পদ্মা সেতু-দ্রুত শুরু হোক নির্মাণ কাজ

মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নতুন গতি পেয়েছে এবং তা আশান্বিত করেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষকে। বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক প্রকল্পে ঋণ জোগানোর অঙ্গীকার করেছে এবং এ বিষয়ে চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে। সেতু নির্মাণের জন্য স্থান ও নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।


এ অবস্থায় দুর্নীতি ও অনিয়মের শঙ্কায় মূল সেতু, নদীশাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণসহ সব ধরনের কাজের দরপত্র অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ধীরগতি অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ক্ষেত্রে প্রধান আপত্তি এসেছে বিশ্বব্যাংক থেকে। তারা জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর তদারকি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দরপত্রে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার বা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের অনুমোদন দেবে না। পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রধান খ্যাতিমান প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, 'কাগজপত্র ভালোভাবে দেখে দরপত্র মূল্যায়ন করা হচ্ছে। সন্দেহ দেখা দিলে যাচাই করা হচ্ছে। এরপরও নামে-বেনামে দুর্নীতির অভিযোগ যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকে। আমরা শতভাগ নিশ্চিত, কোনো দুর্নীতি এখানে নেই।' তিনি শুধু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞই নন, তার আন্তরিকতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন নেই। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বলেছেন, সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয় যে পর্যায়ে রয়েছে তাতে দুর্নীতির অবকাশ নেই। তারপরও কোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অভিযোগ উত্থাপিত হলে তাকে সেতু নির্মাণ কিংবা নদীশাসনসহ কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হবে না। বৃহস্পতিবার সচিব ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও স্পষ্ট করে বলেছেন, 'দুর্নীতিগ্রস্ত কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ করানো হবে না। এ প্রকল্পে ইতিমধ্যে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি-না তা নিয়ে তদন্ত হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' যোগাযোগমন্ত্রীও পদ্মা সেতু প্রকল্পসহ তার মন্ত্রণালয়ের কাজে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে মনে রাখা চাই, কেবল অঙ্গীকারেই সরকারের দায়িত্ব শেষ হয় না। অভিযোগ খণ্ডন করায় প্রয়োজনে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে তাদের তৎপরতা বাড়াতে হবে। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য দাতা সংস্থাকেও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তনে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে হবে। ২১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়মের অনেক অভিযোগ উত্থাপিত হতে পারে। তবে তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার কোনো যুক্তি নেই। অনেক সময় দেখা যায়, কাজ না পাওয়া প্রতিষ্ঠান অহেতুক অভিযোগ উত্থাপন করে। তা ছাড়া দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত অনেকের সম্পর্কেও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বিভিন্নম্ন সময়ে ওঠে এবং তা একেবারে অমূলক বলা চলে না। তবে মূল কথা হচ্ছে সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু করা। কার্যাদেশ প্রদানের আগে দুর্নীতি-অনিয়মের শঙ্কা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলতে থাকায় বরং ভালোই হয়েছে। এটা হচ্ছে গুরুতর সতর্কবার্তা এবং তার প্রতি সবচেয়ে গুরুত্ব প্রদান করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকেই। মহাজোট সরকারকে মনে রাখতে হবে, তাদের হাতে আগামী যে আড়াই বছরের মতো সময় রয়েছে এর মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজে যথেষ্ট অগ্রগতি সম্পন্ন না হলে কিন্তু নির্বাচনী ময়দানে বড় ধরনের খেসারত দিতে হতে পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.