আল-কোরআন :মহানবীর জীবন্ত মুজিজা by আলী হাসান তৈয়ব

মানব জাতির সর্বশেষ রাসূল হিসেবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে আল্লাহ যে সর্বজনীন মুজিজা দান করেছেন তা-ই আল-কোরআন। পণ্ডিত, ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা আল-কোরআনের বিস্ময়কর প্রকৃতির বিবরণ দিয়ে অসংখ্য পৃষ্ঠা রচনা করেছেন।


বিগত চৌদ্দশ' বছর ধরে প্রত্যেক যুগে প্রত্যেক প্রজন্মই আল-কোরআনের নতুন নতুন বিস্ময় ও মুজিজা আবিষ্কার করেছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আল্লাহর রাসূল এবং আল-কোরআন সমগ্র মানব জাতির কল্যাণে প্রেরিত আল্লাহর সর্বশেষ ও চূড়ান্ত গ্রন্থ_ এ অফুরান মুজিজা তারই শাশ্বত ও স্থায়ী প্রমাণ।
ঐতিহাসিকরা লিখেছেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম না জানতেন লিখতে, না পড়তে। এমনকি তিনি সাক্ষরও ছিলেন না। উপরন্তু বাল্য ও শৈশব জীবনের রূঢ় প্রতিকূল পরিস্থিতি তাঁকে সে যুগের হাতেগোনা সাক্ষর লোকদের সাহচর্যে বসারও সুযোগ দেয়নি। জীবনে মাত্র দু'বার তিনি দীর্ঘ সফর করেছেন। প্রথম সফর ছিল তাঁর আট বছর বয়সে। দ্বিতীয় সফর করেন যখন তাঁর বয়স পঁচিশ বছর। উভয়টি ছিল সিরিয়ায় এবং খুব সংক্ষিপ্ত। তাও বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। কখনও কোনো ঐতিহাসিক লেখেননি, সফরগুলো তাঁকে কিছু জ্ঞান অর্জনে সাহায্য করেছিল, যা তিনি পরবর্তীকালে আল-কোরআনে সনি্নবেশিত করেছেন। একটি মাত্র বিষয় যা ঐতিহাসিকরা তার বাল্যজীবন সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন তা হলো, তিনি তাঁর সততা ও সদাচারের জন্য সুখ্যাত ছিলেন। তিনি সবার শ্রদ্ধা-ভালোবাসার পাত্র ছিলেন। এ জন্যই মক্কার লোকেরা তাঁকে 'আল-আমীন' বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করেছিল।
আল-কোরআন মানবতার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান। মানব জাতির ইতিহাসে যার কোনো তুলনা নেই। অন্যান্য নবী-রাসূলের মুজিজা তাঁদের জীবৎকাল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কোরআন মাজিদ কিয়ামত পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন্ত মুজিজা হিসেবে অক্ষত থাকবে। আল-কোরআন এমন অসংখ্য তথ্য ধারণ করে, অবতরণকালে যা মানুষের জানা ছিল না। এসব তথ্যসূত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনেক উন্নয়নের ফলে বর্তমানে নিশ্চিত সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সেই চৌদ্দশ' বছর আগের চ্যালেঞ্জ তাই এখনও অটুট রয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'এ কোরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোনো সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে। নাকি তারা বলে, 'সে তা বানিয়েছে?' বল, 'তবে তোমরা তার মতে একটি সূরা (বানিয়ে) নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।' (ইউনুস :৩৭-৩৮)
প্রত্যেক যুগের মানুষ আল-কোরআনে নতুন নতুন মুজিজা বা 'মিরাকল' আবিষ্কার করেছে। মানুষের জ্ঞানের পরিধি যতই প্রসারিত হচ্ছে, ততই তা আল-কোরআনের মুজিজার তালিকাকে দীর্ঘ করছে। বর্তমানে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর ও অভূতপূর্ব উৎকর্ষ কোরআনকে করেছে তাই আরও বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত বিশ্বনবীর এ মুজিজা থাকবে অবিকৃত ও অপরিবর্তিত। আমাদের দায়িত্ব কেবল এ কোরআনকে জীবনের প্রতিটি স্তরে ধারণ ও বাস্তবায়ন করা। তাতেই মুক্তি আমাদের এবং সমগ্র মানব জাতির। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
alihasantaib@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.