আওয়ামী লীগে গৃহবিবাদ

আহমেদ জামাল/জাহিদ হাসান, কুমিল্লা থেকে: নবগঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গৃহবিবাদে লিপ্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষ নেতাদের    পৃষ্ঠা ৮ কলাম ১ হস্তক্ষেপেও এই যুদ্ধের অবসান হয়নি। তিন ভাগে বিভক্ত মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ক্ষমতাসীন দলের ত্রিমুখী টানাপড়েনে বিপাকে প্রশাসনও। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগের তিন মেয়র প্রার্থীর অভ্যন্তরীণ লড়াই তীব্র হচ্ছে। এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে নানা অভিযোগে। পরস্পরের নামে ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য এমনকি কুৎসা রটাতেও পিছপা হচ্ছেন না কেউ। তবে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দলের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আহম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানিম ও মিঠু মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তৃণমূল কর্মীদের মতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলের হাইকমান্ড বর্ষীয়ান নেতা আফজল খানকে সমর্থন দেন। কিন্তু ছাত্রলীগ যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী বিরোধিতা করে বিদ্রোহী দু’নেতা নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম ও আনিসুর রহমান মিঠুকে মাঠে নামায়। জেলার নির্বাচিত একাধিক এমপি এবং দলের শীর্ষ পর্যায়ের বহু চেষ্টার পরও বিদ্রোহী দু’প্রার্থীকে মাঠের লড়াই থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী আনিসুর রহমান মিঠু নিজের প্রার্থিতার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, আফজল খানকে মনোনয়ন দেয়া দলের বিরুদ্ধে একটি কঠিন ষড়যন্ত্র। নারায়ণগঞ্জের মতো এখানেও দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করার জন্য আফজল খানকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, শারীরিকভাবে আফজল খান একেবারেই আনফিট। তার উঠতে তিনজন বসতে দুই জনের সহযোগিতা লাগে। যার নিজের সেবায় এত লোক নিয়োজিত তিনি কি করে জনগণের সেবা করবেন? ছাত্র ও যুবলীগের বেশির ভাগ নেতাকর্মী তার সঙ্গে আছে দাবি করে মিঠু বলেন, আমি আওয়ামী লীগের কে, দলের নেতাকর্মীরা কাকে চায়- তা নির্বাচনে প্রমাণ হবে। আফজল খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, একই সঙ্গে বেশ কিছু মাইক ও মাইক্রোবাস ব্যবহার করছে তার কর্মী-সমর্থকরা। কিন্তু প্রশাসন নীরব। এখন পর্যন্ত র‌্যাব পুলিশের তেমন উল্লেখযোগ্য তৎপরতা না থাকায় নির্বাচনের প্রাক্কালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করেন তিনি। তবে নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী মিঠু। আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিমও প্রায় একই সুরে অভিযোগ করলেন আফজল খানের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটকে জেতানোর জন্যই আফজল খানের মতো বয়স্ক নেতাকে প্রার্থী করা হয়েছে। তবে কুমিল্লার জনসাধারণ সচেতন মন্তব্য করে তানিম বলেন, তারা নির্বাচনে অবশ্যই যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেবেন। তরুণ দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাখ্যান করেন আফজল খান। তিনি বলেন, ২ মাস আগেও ওরা ছাত্রলীগ করতো। দলের ছয় জন এমপিসহ শীর্ষ নেতারা আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন আমার পক্ষে কাজ করছেন। সে ক্ষেত্রে এই দু’একজনের কথা বা কাজে জনসাধারণ বিভ্রান্ত হবে না। একটি স্কুলের শিক্ষকদের নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি নয় এমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষক আমার নির্বাচনী কাজে যুক্ত আছেন। যুবলীগ নেতা আকবর হোসেন বলেন, অনেক শীর্ষ নেতার কারণে দলের মধ্যে গ্রুপিং। শুরু থেকেই তাদের গুরুত্ব দেয়া না হলে দলের এত ক্ষতির কারণ হতো না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এই বিরোধের সুফল ভোগ করবে বিএনপি জামায়াত জোট। বঙ্গবন্ধুর আদর্শেও একজন কর্মী হিসেবে এটা কেউ মেনে নিতে পারে না। এদিকে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দলের তিন প্রার্থীর বিরোধে স্থানীয় প্রশাসনও বিব্রত। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিরা কৌশলগত কারণে এ বিষরয় কিছু বলতেও পারছেন না। অনেকটা নীরবে হজম করছেন। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে যতটুকু সমস্যা তা একটি দলের এবং কর্মীদের। এখানে পুলিশ বা প্রশাসনের কোন সমস্যা নেই। আইনশৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা নাকচ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার এক মাস ১০ দিন ইতিমধ্যেই কেটেছে। এই সময়ের মধ্যে কোথাও একটি অপ্রীতিকর ঘটনার কোন নজির নেই। সুতরাং এই ধরনের আশঙ্কা একবারেই অমূলক। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের মনোনয়ন নিয়ে বিদ্যমান বিরোধ নিরসনে আওয়ামী লীগের ১০ জন এমপি চেষ্টা করেও সফল হননি বলে জানান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তা দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন বা রিটার্নিং অফিসারের। আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে আমি সচেতন আছি এবং ইনশাআল্লাহ শেষ পর্যন্ত থাকবো।
নমুনা ভোটিং চলছে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের সুবিধার্থে ২৭টি ওয়ার্ডে বর্তমানে নমুনা ভোটিং চলছে। কুসিকের ৬৫টি ভোট কেন্দ্রেই ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেয়া হবে। শনিবার বিকালে রিটার্নিং অফিসার মো. আবদুল বাতেন জানান, ৩১শে ডিসেম্বর থেকে প্রতিটি ওয়ার্ডে মগ ভোটিং (নমুনা ভোটিং) শুরু হয়েছে। আগামী ৩রা জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন ৯টি ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম চলবে। ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মাঝে যে ভীতি রয়েছে নমুনা ভোটিংয়ের মাধ্যমে হাতে-কলমে সেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইভিএম নিয়ে আর কোন ভীতি থাকবে না বলে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কমিশনার সাখাওয়াৎ আসছেন কুসিক নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াৎ হোসেন আজ রোববার সকালে কুমিল্লা আসছেন। সকাল ১০টায় তিনি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা ছাড়াও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে তিনি দিকনির্দেশনা দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়াও বিকালে মেয়র প্রার্থী ও সুধীমহলের উপস্থিতিতে তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.