সুন্দরবনে বাঘ হত্যা-এ কেমন নিষ্ঠুরতা?

গত শতাব্দীর শেষপাদে এসেও শিশু-কিশোর গল্পে 'বাঘ মামার' সঙ্গে অবুঝ-দুরন্ত মনের শিহরণ জাগানিয়া দোস্তি পশুর প্রতি মানুষের সখ্য-ভালোবাসার সম্পর্ককে প্রকট করেছে। বাঘ যেখানে তার খাবারের অভাব ঘটলে বন ছেড়ে লোকালয়ে এসে মানুষের মাংসে উদরপূর্তি করতে দ্বিধা করে না, সেখানে বাঘের প্রতি এহেন বন্ধুভাব গড়ে তোলার চেষ্টা পশুর প্রতি মানুষের দায়িত্ববোধকেই তুলে ধরে। কিন্তু অনেকের সাধুবাক্যে অতৃপ্তি।


তাদের কাছে বাঘ মারা শৌর্য-বীর্য প্রকাশের উপলক্ষ। বৃহস্পতিবার সমকালের শেষের পৃষ্ঠায় স্থান পাওয়া 'বাঘের মাংস হরিলুট' শিরোনামের সংবাদটিতে একটি ৭ ফুট ১০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের বাঘকে কী নিষ্ঠুরতার সঙ্গে মেরে এর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ একেকজন একেকভাবে কেটে নিয়ে গেছে তার বিবরণ রয়েছে। বাঘটির বিরুদ্ধে গ্রামে ঢুকে ১০টি ছাগল সাবাড় করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ পেট ফুটো করে ছাগলের মাংস মেলেনি। দুষ্টের ছলের অভাব হয় না বলে প্রচলিত প্রবচনের উল্লেখ করে বলতে হয়, যারা সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারটিকে মেরে মাংস কেটে নিয়েছিলেন, তারা আর যাই হোক হুঁশসম্পন্ন মানুষ নয়। সুন্দরবনের বিরল প্রজাতির রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষা এখন আন্তর্জাতিক বাঘ রক্ষা আন্দোলনেরই অংশ। প্রশ্ন আসে, সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগরের গোলাখালী গ্রামের মানুষ যখন বাঘটিকে মেরে ফেলে তখন বন বিভাগ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোথায় ছিলেন? তাদের চলাচলে অসুবিধার গল্প অনেক পুরনো। এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যেতে শামুকের গতিতে তারা চলাচল করেন। রিপোর্টটি পড়ে মনে হয়েছে বন বিভাগ কর্মী, ডাক্তার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গ্রামবাসী_ বাঘ মারার ব্যাপারে সবার মানসিকতা যেন একই রকম। তারা সবাই যেন অপেক্ষা করেই ছিলেন কবে বাঘ মারা পড়বে আর তারা নানা রোগবালাই সারাই ও অর্থলাভের মুখ দেখবেন। কারও অভিপ্রায় প্রকাশ্য আবার কারও ইচ্ছাটা অপ্রকাশ্য। সুন্দরবনের বাঘ মারাটা গুরুতর অন্যায়। কিন্তু মানুষ কি শুনবে এই নীতিকথা!
 

No comments

Powered by Blogger.