ডিএসইর সূচক নামল চার হাজারের নিচে

আবারও ব্যাপক দরপতন ঘটেছে শেয়ারবাজারে। এই দরপতনের ফলে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাধারণ মূল্যসূচক এবার চার হাজার পয়েন্টের মনস্তাত্ত্বিক সীমার নিচে নেমে গেল। গতকাল বুধবার দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ মূল্যসূচক কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৮৮৭ পয়েন্টে। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক নেমে এসেছে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পয়েন্টে।


মাত্র তিন দিন আগে (২৯ জানুয়ারি) ডিএসইতে বছরের সর্বোচ্চ দরপতন ঘটেছিল। ওই দিন এক কার্যদিবসেই ডিএসইর সাধারণ সূচক কমেছিল পৌনে সাত শতাংশ বা ৩০৪ পয়েন্ট। আর গতকাল এক দিনে সেটি কমেছে প্রায় সাড়ে ছয় শতাংশ বা ২৬৭ পয়েন্ট।
সিএসইতে ২৯ জানুয়ারি সার্বিক মূল্যসূচক পৌনে ছয় শতাংশ বা ৭৪৩ পয়েন্ট কমেছিল। আর গতকাল কমেছে ৫ দশমিক ২০ শতাংশ বা ৬৩৫ পয়েন্ট।
ধারাবাহিক দরপতনে ডিএসইর সাধারণ সূচক কমে প্রায় ২৬ মাসের আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। এর আগে ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর সর্বশেষ ডিএসইর সাধারণ সূচক তিন হাজার ৩৮৩ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। ১৬ নভেম্বর তারিখে গ্রামীণফোন তালিকাভুক্তির পর সেই সূচক বেড়ে চার হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে। এরপর ঢাকার বাজারের সাধারণ সূচক আর কখনোই চার হাজার পয়েন্টের নিচে নামেনি।
দুই বাজারেই গতকাল লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯৭ শতাংশেরই দাম কমেছে। ফলে দুই স্টক এক্সচেঞ্জেই দাম বাড়ার শীর্ষ ১০ কোম্পানির তালিকাটি অসম্পূর্ণ ছিল।
জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অবস্থা, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত আর্থিক বিবরণী এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট বাজারের ধারাবাহিক দরপতনের অন্যতম কারণ।
আবু আহমেদ অবশ্য এও বলেন, বাজার কখনো ধারাবাহিকভাবে কমতে পারে না। তাই এই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই নীতিসহায়তা দিয়ে এই বাজারকে ভালোভাবে সচল রাখতে হবে।
আবু আহমেদের মতে, সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল যদি পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির একটি অংশ ভাবতে না পারে, তাহলে তারা ভুল করবে। বরং অর্থনীতির অংশ হিসেবে সহায়তা দিয়ে বাজারটিকে ভালো করতে হবে। বর্তমান বাজারকে ভালো করতে হলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার বাইরেও বাংলাদেশ ব্যাংক বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে আরও বাড়তি কিছু সহায়তা দেওয়া যায় কি না, সেটা ভাবতে হবে।
আবু আহমেদ বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) খারাপ দেখাচ্ছে, সেগুলোর ব্যাপারে এসইসি তদন্ত করে দেখতে পারে। এসব কোম্পানি অতীতে আয়ের যে প্রক্ষেপণ করেছিল, সেটির সঙ্গে ঘোষিত বা প্রকাশিত আয়ের কতটা সামঞ্জস্য রয়েছে, সেটিও বিশদভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। আবার নতুন যেসব কোম্পানির শেয়ারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও অনুমোদন করা হচ্ছে, সেগুলোর দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে এসইসিকে আরও রক্ষণশীল হওয়া উচিত।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যেকোনো ইতিবাচক খবরে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশান্বিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু যখনই এর সঙ্গে প্রাপ্তির মিল ঘটে না, তখন বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের আশা আর হতাশার—উভয় প্রতিফলন বাজারের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে গতকাল মূল্যসূচকের যে পতন ঘটেছে তার মধ্যে ১০ কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের কারণে কমেছে ৬৬ দশমিক ৪২ পয়েন্ট। কোম্পানিগুলো হলো: আইসিবি, তিতাস, ন্যাশনাল ব্যাংক, বেক্সিমকো, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, সামিট পাওয়ার ও এক্সিম ব্যাংক।
মূল্যসূচকের ব্যাপক পতন হলেও ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিন শেষে গতকাল ডিএসইতে প্রায় ২৭০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা বেশি। এই দিন প্রধান শেয়ারবাজারে ২৫৭ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ২৪৯টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র চারটির আর অপরিবর্তিত ছিল চারটি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
চট্টগ্রামের বাজারে গতকাল ১৭৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়। এর মধ্যে ১৭২টিরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ছয়টির দাম। দিন শেষে সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩৯ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে প্রায় এক কোটি টাকা বেশি।

No comments

Powered by Blogger.