ক্যান্সারও প্রতিরোধ করা যায় by অধ্যাপক আহমেদ সাইদ

ক্যান্সার নেই এ্যানসার'_ এ কথাটির একসময় খুব চল ছিল। ইদানীং কিন্তু কোন মহল থেকেই জোরে শোরে আর এটা বলা হচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে সব েেত্র না হলেও অনেক েেত্রই উত্তর কিন্তু মিলেছে। প্রতিরোধ ও প্রতিকার সম্ভব হচ্ছে।
ক্যান্সার কেন হচ্ছে এটা কিন্তু এখনও ভালভাবে জানা যায়নি। নিরনত্মর গবেষণা চলছে কিন্তু এখনও বিষয়টি পরিষ্কার নয়। সুনির্দিষ্টভাবে কারণ জানা গেলে একদিন হয়ত ক্যান্সারের পুরো এ্যানসারই আমাদের আয়ত্তে চলে আসবে। সাধারণভাবে আমরা জানি যে আমাদের শরীর অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি। একটা দালান তৈরিতে যেমন অসংখ্য ইট প্রয়োজন তেমনি শরীরটাও ল কোটি কোষের সমম্বয়ে তৈরি। পার্থক্য এই যে ইট ও ইটের দালান জড়ো, শরীর ও এর কোষগুলো জীবিত। জীবন যার আছে তার মৃতু্যও আছে। তাই প্রতিদিন আমাদের শরীরে অনেক কোষ মরে যায় আর তাদের জায়গা নেয় নতুন কোষ। নতুন কোষগুলো কিন্তু তৈরি হয় একটি কোষ ভেঙ্গে দুটি এই প্রক্রিয়ায়। এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া শরীরে প্রতিদিন প্রতিণ একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মে নিয়ন্ত্রিতভাবে ঘটে যাচ্ছে। যার ফলে যেখানে যখন যেমন ধরনের কোষ প্রয়োজন তাই তৈরি হচ্ছে। প্রতিদিন ল কোটি কোষ বিভাজনের সময় নিয়ম মেনে শুধু সুস্থ স্বাভাবিক কোষ তৈরি হচ্ছে, এমনটা বলা যাবে না। কোটি কোটি বার একই কাজ করতে গেলে ভুলের সম্ভাবনা সামান্য হলেও সব সময়ই থাকে এবং কোষ বিভাজনের সময়ও সেটা ঘটতে পারে। এভাবেই আমাদের শরীরে কখনও কখনও অস্বাভাবিক অপ্রয়োজনীয় কোষের সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু আমাদের শরীরে রয়েছে অস্বাভাবিক কোষ শনাক্ত করে তাকে ধ্বংস করে দেবার মতা, যা স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ মতারই অংশ। কোন কারণে কোন অস্বাভাবিক কোষ যদি শনাক্ত না হয় বা নষ্ট না হয়ে বেঁচে যায় তাহলে তা এক নতুন ধারার কোষের জন্ম দেয় যা স্বাভাবিক নিয়ম না মেনে বিভাজন প্রক্রিয়ায় শুধু বাড়তেই থাকে। এই কোষগুলোর বেঁচে থাকা বা মৃতু্য অথবা বিভাজন সব কিছুই অনিয়ন্ত্রিত। স্বাভাবিক নিয়ম এখানে কাজ করে না আর এভাবেই অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধি ক্যান্সারের জন্ম দেয়।
এই প্রক্রিয়ার ফলে যে কোন সময় আমরা যে কেউ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকছি। তার পরও আমরা অনেকেই সুস্থ থাকছি কিন্তু কেউ কেউ থাকছি না। সঠিক কারণ জানা না থাকলেও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এমন কিছু অবস্থার কথা আমরা জানি। যেমন আমাদের দৈনন্দিন চলাফেরা আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার, বিয়ে ও বাচ্চা নেবার সঠিক বয়স, বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো, শিল্প কলকারখানা এবং পরিবেশগত কিছু কারণ অন্যান্য কিছু রোগ, ভাইরাস, জীবাণু এগুলোর সঙ্গে অনেক ক্যান্সার খুবই সম্পর্ক রয়েছে। আবার কিছু ক্যান্সার আছে যা বংশগত, জন্মগত কারণে হয়ে থাকে। বাকি ক্যান্সারগুলো কেন কিভাবে হচ্ছে তার হদিস করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যেসব