অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান

২০ দল ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে জোটের নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, বর্তমান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন আর জনগণের বাহিনী নয়। তারা জনগণের টাকায় বেতনভোগী হলেও সরকারি দলের ক্যাডারে সাজানো আওয়ামী রক্ষাকারী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বাহিনীগুলোকে গণশত্রুতে পরিণত করা হয়েছে। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও চলমান আন্দোলনকে দমাতে বর্তমান অবৈধ সরকার জনগণের টাকায় পরিচালিত বিভিন্ন সরকারি বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। বিজিবির মহাপরিচালক ‘প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে বিজিবি’ বলে যে হুমকি দিয়েছেন সেটি নজীরবিহীন, অমানবিক ও আতঙ্কজনক। বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজেদের লোকদের বসিয়ে এসব বাহিনীকে গণশত্রুতে পরিণত করা হয়েছে। বিজিবি’র দায়িত্ব সীমান্ত পাহারা দেয়া। প্রায় প্রতিদিনই আমাদের দেশের লোককে সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ফেলানীর লাশ যখন কাঁটাতারের ওপর ঝোলে তখন এই ধরনের মহাপরিচালকরা নিশ্চুপ থাকে। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে এরা দ্রুত তৎপরতা দেখায়। দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ জনি স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে রিজভী আহমেদ বলেন, যৌথবাহিনীর নামে গ্রামে-গঞ্জে নিরীহ জনগণের ওপর চালানো হচ্ছে আক্রমণ। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি’র সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী মানুষ হত্যার নির্দেশনা নিয়ে চলমান আন্দোলনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ’৭২-’৭৫-এর রক্ষীবাহিনীর প্রেতাত্মা নিয়ে এই যৌথবাহিনী গ্রামে-গঞ্জে বীভৎস তাণ্ডব চালাচ্ছে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ-কানসাটের কয়েকটি গ্রামে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। আতঙ্কে দিশেহারা মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই পৈশাচিক তাণ্ডব চলছে শিবগঞ্জ-কানসাটসহ সারা বাংলাদেশে। বাপকে ধরতে গিয়ে ছেলেকে কিংবা ছেলেকে ধরতে গিয়ে পিতাকে অথবা ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরিবারের মা-বোনদের সঙ্গে করা হচ্ছে ভয়ঙ্কর অসদাচরণ। রিজভী বলেন, আমরা দলের পক্ষ থেকে বারবার বলেছিলাম- বর্তমান আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী এখন আর জনগণের বাহিনী নয়। এটি দলীয় ক্যাডারে সাজানো আওয়ামী রক্ষাকারী বাহিনী, যদিও জনগণের টাকায় তারা বেতন পায়। তিনি বলেন, শতকরা ৫ ভাগ ভোট নিয়ে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা এই প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মসনদ থেকে অবতরণ করতে এতো অনিহা কেন? কারণ এই ভোটারবিহীন সরকার এতই অনাচার করেছে যে, জনগণের ক্রোধের ভয়ে দলীয় লোকদের দিয়ে গঠিত আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর প্রহরায় ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে। তাই সঙ্কট নিরসন করতে তারা ভয় পাচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না এবং ক্ষমতায় গেলে কারও প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করবে না। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়া ও একটি অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্যই আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লাগাতার এই আন্দোলনে রত আছি। এই অবৈধ সরকার এখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। আবারও আহ্বান জানাচ্ছি, একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে এই মুহূর্তে কার্যকর সংলাপের ব্যবস্থা করুন। উৎপীড়ন, পরিকল্পিত নাশকতা, প্রকাশ্য গুলি করে অবরোধকারীদের হত্যা আর ধরপাকড়ের পথ থেকে সরে আসুন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি দিন। যতক্ষণ পর্যন্ত না বিজয় অর্জিত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত চলমান অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এদিকে পৃথক বিবৃতিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কানসাটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে যুবদল নেতা নিহত, সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের প্রায় সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে আহত, পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও প্রায় ১২০০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন রিজভী আহমেদ। বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে দেশব্যাপী তাণ্ডবলীলা শুরু করেছে। স্বতঃস্ফূর্ত অবরোধ কর্মসূচির সাফল্যে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী উপায়ান্তর না দেখে এখন মরণছোবল দেয়ার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে খান খান হয়ে যাবে। চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাটে আইন শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত যুবদল নেতার রুহের মাগফিরাত কামনা  করে তার শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি। একইসঙ্গে বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী চলমান অবরোধ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য দেশবাসীসহ ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব।

No comments

Powered by Blogger.