বাংলাদেশের মহান বন্ধু কমরেড জ্যোতি বসু by শাহরিয়ার কবির

কমরেড জ্যোতি বসু শুধু এই উপমহাদেশে নয়, ঝঞ্ঝাকবলিত সাম্প্রতিক বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে এক জ্যোতির্ময় নাম। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং শ্রমজীবী মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা পর্যালোচনা করলে জানা যাবে, উপমহাদেশের রাজনীতিবিদদের ভেতর তাঁর অনন্য অবস্থান।
পরিণত বয়সে তাঁর মৃতু্য অপ্রত্যাশিত না হলেও পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতবাসীর মতো বাংলাদেশের মানুষও গভীরভাবে শোকাহত হয়েছেন। অধিকাংশ ভারতীয়র কাছে উপমহাদেশের সমকালীন রাজনীতিবিদদের ভেতর সবচেয়ে শ্রদ্ধার আসন নিঃসন্দেহে মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহরুর। বাংলাদেশে যদি এ ধরনের কোন জরিপ চালানো হয়, তাহলে দেখা যাবে ভারতীয় রাজনীতিবিদদের ভেতর এদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও কমরেড জ্যোতি বসু।
বাংলাদেশের মানুষ শ্রীমতী গান্ধীকে শ্রদ্ধা করেন '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য। জ্যোতি বাবুকে বাংলাদেশের মানুষ ভালবাসেন এই দেশটির জন্য তাঁর অপরিসীম মমতার কারণে। জ্যোতি বাবুর প্রতি বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের ভালবাসার উষ্ণতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর অন্তিম বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলি্লশ সদস্যের প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তাৎণিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ছুটে গেছেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কমরেড জ্যোতি বসুকে শ্রদ্ধা জানাবার জন্য, তাঁর পরিবারের এবং দলের শোকসন্তপ্ত সদস্যবৃন্দের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপনের জন্য। বাংলাদেশের অভু্যদয়ের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু বরেণ্য নেতার মৃতু্য হয়েছে। তাঁদের অন্তিম যাত্রায় বাংলাদেশের প থেকে সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ এবং রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের এত বেশি অংশগ্রহণ অতীতে কখনও ঘটেনি, ভবিষ্যতে ঘটবে বলেও মনে হয় না।
১৯৯৬-এর ডিসেম্বরে কমরেড জ্যোতি বসু একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের বারদী গ্রামে তাঁর পৈত্রিক বাড়ি দেখার জন্য। তাঁকে এক নজর দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ যেভাবে সেই গ্রামে সমবেত হয়েছিল। সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রটোকল ভেঙ্গে পড়েছিল। তাঁর বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি যেতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসার উচ্ছ্বাসের মূল্য দিতে গিয়ে কমরেড জ্যোতি বসুকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়েছিল, যখন তাঁর বয়স আশির উর্ধে। প্রসন্ন মনে তিনি সহ্য করেছেন তাঁর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসার আতিশয্য।
'৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প েদাঁড়ানো ভারতের কংগ্রেস ও সিপিআই-এর প েযতটা সহজ ছিল সিপিআই (এম)-এর প েততটা সহজ ছিল না। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন তখন শুধু মস্কো ও পিকিং পন্থায় বিভক্ত নয়, দুই পরে সম্পর্কও ছিল যথেষ্ট তিক্ত। '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার এক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে সিপিআই (এম)-এর যুক্তফ্রন্ট সরকারকে ভেঙ্গে দেয়ার ফলে কংগ্রেস ও সিপিআই (এম)-এর সম্পর্কের ভেতর চরম বৈরিতা বিরাজ করছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা দেখেছি কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিআই (এম)-এর সম্পর্ক বৈরিতার কোন্ পর্যায়ে পেঁৗছেছিল। পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের কারণে চীন যেহেতু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল, বাংলাদেশের চীনপন্থীদের অনেকে তখন ভেবেছিলেন সিপিআই (এম) নিরপে থাকবে। কিন্তু জ্যোতি বাবুর গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের প্রতি ভালবাসা এবং পরিস্থিতির বাস্তবতা সম্পর্কে সম্যক উপলব্ধি গোটা দলকে মুক্তিযুদ্ধের প েকংগ্রেস ও সিপিআই-এর এক পঙ্ক্তিতে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল। চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত সিপিআই (এম) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীনের বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে অবস্থান গ্রহণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগণের প েদাঁড়িয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য করার জন্য কংগ্রেস ও সিপিআই-এর মতো সিপিআই (এম)ও 'বাংলাদেশ সংহতি ও সাহায্য কমিটি' গঠন করেছিল, যার সভাপতি ছিলেন কমরেড জ্যোতি বসু।
স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভু্যদয়ের পর, বিশেষভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর দিল্লীর সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক আগের মতো উষ্ণ থাকেনি। তারপরও আমরা ল্য করেছি বাংলাদেশের জন্য জ্যোতি বাবুর মমত্ব ও ভালবাসার দেয়ালে কখনও ফাটল ধরেনি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল পাকিস্তান-পূর্ব সময় থেকে। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা যখন ১৯৯৬-এ প্রথমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন অপসারণের েেত্র কমরেড জ্যোতি বসু রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি সম্পাদনের সময় জ্যোতি বাবু যেভাবে বাংলাদেশের স্বার্থকে বড় করে দেখেছিলেন, এদেশের মানুষের প্রতি অপরিসীম ভালবাসা না থাকলে তা কখনও সম্ভব হতো না। তাঁর এই সহযোগিতার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুবার উল্লেখ করেছেন। কমরেড জ্যোতি বসুকে তিনি পিতার মতো শ্রদ্ধা করতেন।
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এবং বিরোধী দলের গঠনমূলক আচরণের েেত্র এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন জ্যোতি বসু, বিশেষভাবে তিনি যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৭ থেকে ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত ২৭ বছর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮৫ সালের মার্চে 'সাপ্তাহিক বিচিত্রা'র জন্য আমি তাঁর একটি দীর্ঘ সাাতকার গ্রহণ করেছিলাম, যা ৫ এপ্রিল ১৯৮৫ প্রচ্ছদ কাহিনী হিসেবে ছাপা হয়েছিল। প্রায় ২৫ বছর আগে তাঁর সম্পর্কে লিখেছিলাম_ 'ভারতের বিরোধী দলের রাজনীতিতে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু একটি বিশিষ্ট নাম। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র অন্যতম প্রধান নেতা জ্যোতি বসু শুধু পশ্চিমবঙ্গে নন, সর্বভারতীয় পর্যায়েও বিরোধী রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করেন। