইল ফোনে বিয়ে by মুফতি মাহ্ফূযুল হক

বিয়ের শুদ্ধতার ওপর অনেক কিছু নির্ভরশীল। অর্থাৎ কোনো বিয়ে যদি অশুদ্ধ হয় তাহলে তাদের সম্পর্ক হারাম হবে। সন্তানদের ঔরস জানা থাকা সত্ত্বেও ওদের কোনো পিতৃপরিচয় থাকবে না। ফিকাহ শাস্ত্রের প্রামাণ্য গ্রন্থাবলিতে বিয়ের নিয়ম-পদ্ধতি লেখা আছে। দেড় হাজার বছর ধরে মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিয়ের আয়োজন হচ্ছে।


এসব পদ্ধতি থেকে ব্যতিক্রম নতুন কিছু করার আগে বিজ্ঞ মুফতিদের কাছ থেকে ভালোভাবে জেনে নেওয়া সতর্কতার দাবি। ইদানীং মোবাইল ফোনে প্রচুর বিয়ে-শাদি হচ্ছে। বর বল্পুব্দদের নিয়ে বিদেশে আসর জমান। দেশে তার আত্মীয়-স্বজনরা কনের পিত্রালয়ে উপস্থিত থাকে। মেয়ের এজিন নেওয়ার পর উকিল ফোন করে বরকে ইজাব (বিয়ের প্রস্তাব) শোনান। উত্তরে বর ফোনেই কবুল বলেন। শুরু থেকে উভয় হ্যান্ডসেটের লাউড স্পিকার চালু থাকে। ফলে দুই দেশে একযোগে অনুষ্ঠিত উভয় আসরের উপস্থিত সবাই উকিলের ইজাব পাঠ শুনতে পান। আবার বরের কবুল বলাও তারা সবাই শুনতে পান। এই হলো মোবাইল ফোনে বিয়ের প্রচলিত হাল-চিত্র।
শারিয়াহর দৃষ্টিতে বিয়ে একটি আহদ বা চুক্তি, যা দু'পক্ষের মাঝে সম্পাদিত হয়। যে কোনো চুক্তি শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইজাব ও কবুলের আসর এক হওয়া শর্ত। মোবাইল ফোনের প্রচলিত বিয়েতে ইজাব ও কবুলের আসর ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণ চুক্তি শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলিসহ বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য অতিরিক্ত আরও শর্ত রয়েছে। যেমন_ নূ্যনতম দু'জন সাক্ষী থাকা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সাক্ষী হওয়ার পূর্বশর্ত। মোবাইল ফোনের প্রচলিত বিয়েতে যারা বরের আসরে থাকেন তারা উকিলের ইজাব শুনতে পেলেও ইজাব বলার স্থলে উপস্থিত না থাকায় ইজাবের সাক্ষী নন। অনুরূপভাবে যারা উকিলের আসরে আছেন তারা ফোনের সুবাদে বরের কবুল বলা শুনতে পেলেও বলার স্থলে উপস্থিত না থাকায় কবুলের সাক্ষী নন। ফলে মোবাইল ফোনের প্রচলিত বিয়েতে ইজাব-কবুল উভয়ের কোনো একক সাক্ষী থাকছে না। বিয়ে যেহেতু ইজাব-কবুল উভয়ের মিলিত নাম, সেহেতু উভয়ের সাক্ষী না হওয়ার অর্থই হলো বিয়ের সাক্ষী না হওয়া। সার কথা, আসর ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় ও সাক্ষী শুদ্ধ না হওয়ায় প্রচলিত পদ্ধতিতে সম্পাদিত মোবাইল ফোনের বিয়ে কোনো বিয়েই হচ্ছে না। এর দ্বারা কোনো বৈবাহিক বৈধ সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে না।
প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের এ যুগে যদি কারও মোবাইল ফোনে বিয়ে করার একান্তই প্রয়োজন হয় তাহলে নিচের কৌশলটি অবলম্বন করতে পারেন। মুফতি শফী (রহ.), মুফতি ইউসুফ লুধিয়া নভী (রহ.) এবং আরও বিজ্ঞ মুফতিরা এ ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন। বর বিদেশে থেকে ভয়েস কল, এসএমএস, ই-মেইল বা যে কোনো যোগাযোগ মাধ্যমে স্বদেশে অবস্থানরত নির্দিষ্টভাবে কাউকে তার পক্ষে কবুল বলার উকিল (প্রতিনিধি) বানাবেন। দেশে যেখানে আয়োজন হবে সেখানে মেয়ের উকিল বরের উকিলের কাছে ইজাব উপস্থাপন করবেন। বলবেন, অমুকের মেয়ে অমুককে আপনার ওকালতিতে অমুকের ছেলে অমুকের কাছে বিয়ে দিলাম। উত্তরে বরের উকিল বলবেন, অমুকের ছেলে অমুকের জন্য কবুল করলাম। এ পদ্ধতিতে ইজাব, কবুল এক স্থানে এক আসরে হচ্ছে। আবার এ আসরে উপস্থিত একই ব্যক্তি ইজাব-কবুল বলার স্থলে উপস্থিত থেকে উভয়ের বক্তব্য শোনার ফলে বিয়ের সাক্ষী হচ্ছেন। সব শর্ত প্রতিপালন হওয়ায় বিয়ে শুদ্ধ হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.