লক্ষ্মীপুরে গুলির আগেই পালিয়েছিলেন ম্যাজিস্ট্রেট

নূরুজ্জামান: লক্ষ্মীপুরে বিরোধী দলের গণমিছিলে পুলিশের গুলি চালানোর আগেই ম্যাজিস্ট্রেট পালিয়েছিলেন। তার অনুপস্থিতিতেই পুলিশ গুলি চালিয়ে দু’জনকে হত্যা করেছে। পরে পুলিশের গুলির শব্দ শুনে তিনি পুলিশ বেষ্টনীতে ফিরে আসেন। পুলিশের গুলিতে প্রাণহানির ঘটনায় গঠিত পুলিশের তদন্ত টিম সূত্রে গতকাল এ তথ্য জানা গেছে     পৃষ্ঠা ১১ কলাম ১
। এদিকে চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত বিএনপি কর্মী আবুল মৃধার স্ত্রী চাঁদপুর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত মামলা আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশের তদন্ত টিমের সভাপতি ও  পুলিশের চট্টগ্রাম  রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি বিশ্বাস আফজাল হোসেন বলেন, দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় কখনও কখনও ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশকে মাঠে রেখেই নিরাপদ দূরত্বে চলে যান। এক্ষেত্রে পুলিশ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আইনগতভাবে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে হামলাকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, লক্ষ্মীপুরের ঘটনার সাক্ষ্যগ্রহণ  শেষ হয়েছে। গতকাল রাত থেকে চাঁদপুরে ঘটনার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ সংক্রান্তে প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পেশ করা হবে। তদন্ত কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) নূরে আলম মিনা বলেন, উদভূত পরিস্থিতির মুখে পুলিশ শটগান ব্যবহার করেছিল। এর বাইরে অন্য কোন অস্ত্র ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়নি  তদন্তে। উল্লেখ্য, ২৯শে জানুয়ারি চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুর জেলায় বিরোধী দলের গণমিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে ৪ জনকে হত্যা করেছে। নিহতরা হলেন- চাঁদপুর শহরের গোয়াখোলা এলাকার রিকশাচালক লিমন ছৈয়াল (২৫) ও বাবুরহাট এলাকার বিএনপি কর্মী ও রিকশাচালক আবুল হোসেন মৃধা (৫০) এবং লক্ষ্মীপুর সদরের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের বিদ্যুৎমিস্ত্রি মো. রুবেল (২৫) ও চরমনসা গ্রামের আবুল কাশেম (৫৫)। দু’পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ৫ শতাধিক আহত হয়। এরপরের দিন রাজশাহী জেলায় আরও একজন জামায়াত কর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলার এ দু’টি হত্যাকাণ্ড একই টিম করছে। সূত্র মতে, পুলিশের গুলি চালানোর গ্রহণযোগ্যতা খুঁজতেই তদন্ত টিম মাঠে নেমেছে। তদন্ত টিমের সদস্যরা বেছে বেছে সাক্ষী যোগাড় করে লিখিত বিবৃতি সংগ্রহ করছেন। গতকাল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের ঘটনায় প্রায় ৬০ জনের বক্তব্য রেকর্ড করেছেন। এর মধ্যে সাক্ষী হিসেবে ৩২ জনের জবানবন্দি নিয়েছেন। অন্যদিকে গুলি চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরির পক্ষে প্রায় ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরপরই পুলিশ গুলি চালানোর অনুমতি চেয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট অনুমতি না দিয়ে সেখান থেকে অন্যত্র গিয়েছিলেন। এরপরই পুলিশ বিরোধী দলের গণমিছিলকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশসহ সরকারের উচ্চপর্যায় বিব্রত হয়ে পড়ে। সূত্র আরও জানায়, চাঁদপুর ও লক্ষ্মীপুরে পুলিশের গুলিতে মারা গেলেও রাজশাহীতে গুলির ঘটনা রহস্যজনক। সেখানে সাবোটাজের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে বলে সন্দেহ করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। জামায়াতের কর্মী শফিকুল ইসলামের শরীরে ক্ষুদ্রাস্ত্রের গুলির তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ক্ষুদ্রাস্ত্র বলতে রিভলবার কিংবা পিস্তল বোঝায়। এ ধরনের অস্ত্র  পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর কিংবা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা ব্যবহার করেন। পুলিশের অন্য এক সূত্র জানায়, ঢাকার গণমিছিল পণ্ড করার জন্যই ঢাকার বাইরের গণমিছিলে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে গুলি চালিয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক হিসেবে প্রমাণ করার জন্যই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ম্যাজিস্ট্রেটসহ ১৫০ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা: চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, গণমিছিলে  বিএনপি কর্মী আবুল মৃধাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ফাতেমা বেগম মণি বাদী হয়ে  আদালতে মামলা করেছেন। গতকাল দুপুরে চাঁদপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চমন বেগম চৌধুরীর আদালতে এই মামলা করা হয়। এতে আসামি করেছেন চাঁদপুর জেলার  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এনডিসি) শামীমুল হক পাভেল ও সদর মডেল থানার ওসি জাকের হোসাইন এবং ওসি (তদন্ত) আলমগীর হোসেন মজুমদারসহ ১৫০ পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলকে। নাম উল্লেখ করা অন্য আসামিরা হলেন- ডিবি’র ওসি মো. মিজানুর রহমান, মডেল থানার দায়িত্বরত সব এসআই ও এএসআইসহ ৪৬ জন পুলিশ সদস্য। এর বাইরে অজ্ঞাত হিসেবে আরও ১৫০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের কথা উল্লেখ করেছেন। ফাতেমার আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম মিয়া বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে বিষয়টি জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিচারক চমন বেগম চৌধুরী নিজেই মামলাটি তদন্ত করবেন। মামলায় অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, গত রোববার শহরের হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের সামনে দিয়ে রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিল আবুল হোসেন মৃধা। ওই সময় বিনা উস্কানিতে আবুলকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। একই সঙ্গে  লিমন ছৈয়াল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই ঘটনায় রোববার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে ৫০ জন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ৫ হাজার জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করে দু’টি মামলা হয়। বিস্ফোরক ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগ এনে দায়েরকৃত মামলা ২টির বাদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. আলমগীর হোসেন মজুমদার।

No comments

Powered by Blogger.