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের কাছেও তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। গত সাত বছর পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক অত্যন্ত ঠান্ডা হওয়া সত্ত্বেও যে কোন জাতীয় সঙ্কটে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যেমন, প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীও জ্যোতি বসুর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন। অসম বা পাঞ্জাব সমস্যা মোকাবেলার েেত্র জ্যোতি বসুর সমর্থন যেমন কেন্দ্রকে শক্তিশালী করেছে, তেমনি কাশ্মীর ও অন্ধ্রের বিরোধীদলীয় সরকারের প্রতি কেন্দ্রের বৈরী আচরণের েেত্র তাঁর বিরোধিতা কেন্দ্রকে দুর্বল করেছে। আততায়ীর হাতে শ্রীমতী গান্ধী নিহত হওয়ার পর ভারতের রাজনীতিতে যে সঙ্কট দেখা দেয় নতুন প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট দতার সঙ্গে তার মোকাবেলা করেছেন; তবে এই সময় জ্যোতি বসুর মতো বিরোধীদলীয় নেতার সমর্থন তাঁর জন্য জরুরী ছিল। শ্রীমতী গান্ধীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই নতুন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সকল মুখ্যমন্ত্রীকে নিজ নিজ রাজ্যে দ্রুত ফিরে যেতে বলেন আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। একমাত্র ব্যতিক্রম জ্যাতি বসু, যাঁকে প্রধানমন্ত্রী দিল্লীতে থেকে যেতে বলেন, কারণ পাঞ্জাবের পর দিল্লীর পরিস্থিতিই তখন সবচেয়ে বেশি খারাপ ছিল।
'ভারতের অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও পশ্চিমবঙ্গের এই মার্কসবাদী মুখ্যমন্ত্রীকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। '৭৭-এর লোকসভা নিবাচন থেকে শুরু করে সম্প্রতি অন্ধ্রে রামারাও এবং কাশ্মীরের ফারুখ আবদুল্লাহর বিরোধীদলীয় সরকারকে পদচু্যত করার েেত্র কংগ্রেস যে পদপে নিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে বিরোধী দলসমূহের আন্দোলনের েেত্র জ্যোতি বসু ছিলেন অন্যতম নির্ধারক শক্তি। গত সাত বছর ধরে ভারতের রাজ্য সরকারগুলোর ভেতর সবচেয়ে স্থিতিশীল সরকারের প্রধান হিসেবে জ্যোতি বসুর প্রতি রাজনৈতিক মহলে সাধারণভাবে যথেষ্ট শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে, এমনকি পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ কংগ্রেসীরা বামফ্রন্ট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বিস্তর সমালোচনা করলেও জ্যোতি বসুর প্রতি সমীহ ভাব পোষণ করেন। আনন্দবাজার বা স্টেটসম্যানের মতো বামফ্রন্টবিরোধী জাঁদরেল পত্রিকা বিভিন্ন ইসু্যতে জ্যোতি বসুর প্রশাসনিক দতার প্রশংসা করেছে।'
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সিপিআই (এম) অনেক বার স্বৈরাচারী বলেছে। বহু বিষয়ে ইন্দিরা গান্ধীর সরকারকে তুলোধুনো করেছেন জ্যোতি বসু। কিন্তু এতে তাঁর প্রতি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শ্রদ্ধাবোধ কখনও মলিন হয়নি। শ্রীমতী গান্ধীর একজন ঘনিষ্ঠজনের মুখে শুনেছি, যতবার জ্যোতি বাবু তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দিল্লীর বাসভবনে গেছেন ততবার বিদায় জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি পর্যন্ত এসেছেন, নিজ হাতে গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছেন।
সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত তাঁর সাাতকারে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদর্ী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একটি চমকপ্রদ ঘটনার উল্লেখ করেছেন। ১৯৪৬ সালে তিনি যখন বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, বিােভ করতে গিয়ে পুলিশের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জ্যোতি বাবু বলেছেন_ "আমার সঙ্গে গন্ডগোল হয় পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দোহার, তিনি পরে আপনাদের পাকিস্তান যখন ছিল তার মন্ত্রীও হয়েছিলেন। উনি আমাকে এ্যাসেম্বলিতে ঢোকার সময় এ্যারেস্ট করেছিলেন, লাঠিচার্জ করতে বলেছিলেন পুলিশ সার্জেন্টকে। সে অনেক ঘটনা। সার্জেন্ট অবশ্য আমাকে মারেনি। সোহরাওয়াদর্ী তখন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তখন তো মুখ্যমন্ত্রী বলত না, প্রধানমন্ত্রী বলত। নূরুল আমিন তখন এ্যাসেম্বলির স্পীকার। উনি ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে বললেন, আমি এ্যাসেম্বলি বন্ধ করে দিলাম। আমার এমএলএ-কে মেরেছে, যতণ না এর ফায়সালা হচ্ছে ততণ আমি এ্যাসেম্বলি মুলতবি রাখছি। চীফ মিনিস্টারকে বললেন, আপনি গিয়ে দেখুন কি হয়েছে। উনি বেরিয়ে আসেন, তা সোহরাওয়াদর্ীর খুব সাহস ছিল, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের সঙ্গে খুব খাতিরও ছিল। সোহরাওয়াদর্ী বেরিয়ে এসে দেখেন আমি দাঁড়িয়ে আছি, আমার জামাটামা সব ছেঁড়া। বললেন, 'কি হয়েছে? কাম এ্যালং, কাম এ্যালং!' আমি বললাম, 'আই কান্ট গো, আই হ্যাভ বিন এ্যারেস্টেড।' 'হু হ্যাজ এ্যারেস্টেড ইউ?' আমি বললাম, 'দিস জেন্টেলম্যান। ইয়োর পুলিশ অফিসার।' 'নো, নো, নোবডি হ্যাজ এ্যারেস্টেড ইউ।'_ বলে আমাকে নিয়ে চলে গেলেন। তারপরে হলো কি_ তখন মুজিবুর সাহেবও (শেখ মুজিবুর রহমান) সেখানে ছিলেন, ছাত্রদের একটা ব্যাপার নিয়ে, মুসলিম লীগের একটা ছাত্র সংস্থা, তিনি তার লিডার ছিলেন। ওরা সেদিন ডেমনেস্ট্রেট করতে গেছেন সেখানে। ওদের ওপরও সেদিন কোথায় লাঠিচার্জ হয়েছে। উনি আমার অবস্থা দেখে বললেন, 'কি হয়েছে আপনার?' আমি বললাম, এইসব হয়েছে। ওরা বললেন, 'এই লোকটাকে না তাড়ালে আপনি কোন সমঝোতা করবেন না।' এই নিয়ে ওদেরও চঁ্যাচামেচি। ওরাও খানিকটা সাহায্য করল আমাকে। তারপর সোহরাওয়াদর্ীকে বললাম, 'এর কী হবে?' তিনি বললেন, 'ইউ আর নট এ্যারেস্টেড।' আমি বললাম, 'না, ওর মা চাইতে হবে।' 'অলরাইট, মা চাইতে আমিও বলছি।' তারপর_ পারেন না বেচারা কীভাবে কী করবেন। ফোন করলেন চীফ সেক্রেটারি আর পুলিশ কমিশনারকে। দু'জনই সাহেব। দু'জনকেই ডেকে পাঠালেন। আমি শুনছি, সাহেবরা বলছে, এটা কখনওই হতে পারে না। একজন ডেপুটি কমিশনার কখনও মা চাইতে পারে না। আমরা সেটা আবার শুনে ফেলেছি। আমি সোহরাওয়াদর্ী সাহেবকে বললাম, 'আই থট ইউ আর দি চীফ মিনিস্টার অব বেঙ্গল, নট দিজ জেন্টেলমেন।' তিনি আমাকে থামিয়ে দোহাকে বাধ্য করলেন মা চাইতে। বললেন, 'এটা হতে পারে না, গণপ্রতিনিধিদের ব্যাপার, ইউ এ্যাপলজাইস টু হিম।' শামসুদ্দোহা আমাকে বললেন, 'আই হ্যাভ নট কমিটেড এনি ক্রাইম। বাট আন্ডার দি অর্ডার অব মাই চীফ মিনিস্টার, এ্যান্ড আল্লাহ এ্যাবাভ, আই এ্যাপলজাইস টু ইউ স্যার।"
উপমহাদেশের রাজনীতিতে আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার, মেহনতী মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা, সৌজন্যবোধ, কর্তব্যনিষ্ঠা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত আচরণ কমরেড জ্যোতি বসুকে মর্যাদার অনন্য আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তাঁর যাপিত জীবন যদি আমাদের রাজনীতিবিদদের প্রভাবিত করতে পারে তখনই কেবল বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের রাজনীতি কলুষমুক্ত হতে পারে। আমাদের সৌভাগ্য, বাংলাদেশ তাঁর মতো এক মহান বন্ধু ও অভিভাবককে সঙ্কট মুহূর্তে সব সময়ে পাশে পেয়েছে।
জয়তু কমরেড জ্যোতি বসু।
২১ জানুয়ারি ২০১০

No comments

Powered by Blogger.