নবীগঞ্জে শোকের মাতম একই গ্রামে ৭ লাশ

এমএ বাছিত/নূরুল ইসলাম মনি, বাহুবল থেকে: শোকের মাতম পশ্চিম জয়পুরে। গ্রাম জুড়ে স্বজনদের আহাজারি, কান্না। শোকাভিভূত এলাকার মানুষ। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন একই গ্রামের ৬ জনসহ ৭ জন। নিহতদের ৬ জনের বাড়িই বাহুবলের পশ্চিম জয়পুর গ্রামে। দুর্ঘটনার পর নিহতদের লাশ গ্রামে পৌঁছলে পুরো এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসার জন্য সিলেট যাচ্ছিলেন হতভাগ্যরা। পথিমধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার ফুলতলী বাজারের কাছে ঘটে মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় নিহত বাহুবলের পশ্চিম জয়পুর গ্রামের এক পরিবারের ৪ জনকে গতকাল বিকাল ৪টায় পাশাপাশি কবরে, অন্য ২ জনকে স্ব স্ব পারিবারিক কবরস্থানে এবং অন্যজনকে তার নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় পশ্চিম জয়পুর গ্রামে এক সঙ্গে ৬ জনের জানাজা হয় স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। পার্শ্ববর্তী আবদুল্লাহপুর মসজিদে অনুষ্ঠিত হয় অপর ব্যক্তির জানাজা। জানাজায় হবিগঞ্জের জেলা পরিষদ প্রশাসক ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কাদির চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ূন কবীর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাজী শেখ ফিরোজ মিয়া, বাহুবল মডেল থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান, শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আলী ফরিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজন চৌধুরী, বাহুবল থানা বিএনপি’র সভাপতি আকদ্দছ মিয়া বাবুল, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল আওয়াল ও হাবিবুর রহমান চৌধুরী টেনুসহ সহস্রাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। প্র্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাহুবল উপজেলার পশ্চিম জয়পুর গ্রামের আবদুল মতিনের স্ত্রী রহিমা আক্তার বেশ কিছু দিন ধরে আলসার রোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনরা তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তির উদ্দেশ্যে একই গ্রামের আবদুল গফফারের পুত্র আবুল কালামের একটি মাইক্রোবাসে রওনা হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার ফুলতলী বাজারের কাছে পৌঁছে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা বিআরটিসি’র একটি পিকনিক বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসের ৫ যাত্রী নিহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান আরও ২ জন। ভৈরবের জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সিলেট থেকে পিকনিক শেষে ফেরা ‘বিআরটিসি’ বাসের ছাত্র-শিক্ষকসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়। আহতদের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নিহতরা হলো- বাহুবল উপজেলার পশ্চিম জয়পুর গ্রামের আবদুল মতিন (৬৫), তার স্ত্রী রহিমা আক্তার (৫০), তাদের কন্যা তিন সন্তানের জননী পারভীন আক্তার (৩০), অবিবাহিত কন্যা ইয়াছমিন আক্তার (২০), জামাতা উপজেলার ফতেহপুর গ্রামের মাওলানা আলাউদ্দিন (৩৫), পশ্চিম জয়পুর গ্রামের আমির হোসেনের পুত্র ফিরোজ আলী (৩২) এবং একই গ্রামের মাইক্রোবাস চালক ও মালিক আবদুল গফফারের পুত্র আবুল কালাম (২৬)। পশ্চিম জয়পুরে গিয়ে দেখা যায়, নিহত আবদুল মতিনের বাড়িতে সারিবদ্ধভাবে স্বামী-স্ত্রী ও দুই কন্যার লাশ রাখা হয়েছে। গ্রামের অপর ২ জনের লাশ স্ব স্ব বাড়িতে রাখা হয়েছে। বাড়িগুলোতে শ’ শ’ দর্শনার্থী ও স্বজনদের ভিড়। লাশগুলোকে ঘিরে তাদের কান্নায় এলাকার আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। নিহত আবদুল মতিনের কোন পুত্র সন্তান নেই। ৫ কন্যার মধ্যে ওই দুর্ঘটনায় ২ জন মারা গেছে। জীবিত ৩ কন্যার প্রত্যেকেই বিবাহিত। নিহত আবদুল মতিন গ্রামের দরিদ্র কৃষক। এদিকে, দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহতদের লাশ বাহুবল উপজেলার মিরপুর চৌমুহনায় নিয়ে এলে উপস্থিত লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা মহাসড়ক অবরোধ করলে উভয় পাশে শ’ শ’ যানবাহন আটকা পড়ে। খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গলের র‌্যাব ৯-এর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে উত্তেজিত জনতার সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় গ্রামের মসজিদের মাইক থেকে লোকজনকে মিরপুর চৌমুহনায় আসার আহ্বান জানানো হয়। গ্রামবাসী লাঠিসোটা নিয়ে চৌমুহনায় এলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। খবর পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কাদির চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ূন কবীর, মডেল থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান, শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আলী ফরিদ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী টেনু ও আবদুল আওয়ালসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে রাত ১টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। র‌্যাব-পুলিশের লাঠিচার্জে স্থানীয় সাংবাদিক ছিদ্দিকুর রহমান মাসুম (২৮), কুতুব উদ্দিন (৩০) ও আবদুল হাই (৩২) সহ অন্তত ২০ জন আহত হন। বাহুবল উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ূন কবীর জানান, নিহত দরিদ্র কৃষক আবদুল মতিনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি আলী ফরিদ জানান, ঘাতক বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক পলাতক ।

No comments

Powered by Blogger.