সড়ক-মহাসড়কে আতঙ্ক-নিরাপদ হোক ঈদে ঘরে ফেরা

সড়ক-মহাসড়ক এখন আতঙ্কের আরেক নাম। সাম্প্রতিক কয়েকটি দুর্ঘটনার পর পথে নামতেই এখন ভয় হয় মানুষের। মহাসড়ক শুধু নয়, রাজধানীর সড়কগুলোও এখন আর নিরাপদ নয়। মূল্যবান প্রাণ যাচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে। দুর্ঘটনার নামে যে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, তাতে তেমন টনক নড়ছে না কারো।


এমন অবস্থার মধ্যেই সামনে আসছে ঈদ। ঈদে ঘরে ফিরবে মানুষ। প্রিয়জনদের সানি্নধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে চাইবে ঈদের আনন্দ। ঈদে ঘরে ফেরার প্রধান বিড়ম্বনা টিকিট প্রাপ্তি। অনেক ভোগান্তির পর পাওয়া যায় ঘরে ফেরার অগ্রিম টিকিট। সেই টিকিট বিক্রি শুরু হচ্ছে আজ থেকে। অনেক সাধনার এই টিকিট প্রাপ্তির পর এবারের ঈদে মানুষের ঘরে ফেরা নিরাপদ হবে তো? নিরাপদে কি ঘরে ফিরতে পারবে মানুষ? নাকি চালক নামধারী ঘাতকদের হাতে নিজেদের জীবন তুলে দিতে হবে ঘরমুখো মানুষকে?
সড়ক-মহাসড়কে জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। রাস্তা যেন কারো জন্যই নিরাপদ নয়। সম্প্রতি ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কে বাংলাদেশ হারিয়েছে দুই মূল্যবান সম্পদ। এর পরদিনই রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডে এক মোটরসাইকেল আরোহীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে একটি ঘাতক বাস। মোটরসাইকেল আরোহীকে হত্যা করেই ক্ষান্ত থাকেনি ঘাতক চালক। সহকারীর সহায়তায় মৃতদেহটি রাস্তার পাশের খাদে ফেলে দেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। অর্থাৎ যে চালকদের কারণে সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে, তাদের মধ্যে কোনো বিকার নেই। নেই কোনো অপরাধবোধ। এক মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলে নির্বিকারভাবে মৃতদেহ রাস্তার পাশের খাদের পানিতে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা যাদের পক্ষে সম্ভব, তাদের তো ঘাতকই বলতে হবে। এমন অনেক ঘাতকের হাতেই বন্দি যাত্রীসাধারণের জীবন।
সড়ক ও মহাসড়কে প্রতিদিন বাড়ছে দুর্ঘটনা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। একটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকানো যাক। যেখানে উন্নত দেশগুলোতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার মাত্র ২-৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে এ হার ৪৭ শতাংশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ২৪৫ কিলোমিটার। এ মহাসড়কের চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত সাড়ে চার বছরে ঘটেছে ৬৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৬৪৭ ও আহতের সংখ্যা ৯২৪। সড়ক দুর্ঘটনায় চিহ্নিত ৪২টি কারণের মধ্যে ৩৫টি রোধে কোনো অর্থ প্রয়োজন না হলেও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেই। গতিনিয়ন্ত্রক প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। কথা ছিল, প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এ প্রযুক্তি স্থাপন করা হবে। কিন্তু দীর্ঘ ১০ মাসেও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তো নয়, দেশের সব সড়ক-মহাসড়কই এখন একেকটি মৃত্যুফাঁদ। পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা। অনেক রাস্তাই চলাচলের উপযোগী নয়। কবে এসব সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের উপযোগী হবে, সেটা স্বয়ং মন্ত্রীরও অজানা। তার ওপর আছে অদক্ষ গাড়িচালক ও অসচেতন পথচারীদের অসতর্কতা। অদক্ষ গাড়িচালকরাই এখন সড়কপথের ঘাতক হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর এত দুর্ঘটনা ঘটছে, প্রাণ যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের, কিন্তু কোনো গাড়িচালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে_এমনটি দেখা গেল না। ওদিকে জনৈক মন্ত্রীর সুপারিশে দুই বছর আগে নাকি ১০ হাজার চালককে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ওই মন্ত্রী নাকি এবারও ওই একই পদ্ধতিতে সাড়ে ২৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স চেয়েছেন। চালকদের জন্য মন্ত্রীর এমন আশকারা থাকলে গাড়িচালকরা বেপরোয়া হবেন_এটাই তো স্বাভাবিক।
হোক সড়ক মৃত্যুফাঁদ, তবু এই সড়কপথেই মানুষ ঘরমুখো হবে ঈদের আগে। ঘরে ফিরবে প্রিয়জনদের সানি্নধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে। এ অবস্থায় যতটুকু সম্ভব মেরামত করা হোক সড়ক-মহাসড়ক। সর্বতোভাবে চেষ্টা করা হোক তাদের নির্বিঘ্ন পথচলা। ঈদে অন্তত নিরাপদ হোক মানুষের ঘরে ফেরা।

No comments

Powered by Blogger.