শহীদ-রুমি’র অট্টহাসি

মাহমুদ মানজুর: দিনভর দলছুটের খবর। শুধু কি তাই? সঙ্গে রয়েছে তিরিশ লক্ষ্য টাকা ক্ষতিপূরণ শীর্ষক সাধারণ ডায়রিসহ ‘দা-কুমড়া’ ঘরানার নানা উপাদান। সোমবার এমন খবর দিনভর টিভি অনুষ্ঠান হয়ে পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে ফলাও করে। অথচ সবাইকে চমকে দিয়ে একই দিন সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের একটি বর্ণিল আয়োজনে হাজির হন দু’জনে। হাতে হাত রেখে হাস্যোজ্জ্বল দু’জনে গল্পে মেতে ওঠেন উপস্থিত শিল্পী-সাংবাদিকদের সঙ্গে। দিনভর ভাঙনের গল্প প্রসঙ্গে দু’জনেই বলেন সমস্বরে, ভাঙনের গুজবটাকে আমরা জয় করতে চাই। এই জামানায় শাক দিয়ে হয়তো মাছটা ঢেকে রাখা যায় কিন্তু সম্পর্কটা ঢেকে রাখা মুশকিল। আজ দিনভর টিভি আর সংবাদপত্রে যা লেখা হয়েছে, যে ভয়ঙ্কর সব তথ্য ছাপা হয়েছে- এর পরেতো এখানে এভাবে আমাদের পাশাপাশি থাকার কথা ছিল না। আমরা দু’জনেই বিষয়টি নিয়ে দারুণ বিব্রত। তবে বিস্মিত নই। সফলতার সূচক ঊর্ধ্ব গতিতে থাকলে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। প্রসঙ্গ চলতি সময়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় সংগীত জুটি শহীদ-আরফিন রুমি। গেল ক’বছর দু’জন জুটি হয়ে কাজ করছেন। যার সর্বশেষ জ্বলজ্বলে স্বাক্ষর মিলেছে আরফিন রুমির সুর-সংগীতে শহীদ-শুভমিতার ‘এক জীবনে এত প্রেম পাবো কোথায়’ গানটির মধ্য দিয়ে। শহীদ-রুমি’র সফল একক ক্যারিয়ারের পাশাপাশি কাজী শুভ-আইয়ুব শাহরিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ব্যান্ড ‘দূরবীন’ নিয়েও বেশ স্বস্তিকর অবস্থানে রয়েছেন দু’জনে। গেল সোমবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন হয়ে বেশ ক’টি অনলাইন নিউজ এজেন্সি এবং দু’একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেয়েছে ‘দূরবীন’ ব্যান্ড থেকে বের করে দেয়া হয়েছে আরফিন রুমিকে। উক্ত সংবাদে আরও প্রকাশ পায়, ২০১১ সালে আরফিন রুমির সংগীতায়োজনে দূরবীন ব্যান্ডের প্রধান শহীদ ও শুভমিতার দ্বৈতকণ্ঠে ‘এক জীবনে’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। শহীদের এই সাফল্যের পর আরফিন রুমি ‘দূরবীন’ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া শুরু করেন। ব্যান্ডের প্র্যাকটিস ও কনসার্টে রুমি হয়ে যান অনিয়মিত। সেই সূত্র ধরে সমপ্রতি ব্যান্ড প্রধান শহীদ ‘দূরবীন’ থেকে আরফিন রুমিকে বাদ দিয়ে দেন এবং রুমির কাছে স্টুডিও ও অন্যান্য যন্ত্র ব্যবহার বাবদ ত্রিশ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। উক্ত সংবাদে আরও প্রকাশ পায়, শহীদের এমন সিদ্ধান্তের পর আরফিন রুমি সমর্থকরা ব্যান্ডের প্রধান শহীদকে ফোনে গান ছেড়ে দেয়ার হুমকি এবং ফেসবুকে বিভিন্ন অর্ধনগ্ন নারীর সঙ্গে শহীদের ছবি জুড়ে দিয়ে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হয়রানির শিকার করে। এক পর্যায়ে শহীদ বাধ্য হয়ে থানায় জিডি করেন। সোমবার দিনভর এমন সংবাদ কিংবা গুঞ্জনের পুরো বিপরীত চিত্র ঘটে এদিন সন্ধ্যায়। শহীদ-রুমি, দু’জনেই এমন সংবাদের সত্যতা জানতে চাইলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের লবিতে। হাসতে হাসতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্যামেরার সামনে পোজ দেন। ছবি তোলা শেষে রুমি নিজে থেকেই বলেন, আসলে ঘটনাটা হচ্ছে শহীদ ভাইর কাঁধে বন্দুক রেখে আমাকে গুলি করার চেষ্টা চলছে। আবার কেউ কেউ আমার কাঁধে বন্দুক রেখে শহীদ ভাইকে ঘায়েল করতে চাইছে। এই হলো পুরো ঘটনার সারমর্ম। রুমি’র রেশ ধরে শহীদ বলেন, আমি যে থানায় জিডি করেছি, সেটা রুমির সঙ্গে আলাপ করেই করেছি। তাকে জানিয়েছি ফোনে এবং ফেইসবুকে আমাকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে চলছে। তখন রুমি নিজেই আমাকে বললো, একটা জিডি করে রাখতে। আমিও জিডি করলাম। ব্যাস এটুকুই। এদিকে শহীদ-রুমি দু’জনেই হাসতে হাসতে খানিকটা হুমকির সুরে বললেন, আগামীকাল (আজ রাত) আরটিভি ফোনো লাইভে ‘দূরবীন’ পারফর্ম করবে। দু’জনেই গাইবো গলা ছেড়ে- পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। গানের ফাঁকে ফাঁকে কিছু কথাও বলবো। দোয়া চাইবো সবার কাছে, যেন চলমান বন্দুকওয়ালাদের কাছ থেকে উপরওয়ালা আমাদের রক্ষা করেন। সে সঙ্গে এখন আমরা আমাদের কাঁধটাকেও সামলে রাখতে শিখেছি। যেন যে কেউ আমাদের কাঁধে বন্দুকটা না রাখতে পারে। শহীদ-রুমি’র কাছে শেষ জিজ্ঞাসা ছিল, যাহা রটে তাহা কিছু না কিছুতো বটে- কি বলবেন আপনারা? দু’জনেই বলেন, আমরা গনক নই। তাই আগামীর কথা বলতে পারবো না। তবে আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের মাঝে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি, যার বিপরীতে এমন রটনা রটতে পারে। এটা আমাদের জন্য, সংগীতের জন্য এবং গণমাধ্যমের জন্য সত্যিই বিপদজনক প্রপাগান্ডা।

No comments

Powered by Blogger.