পেট্রলবোমা আতঙ্ক সিলেটে বিজিবি’র টহল by ওয়েছ খছরু

সিলেট নগরীর কাজী জালাল উদ্দিন স্কুলের সামনে বিক্ষোভ করছিল  হরতালকারীরা। এক সময় তারা রাস্তায় পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিল ১৫ থেকে ২০ জন কর্মী। খবর পেয়েই তাৎক্ষণিক সেখানে পিকআপ ভ্যান নিয়ে হাজির হন কোতোয়ালি থানার ওসি আসাদুজ্জামান। তিনি গাড়ি দাঁড় করানোর আগেই লক্ষ্য করে ছুড়া হয় পেট্রলবোমা। পুলিশের গাড়ির সামনের বাম পাশের চাকায় ধরে যায় আগুন। ডানপাশ দিয়ে পাশ কেটে চালক নিরাপদে চলে আসেন গাড়ি নিয়ে। কিন্তু এই পেট্রলবোমা এলার্মি হয়ে যায় সিলেটের প্রশাসনের জন্য। সিলেটের রাজপথে অহরহ ব্যবহার হচ্ছে পেট্রলবোমা। সিলেটের পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, গত ৪ঠা জানুয়ারি থেকে গড়ে প্রতিদিন সিলেট মেট্রোপলিটন এলাকায় কোথাও না কোথাও গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। রাজপথে দাউ-দাউ করে জ্বলতে দেখা যায় যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক। পাশাপাশি হালকা যান সিএনজি অটোরিকশাও পুড়ে যাচ্ছে। আর এসব পুড়ানো হচ্ছে পেট্রলবোমা দিয়ে। গতকাল কয়েকজন চালক জানান, পথে-পথে পুলিশ মোতায়েনের কারণে বেশ স্বস্তি নিয়েই চালকরা রাস্তায় যানবাহন নামান। কিন্তু পুলিশের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ফাঁক দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে আরোহীরা এসে পেট্রলবোমা ছুড়ে চলে যায়। বুঝার উপায় নেই কারা পেট্রলবোমা ছুড়ছে এবং কিভাবে তারা আসছে। সিলেট শহরতলির তেতলি এলাকায় পেট্রলবোমায় আক্রান্ত হওয়া যানবাহনের এক চালক জানিয়েছেন, সন্ধ্যা হলেই নেমে আসে আতঙ্ক। কারণ, চোরাগোপ্তা পেট্রলবোমা হামলায় শুধু যানবাহনই জ্বলছে না পুড়ে ছাই হচ্ছে চালক কিংবা হেল্পারও। তিনি বলেন, গাড়ি চালাতে হয় জীবন হাতে নিয়ে। ইতিমধ্যে প্রশাসন পেট্রলবোমার ব্যবহার কমাতে নিয়মিত ১০ থেকে ১২টি চৌকি বসিয়ে মোটরসাইকেলে তল্লাশি চালায়। কিন্তু পেট্রলবোমা পাওয়া যায় না। যে এলাকায় যানবাহন পেট্রলবোমায় আক্রান্ত হচ্ছে সে এলাকাতেই ওগুলো প্রস্তুত হচ্ছে। আর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের লাউয়াই থেকে লালাবাজার পর্যন্ত এলাকা পেট্রলবোমা আরোহীদের নিরাপদ স্থান হয়ে গেছে। গ্রাম, কিংবা বাজারের ভেতর থেকে হঠাৎ হামলা চালিয়ে কর্মসূচি পালনকারী নেতারা পালিয়ে যায়। গতকাল সিলেটের প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সিলেটে আক্রান্ত হন পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এরকম ঘটনা গত বৃহস্পতিবার ঘটেছে সিলেটের রাজপথে। ওসি আসাদুজ্জামানের গাড়ির ভেতরে পেট্রলবোমা পড়ে গেলে সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটতো। আর পুড়ে যেত পুলিশের ভ্যান। এ কারণে সিলেটের পুলিশের অনেক কর্মকর্তাই নির্ধারিত ডিউটির বাইরে পুলিশের গাড়ি ব্যবহার করছেন না। বেশ সতর্ক হয়েই তারা চলাফেরা করছেন। তবে, ঝুঁকির মুখে হরতাল-অবরোধের দায়িত্ব পালনে তারা নির্ধারিত পিকআপ, লেগুনা কিংবা অটোরিকশা  ব্যবহার করছেন। আতঙ্কগ্রস্থ অবস্থায় নগরীতে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। চলমান অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে সিলেট নগরীতে বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে। ৩ প্লাটুন বিজিবি টহল দিচ্ছে নগরীতে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে তারা নগরীর বিভিন্ন সড়কে টহল দিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার সকালেও জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, আম্বরখানাসহ বিভিন্ন স্থানে বিজিবির টহলের খবর পাওয়া গেছে। চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিজিবির টহল অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ৩ প্লাটুন বিজিবি সিলেট নগরীতে টহল শুরু করেছে। তারা নগরীতে নাশকতারোধে কাজ করছেন। এর আগে হরতাল ও অবরোধের নামে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ ও র‌্যাবের টহল ছিল নগরীতে। এদিকে, নাশকতা ঠেকাতে ও পরিস্থিতি স্বাভাবকি রাখতে তালিকা তৈরি করে অভিযান শুরু  করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের অন্তত ১০ শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.