‘মন্ত্রীরা স্যুটে বুটে না হলেও কাজে স্মার্ট’

সংসদ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের মন্ত্রীরা স্যুটে বুটে স্মার্ট না হলেও কাজে স্মার্ট। কাজে স্মার্ট হলেই তা মানুষের কাছে বেশি গ্রহণীয়। সরকারের মন্ত্রীরা ভাল কাজ করছেন বলেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ৯৩ ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। এটি আর কোন সরকার করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী গতকাল জাতীয় সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে একথা বলেন। জাতীয় পার্টির সদস্য    পৃষ্ঠা ২০ কলাম
একেএম মাইদুল ইসলাম এক সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং আর দু’একজন মন্ত্রী ছাড়া বাকি মন্ত্রীরা কাজ করতে পারছেন না। সারা দেশে যেখানে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে ইটের ভাটা গড়ে উঠছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এ ধরনের ইটের কারখানা বন্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা নেবে কিনা জবাবে প্রধানমন্ত্রী ওই সদস্যের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, উনার বাড়ি বানানো হয়তো শেষ হয়ে গেছে। তাই এ প্রশ্ন করেছেন। ইটের ভাটা বন্ধ করা তো সমাধান না। তা বন্ধ করে দিলে তো সব উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে পরিবেশ নষ্ট করে ইটের ভাটা করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও যথেষ্ট তৎপর। ওই সদস্যকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদে প্রেসিডেন্ট কিছুদিন আগে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতে সব মন্ত্রণালয়ের কাজের একটা বিবরণ আছে। আপনি প্রেসিডেন্টের ভাষণ ভাল করে পড়লেই মন্ত্রীরা কাজ করছে কিনা তা দেখতে পাবেন। বেনজীর আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনী ওয়াদা মোতাবেক একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। এই বিচার কাজ স্বাভাবিক গতিতে বেগবানও রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চাহিদা মোতাবেক আরও একটি অতিরিক্ত বেঞ্চ গঠনের কাজও দ্রুত সম্পন্ন হচ্ছে। এই বিচার কাজে বিরোধিতা করার জন্য মহল বিশেষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। তারা দেশে বিদেশে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। দেশের মধ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টির সব রকম অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তবে আমরা তাদের সমস্ত হীন পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখেই জাতিকে দেয়া ওয়াদা পূরণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। যুদ্ধাপরাধের বিচার কাজে যারা যেখানে এবং যেভাবেই বাধা দিক না কেন আমাদের পিছু হটার কোন কারণ নেই। এদেশের প্রচলিত আইনেই সব বাধাদানকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মূলত বিচার কাজ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাধাদানকারীরাই গত বছরের ১৮ই  ডিসেম্বর ভোর বেলা নগরবাসীর ঘুম ভাঙার আগেই মহানগরের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিক নৈরাজ্যকর তাণ্ডবলীলা চালায়। অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাঙা, বোমা ছোড়া, লাঠালাঠি, মারামারি এবং হতাহতের ঘটনা ঘটায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণেই পুরো পুরিস্থিতি অল্প সময়ের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে আসে। ওই আকস্মিক তাণ্ডবলীলার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে বাধাদানকারীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে অধিকতর তৎপর থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দেশবাসীর সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতায় বাংলাদেশের মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে শিগগিরই এদেশকে এক ঐতিহাসিক দায় থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করার জন্য জনগণের সহায়তা চাই। দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বিরোধী দল যাতে যুদ্ধাপরাধীদের সহায়তা করতে না পারে সেজন্য জনগণকে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে। সরকারি দলের ওই সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান-কি ধরনের কাজ করলে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে যায় সে বিষয়ে আইনি কোন ব্যাখ্যা দেয়া হবে কিনা? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক ওভাবে বলা যায় না। কোনটা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে যায়। তবে যারা করছে তারা তো বুঝে-শুনেই করছে। এটা বিরোধী দলের নেতারও বোঝা উচিত। তিনি বুঝে-শুনেই তাদের (জামায়াত) সঙ্গে আছেন। সংসদ নেতা বলেন, বিরোধী দলকে বুঝতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে গিয়ে যেন তারা ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি না করে। আমি বুঝি না কেন তিনি (খালেদা) ২ লাখ মা-বোনের যন্ত্রণা বোঝেন না। তার তো বোঝা উচিত। ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কাজ করার জন্য বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। এজন্য অনেক অর্থও বিনিয়োগ করা হচ্ছে। বিদেশী লবিস্ট কোম্পানিকে এই টাকা দেয়া হচ্ছে। যারা এই কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় খবর এসেছে। আমেরিকাতে এ ধরনের লবিস্ট ফার্ম রয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানের এ সংক্রান্ত কাগজপত্রও আমাদের (সরকারের) কাছে আছে। আইন অনুযায়ী তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের কথা উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, এ বিষয়ে মানিলন্ডারিং আইনেও তদন্ত হচ্ছে। কারণ, বিষয়টির সঙ্গে টাকা পাচারের ব্যাপার জড়িত। জনগণের টাকা পাচার করে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে কাজ করে যাবে, তা হতে দেয়া যায় না। মো. শহীদুজ্জামান সরকারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১১-১৫ মেয়াদে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশে প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ উন্নীত হবে। বর্তমান সময়ের তুলনায় দারিদ্র্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে আসবে। পরবর্তী পর্যায়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০১৬-২১) মাধ্যমে পরিকল্পিত উন্নয়ন করে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। মুহিবুর রহমান মানিকের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি রেলপথের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ রেলপথকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে সরকার সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে রেলওয়ে একটি আধুনিক গণপরিবহন মাধ্যমে পরিণত হবে। নাছিমুল আলম চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে টেকসই গণতন্ত্রের জন্য নারীর ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের সফল কার্যক্রম তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার ও সমসুযোগ নিশ্চিত করতে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। নিবিড় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, শ্রমবাজারে ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত নারী শিক্ষাকে অবৈতনিক করা হয়েছে। গোলাম দস্তগীর গাজীর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন এবং জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার কৃষিকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। এ সময় তিনি ২০১৩ সালের মধ্যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসমপূর্ণ করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ৩১টি প্রকল্প সম্পর্কে সংসদকে অবহিত করেন। মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনকে অধিকতর সহজ ও স্বচ্ছ করা এবং তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত সময়ে নির্ভুল ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে ইভিএম একটি আধুনিক দৃষ্টান্ত। দশম জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুসারে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

No comments

Powered by Blogger.