গ্রাম্য সালিশ ও আত্মহত্যা by মোঃ আলী আশরাফ খান

যদিও 'গ্রাম্য সালিশ' শব্দটির মধ্যে আমাদের বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য বহন করে, আমাদের সামাজিক বন্ধনকে করে অটুট ও সুদৃঢ়। কিন্তু কালক্রমে রাজনীতির ভ্রান্তচর্চা, দুর্নীতির কালো ছায়া ও অনৈতিকতায় নিমজ্জিত হয়ে এখন এই গ্রাম্য সালিশ তথা বিচার ব্যবস্থাটি কলুষতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পেঁৗছে গেছে।


অপ্রিয় হলেও সত্য, এখন দেশজুড়ে সালিশের নামে বাণিজ্য শুরু করেছে কথিত দেনদরবারওয়ালা মাতবররা। সালিশের মাধ্যমে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন এখন তাদের পেশায় পরিণত হয়েছে।
গত ৭ আগস্ট উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এই সালিশ-ব্যবসা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। কেউ যদি সালিশ করে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সালিশ করাটাই ফৌজদারি অপরাধ। আদালতের এমন কঠোর নির্দেশনার পরও দেশের সব স্থানে চলছে সালিশের নামে মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এমনই একটি ঘটনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার মোগড়া গ্রামে গত ৪ সেপ্টেম্বর সালিশ বসিয়ে বয়সে ছোট একজনের পায়ে ধরিয়ে মাফ চাইতে বাধ্য করায় আত্মহত্যা করে আশিস নামের সিনিয়র এক ছাত্র। গ্রাম্য বিচারকদের মূর্খর্তা ও ভ্রান্ত রায়ের ফলে ওই যুবক লোকলজ্জা ও আত্মসম্মানে আঘাত পেয়ে ওই দিন রাতেই কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে। এর আগে গত ২৪ আগস্ট সালিশের অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার গার্মেন্ট শ্রমিক পারভীন আক্তার। পারভীন তার ভালোবাসার মানুষ নাজমুলের বাসায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে এ অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি ঘটে। সালিশে তাদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়। তবে নাজমুলের তুলনায় পারভীনকে বেশি নির্যাতন করা হয় বলে পত্রিকায় প্রকাশ হয়। তারপর পারভীন ও তার মা হাজেরা খাতুন ঘটনাটি জানান তাদের বাড়ির মালিক কামালকে। কামাল বিকেলে নাজমুলের অভিভাবকদের পারভীনদের বাসার সামনে রিকশার গ্যারেজে আসতে বলেন। ঘটনা নিয়ে আরেক দফা সালিশ বসে এখানে। এ বৈঠকে কামালসহ স্থানীয়রা নাজমুলের সঙ্গে পারভীনের বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু নাজমুল সময় চান তাদের কাছে এবং তার পরিবার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, খারাপ মেয়ের সঙ্গে তাদের ছেলের বিয়ে হতে পারে না। নাজমুলের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় কয়েকজন। এতে করে কোনো সমাধান ছাড়াই শেষ হয় সালিশপর্ব। তারপর বিকেল ৫টার দিকে নাজমুলের পক্ষে অবস্থান নেওয়া একটি গ্রুপ পারভীন ও তার মাকে বাসা ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে আলটিমেটাম দেয়। শুধু তাই নয়, চরিত্রহীন ও নষ্টা মেয়ে বলে পারভীনকে চরম অপমান করে। এ অপমানের ভার সইতে না পেরে পারভীন বাসায় বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
এসব সালিশি নির্যাতন বন্ধে যেসব কর্তাব্যক্তি গ্রাম্য সালিশের নামে সমাজে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও আত্মহত্যার মতো জঘন্য কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে তাদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

গৌরীপুর, দাউদকান্দি, কুমিল্লা
 

No comments

Powered by Blogger.