ঝুঁকির কথা আমরা বললাম সেগুলো থেকে দূরে থাকতে পারলে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা সম্ভব হবে। অথাৎ এক-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ক্যান্সার সরাসরি প্রতিরোধ সম্ভব না হলেও তার বিরম্নদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে প্রতিকার করা সম্ভব। এ েেত্র যা দরকার তা হলো নিজের শরীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা। নিজেকে নিজে যদি আমরা নিয়মিত, এই ধরম্নন মাসে একবার পরীা করি তা হলে যে কোন অস্বাভাবিকতা ছোট অবস্থায়ই চোখে বা হাতে ধরা পড়বে। শরীরের বাইরের অংশগুলো, যেমন ত্বক, হাত পা, সত্মন, মুখের ভেতর এগুলো নিজেরাই খেয়াল রাখা যায়। অস্বাভাবিকতা বলতে আকার আকৃতি বা রঙের পরিবর্তন, কোন ত বা ঘা, কোন পিন্ড বা চাকা ইত্যাদি বোঝায়। এ ছাড়াও যে কোন ধরনের শারীরিক কষ্ট বা লণ যদি দু সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় তা হলে সেটা পরীা করে দেখা উচিত। এভাবে সচেতন থাকলে সাধারণ সব লণের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ক্যান্সারও শুরম্নতেই ধরে ফেলা সম্ভব। আর শুরম্নতেই ধরতে পারলে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সেস্নাগান "শুরম্নতেই পড়লে ধরা, ক্যান্সার রোগ যার যে সারা" কথাটি সত্য বলে প্রমাণ করার সুযোগ থাকবে। অর্থাৎ রোগের শুরম্নতে সঠিক চিকিংসা করে ভাল হয়ে যাবার সুযোগটা নেয়া সম্ভব হবে। এসব েেত্র যা প্রয়োজন তা হলো ক্যান্সার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি। এটা কি ধরনের রোগ, কি কি কারণে ঝুঁকি বাড়ে, প্রতিরোধের জন্য কি কি করণীয়, প্রাথমিক পর্যায় বা শুরম্নতেই রোগ নির্ণয়ে আমাদের নিজেদের কি ভূমিকা, সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে চিকিৎসক বা চিকিৎসা কর্মীদের কি ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়কে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে নিয়ে আসা এবং সেই ল্যে সকলকে যার যার অবস্থানে থেকে কাজ করে যাওয়া, আর এভাবেই ক্যান্সারের বিরম্নদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। দেরি হয়ে গেলে ক্যান্সার চিকিৎসা জটিল, ব্যয়বহুল এবং ভাল কার্যকরী নয়। আমাদের মতো গরিব দেশের জন্য তাই ল্য হবে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ৪ ফেব্রম্নয়ারি প্রতিবছর "বিশ্ব ক্যান্সার দিবস" পালিত হয়। ক্যান্সারের বিরম্নদ্ধে লড়ে যাওয়ার জন্য নিবেদিত সংগঠনগুলোর আনত্মর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেইনস্ট ক্যান্সার (ইউ. আই. সি. সি)-এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি। এই সংগঠনের ডাকে ৪ ফেব্রম্নয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপল েআসুন আমরা ক্যান্সারের বিরম্নদ্ধে লড়ার সর্বাত্নক প্রচেষ্টা নেবার অঙ্গীকার করি এবং বিশ্বাস করতে শুরম্ন করি যে "ক্যান্সারও প্রতিরোধযোগ্য।"
মহাসচিব, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও
বিভাগীয় প্রধান, সার্জারি বিভাগ
হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
ফৎ. ংধুববফ৫৫@ুধযড়ড়.পড়স

No comments

Powered by Blogger.