বিজেএমসির প্রতিশোধ

বিজেএমসি ৩: ১ শেখ জামাল জয়টাকে কী বলবেন, মধুর প্রতিশোধ? ম্যাচ শেষে অনিবার্য প্রশ্নটার মুখোমুখি হলেন জাকারিয়া বাবু। বিজেএমসি কোচের হাস্যোজ্জ্বল উত্তর, ‘আমি এটাকে প্রতিশোধ বলব না!’ মুখে ভদ্রলোক যা-ই বলুন না কেন, পুরো বিজেএমসি দলের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষায় রইল যেন প্রতিশোধেরই অনুবাদ।


মাঝখানে ব্যবধান মাত্র এক সপ্তাহের। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে শেখ জামালের কাছে হারের ক্ষতটা যে এখনো শুকায়নি বিজেএমসির খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের! বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কাল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী ম্যাচে বিজেএমসি যেন সেই হারের প্রতিশোধই নিল। স্কোরলাইনটাও হুবহু এক—৩: ১। শুধু শেখ জামালের জায়গায় বসল বিজেএমসির নাম।
ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের প্রধান গোলরক্ষক আমিনুল কাল খেলেননি। পরশু অনুশীলনে কাঁধে ব্যথা পাওয়ায় মাঠে নামেননি দলের অধিনায়ক। আর বিজেএমসি অধিনায়ক আলফাজকে দেখা যায়নি প্রথম একাদশে। আমিনুলের জায়গায় গোলদুর্গ সামলান পিয়ারুজ্জামান পিরু। আর আলফাজ নেমেছেন ম্যাচের ৮৩ মিনিটে। তবে আলফাজের ওপর ভরসা করতে হয়নি, পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরেছে বিজেএমসি। পুরো ম্যাচের প্রথম মিনিট পনেরো বাদ দিলে বাকি সময়টায় তারাই আধিপত্য করেছে। আসলে আবুল-রশিদ-ইকাঙ্গা-বাঙ্গুরাদের সামনে বারবারই খেই হারিয়ে ফেলছিল হলুদ জার্সির দলটি।
ফেডারেশন কাপের ফাইনালের শেখ জামালকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি এদিন। জয়ের ব্যবধান আরও বাড়তই বিজেএমসির কিন্তু পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারেননি ইসমাইল বাঙ্গুরা!
বাংলাদেশ লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা অবশ্য শুরুটা করেছিল দারুণ। ম্যাচের ৭ মিনিটে নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড কেস্টারের হেডে প্রথমেই এগিয়ে যায় তারা। তবে এই গোলটা খেয়েই যেন আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে বিজেএমসি। ১১ মিনিটে রনি ইসলামের শট পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। তবে সমতা এনে ফেলে তারা ২৮ মিনিটে, কর্নার থেকে পাওয়া বলে গোল করেন ক্যামেরুনের ইকাঙ্গা। ৪৩ মিনিটে নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে দেন শেখ জামালের মিশু। গোলরক্ষক পিরু যখন অনেকখানি এগিয়ে, রশিদের পাস থেকে বাঙ্গুরার শট জালে ঢোকার মুহূর্তে গোললাইন সেভ করেন শেখ জামাল লেফটব্যাক।
দ্বিতীয়ার্ধে বিজেএমসিকে দেখা যায় আরও আক্রমণাত্মক চেহারায়। ৫১ মিনিটে বক্সের মধ্যে বাঙ্গুরাকে ফেলে দেন অ্যালেন। পেনাল্টি দিতে ভুল করেননি রেফারি তৈয়ব হাসান। তবে পেনাল্টি থেকে বাঙ্গুরা গোল করতে পারেননি, শটটা বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক পিরু। ১০ মিনিট পর বিজেএমসিকে আরেকবার আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন খোকন দাস। বক্সের ২০ গজ দূর থেকে কোনাকুনি শটে করেন দুর্দান্ত এক গোল। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো ৬৪ মিনিটে ১০ জনের দল হয়ে পড়ে শেখ জামাল। বুট দিয়ে বেইবেকের পা মাড়িয়ে দিয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন অ্যালেন। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ৭৫ মিনিটে স্কোর ৩-১ করেন গিনির ইসমাইল বাঙ্গুরা। গোলরক্ষক পিরু অনেকখানি এগিয়ে এলে বাঙ্গুরা আলতো টোকায় তাঁর মাথার ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন বল।
হার দিয়ে লিগ শুরু হওয়ায় স্বভাবতই হতাশ শেখ জামালের কোচ সাইফুল বারী, ‘আমাদের সবাই খুব বাজে খেলেছে। আমিনুলের নেতৃত্বও মিস করেছি।’ পুরো ৩ পয়েন্টই পেয়েছেন, তবুও বিজেএমসির কোচ জাকারিয়া বাবুর আক্ষেপ, ‘জয়ের ব্যবধানটা আরও বেশি হতে পারত।’
শেখ জামাল: পিরু, ইউসুফ, মিশু, ইউসিফ ইসা, কমল (মিন্টু), শরীফ (সবুজ), রাজু (সোহেল রানা), ফেমি, রায়হান, অ্যালেন, কেস্টার।
বিজেএমসি: হিমেল, আশরাফুল, সাইফুল, বেইবেক, জনি, খোকন (মোকলেসুর), আবুল (বিপ্লব), বাঙ্গুরা, রশিদ, রনি (আলফাজ), ইকাঙ্গা।

No comments

Powered by Blogger.