কবিতার জয়গানে শুরু হলো উৎসব

শীতের শেষ বেলায় বসন্তের উঁকিঝুঁকি। সকালের সোনা রোদের সঙ্গে দক্ষিণ হাওয়ার মিতালি। তারপর দিনভর কবিতা আর কবিতা। গতকাল বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের চত্বরে শুরু হয়েছে জাতীয় কবিতা উৎসব। সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উৎসবের শুরু, আজ শেষ।


দেশি ও বিদেশি কবিরা গতকাল উৎসবের শুরুতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী কামরুল হাসানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় জাতীয় সংগীত দিয়ে। শিল্পীরা পরিবেশন করেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী’ ও কবিতা উৎসবের গান ‘কবিতা শোনিতে, স্বপ্নের ধ্বনিতে তুলে নাও কবিতার বাণী’।
এ ছাড়া তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর, ভূপেন হাজারিকা, স্টিভ জবসসহ সদ্য প্রয়াত দেশি-বিদেশি বরেণ্য ব্যক্তির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পরিষদের সভাপতি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, রবিউল হুসাইন, মুহাম্মদ সামাদ, আসলাম সানী, তারিক সুজাত প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি করেন বীথি চক্রবর্তী, মণিপুরের কবি রাজকুমার ভুবনস্না, রাতুল দেববর্মন, শ্যামলকান্তি দাশ, আশিস সান্যাল, দীপক লাহিড়ীসহ আরও অনেকে।
শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে প্রথমেই ভারতের কবিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় কবিতা আবৃত্তি করার জন্য। বীথি চক্রবর্তী আবৃত্তি করলেন ‘এক রাজা তার ঢাল-তালোয়ার নেই’। মণিপুরের কবি রাজকুমার ভুবনস্না মণিপুরি ভাষায় আবৃত্তি করলেন ‘বৈশাখের অগ্নিশিখা’ কবিতাটি। বিদেশি কবিদের আবৃত্তির ফাঁকে ফাঁকে তাঁদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এ দেশের কবিরা।
উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা কবি সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘এই কবিতা উৎসবে সারা দেশের কবিদের সঙ্গে সীমান্তের ওপার থেকেও কবিরা আসেন, এটা কবিদের একটি বড় মিলনমেলা। দেশের একটা সংকটময় সময়ে আমরা সংগঠিত হয়েছিলাম। জাতি যে স্বপ্ন দেখে, সেই স্বপ্নের কথাই প্রচার করে কবিতা।’
কবিতা উৎসবে আসা কলকাতার কবি শ্যামলকান্তি দাশ বললেন, ‘একদিকে বইমেলা, অন্যদিকে কবিতা উৎসব—সব মিলে এক অনন্য ভালোলাগা নিয়ে দেশে ফিরে যাই।’
কবিতাকে ভালোবেসে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ও রাত অবধি বাড়তে থাকে দর্শকদের সংখ্যাও। দেশ-বিদেশের কবিদের এই মিলনমেলায় কাব্যানুরাগীদের মুখেও উচ্চারিত হতে থাকে কবিতার জয়গান।
আজ বৃহস্পতিবার উৎসবের সমাপনী। সকাল ১০টায় ‘ভাষা আন্দোলন ও আমাদের কবিতা’ এবং ১১টায় ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং আমাদের কবিতা’ শীর্ষক দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বিকেলে হবে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

No comments

Powered by Blogger.