৪ হাজার ১শ' কোটি টাকা আদায় করেছে অডিট বিভাগ- অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই অর্থ হাতিয়ে নেয় by মিজান চৌধুরী

অনিয়মের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া ৪ হাজার ১শ' কোটি টাকা আদায় করছে অডিট বিভাগ। গত দুই বছরে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ টাকা আদায় করা হয়। শুধু ২০০৯ সালের নয় মাসে আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা।
ওই টাকার মধ্যে ৩০৮ কোটি টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া হয়েছে। সংশিস্নষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র মতে, সরকারের বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কাজ করে। ওই কাজের ওপর বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয় তদনত্ম করে। কর্মকা-ে বিভিন্ন অনিয়ম দেখে আপত্তি জানানো হয়। সরকারের কমপ ে১০টি বিভাগ আপত্তির পরে খরচকৃত টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। অডিট বিভাগ থেকে জানানো হয়, আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ ২০০৮ সালের তুলনায় ২০০৯ সালে বেশি হয়েছে। সরকারী কাজের মান নষ্ট করে, অতিরিক্ত বিল তৈরি করে, ঠিকাদারদের সুবিধা প্রদান করে, কেনাকাটায় পিপিআর অনুসরণ না করাসহ বিভিন্ন অনিময়ের মাধ্যমে এই টাকা খরচ দেখানো হয়। পরে অডিট বিভাগ এসব অনিময় চিহ্নিত করে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সংশিস্নষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে এই টাকা আদায় করে সরকারে কোষাগারে জমা দেয়।
এদিকে সরকারের অডিট বিভাগকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অডিট বিভাগকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। বিগত ৩৮ বছর পর অডিট এ্যাক্ট প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে প্রসত্মাব দিয়েছে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয়।
সূত্র মতে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে আত্নসাতকৃত টাকার মধ্যে আদায় করা হয় এক হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এরমধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগ, খুলনা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন বিভাগ খাত ওয়ার্কস অডিট টাকা ফেরত দিয়েছে ৬৫০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক অডিট খাতে ফেরত এসেছে ৩৯০ কোটি ৪ লাখ টাকা, বিদেশে অবস্থানরত ৫৮টি বাণিজ্যিক মিশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বিদেশে অবস্থিত সরকারী বিভিন্ন ব্যাংকের শাখা থেকে অডিট আপত্তির মাধ্যমে টাকা আদায় করা হয় ২ কোটি টাকা, রেলওয়ে বিভাগ থেকে আদায় করা হয় এক কোটি ৩৫ লাখ টাকা, বিদেশী সাহায্যের মাধ্যমে পরিচালিত প্রকল্প থেকে আত্মসাতকৃত টাকার পরিমাণ হচ্ছে ৫১ কোটি ৬১ লাখ টাকা, সামরিক খাত থেকে আদায় করা হয় ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা, সিভিল খাত থেকে আদায় করা হয় এক কোটি ৮৪ লাখ টাকা, পোস্ট অফিস, টেলিফোন খাত থেকে ফেরত আনা হয় এক কোটি এক লাখ টাকা ও রাজস্ব খাত থেকে আদায় করা হয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
জানা গেছে, সরকারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বরাদ্দকৃত বাজেটের টাকা ঠিক মতো খরচ হচ্ছে কিনা তা পর্যবেণ করে সরকারের অডিট বিভাগ। বিভিন্ন অনিময়ের কারণে অডিট আপত্তি জানানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অডিট কার্যালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, অডিট আপত্তি সঠিক থাকার কারণে টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে। ফেরতকৃত টাকার বেশির ভাগ আত্মসাত করা টাকা। তবে কিছু পরিমাণ টাকা আছে ব্যাংকিং খাত থেকে আদায় করা হয়েছে। যেমন কুঋণ, অনাদায়ী ঋণ। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য দিতে বিলম্ব করে। এ কারণে আমাদের কাজেও ব্যাঘাত ঘটে। টাকা ফেরত দেয়া প্রতিষ্ঠানের দোষী ব্যক্তিদের শাসত্মির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শাসত্মি নিশ্চিত করবে সংশিস্নষ্ট বিভাগ। অডিট বিভাগের কাজের মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের শাসত্মি নিশ্চিত করার কোন বিধান নেই।
এদিকে অডিট বিভাগকে আরও যুগোপযোগী করা হচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর আলোকে অডিট বিভাগকে সাজানো হচ্ছে। এ জন্য অডিট এ্যাক্ট প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে। অডিট কার্যালয় থেকে একটি প্রসত্মাব পাঠানো হয়। ওই প্রসত্মাব পর্যালোচনার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সূত্র মতে স্বাধীনতার পর অডিট বিভাগের জন্য পৃথক কোন এ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়নি। সংবিধানের আলোকে কাজ চলছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশে পৃথক অডিট এ্যাক্টের মাধ্যমে অডিট কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নতুন প্রসত্মাবে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল কার্যালয়ের অধীনে লোকবল বাড়ানোর কথা বলা হয়। বর্তমান সেখানে ৩ হাজার পোস্ট থাকলেও কাজ করছে দেড় হাজার লোক। অর্ধেক জনবল নেই। এছাড়া বাণিজ্যিক অডিটিং উইংয়ে এক হাজার ৫০ জনের পদের স্থানে কাজ করছে ৪২০ জন। ওই প্রসত্মাবে বাজেট বৃদ্ধি ও বিশেষ অডিটের জন্য বাইরে থেকে উচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়ার বিধানের কথা বলা হয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল আহমেদ আতাউল হাকিম জানান, এখন থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে অডিট রিপোর্ট পেশ করার পর ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানো হবে। এতে দেশের উন্নতি ও সরকারের স্বচ্ছতা থাকবে। কাজের অনেক সীমাবদ্ধা আছে। এসব সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারলে দেশে দুর্নীতির হার ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে। তিনি আরও বলেন, অডিট বিভাগ অনেক বড় বড় কাজ করছে। এটা সবার জানা দরকার। সংবাদ মাধ্যমের জন্য একটি মিডিয়া সেল খোলার সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.