‘আগায় আসেন ভাই, আগুন নিভান, কষ্টে কেনা ট্রাক’ by আনোয়ার পারভেজ

(ছবি:-১ আজ দুপুরে বগুড়া শহরের বাইপাস সড়কের ঝোপগাড়ি এলাকায় চিনিভর্তি ট্রাকে আগুন দেয় অবরোধকারীরাছবি:-২ আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন রতন মিয়াছবি:-৩ চোখের সামনে ট্রাক পুড়তে দেখে কাঁদছেন রতন মিয়া। ছবি: সোয়েল রানা, বগুড়া) ‘ভাই আগায় আসেন ভাই, আগুন নিভান ভাই, কিস্তিতে কেনা ট্রাক, কষ্টে কেনা ট্রাক ভাই, এই ট্রাক পুড়ে গেলে পথে বসতে হবে ভাই। ’ অবরোধকারীদের দেওয়া আগুনে জ্বলতে থাকা ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে এভাবে কেঁদে কেঁদে মানুষ ডাকছিলেন রতন মিয়া। আজ শনিবার দুপুরে বগুড়া শহরতলির ঝোপগাড়ি এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে রতন মিয়ার চিনিবোঝাই ট্রাকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। অবরোধকারীরা ট্রাকে গানপাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। অতি কষ্টে কিস্তিতে কেনা রোজগারের একমাত্র অবলম্বন ট্রাক পুড়তে দেখে ছটফট করছিলেন রতন মিয়া। পাগলের মতো ছোটাছুটি করছিলেন তিনি। কখনো বালু দিয়ে, কখনো খোয়া দিয়ে আগুন নেভানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন আর কাঁদছেন। রতন মিয়ার আকুতি শুনে এগিয়ে আসেন স্থানীয় কয়েকজন মানুষ। কিন্তু ততক্ষণে ট্রাকের সামনের অংশ আগুনে পুড়ে গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভান। বগুড়া শহরের বাসিন্দা রতন মিয়া জানান, ছোট ভাই খোকন মিয়াকে নিয়ে ব্যবসা তাঁর। ব্যাংক ঋণের টাকায় সাত মাস আগে নিটল-টাটা কোম্পানি থেকে কিস্তিতে ট্রাকটি কেনেন। প্রতি মাসে ৪৭ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। তিন মাস ধরে কিস্তি বাকি পড়েছে। এর মধ্যেই টানা অবরোধ-হরতাল। চালক-সহকারী দুজনই বেকার। তাঁদের সংসার আছে। ট্রাকের চাকা না ঘুরলে ভাত জোটে না। তাঁরা এসে আকুতি-মিনতি করে, ‘রাস্তায় পুলিশ-র‌্যাব আছে, মহাজন, গাড়ি দ্যান, খ্যাপ মারি। হামরাও বাঁচি, কিস্তির টেকাও জমা হোক। ’
রতন মিয়া বলেন, ‘চালক-সহকারীর অনুরোধে ১০ দিন পর গত বৃহস্পতিবার রাস্তায় গাড়ি বের করার অনুমতি দিই। কিন্তু তাতেই মাথাত বাড়ি পড়লো। চোখের সামনে সর্বনাশ হয়্যা গেল। সন্তানের মতো ট্রাকটা চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল। ত্রিশ লাখ টাকার ট্রাক গেল, ব্যবসায়ীর ৩২০ বস্তা চিনি পুড়ে ছাই হলো। দ্যাশের রাজনীতি এক্কেবারে হামাগরক পথত বসাল।’
ট্রাকটির চালক আবদুল আলিম জানান, গতকাল শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকার মেঘনা রিফাইন সুগার মিল থেকে ৩২০ বস্তা চিনি নিয়ে রাত ১০ টায় গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন। আজ সকাল ১০ টার দিকে বগুড়ার চারমাথায় পৌঁছার পর খবর পান মহাসড়কের মাটিডালি এলাকায় অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে। এরপর তিনি ট্রাকের মালিক রতন মিয়াকে বিষয়টি জানান। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পরিস্থিতি বোঝার জন্য মাটিডালিতে ছুটে যান রতন। বেলা একটার দিকে মাটিডালি এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হলে গাড়ি ছাড়েন। সাতটি ট্রাকের বহরের সঙ্গে ধীরগতিতে মাটিডালি মোড়ের দিকে ট্রাক চালিয়ে এগোচ্ছিলেন তিনি। ঝোপগাড়ি এলাকায় আসার পর পাশের সরু রাস্তা থেকে লাঠি হাতে ৩০-৪০ জন ট্রাকের বহরে হামলা চালায়। ট্রাক থামানোর পর তাঁকে নামিয়ে মারধর করে। কিছুক্ষণ পর চোখের সামনেই পাউডার জাতীয় পদার্থ ঢেলে ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধকারীরা।
বগুড়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোজাম্মেল হক বলেন, গত ৭২ ঘণ্টায় ওই একটি ট্রাকে নাশকতা হয়েছে। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তার পরও নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজার রেকর্ড অনুযায়ী গত ১২ দিনে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৭৭ হাজার যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর বাইরে উত্তরবঙ্গ থেকে লালন শাহ সেতু হয়ে খুলনা ও বরিশাল বিভাগে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। বগুড়ার ওপর দিয়ে মহাসড়কে চলাচলকারী এসব যানবাহন নিরাপদে পারাপার হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.